এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ শুরুর সম্ভাব্য সময় ১৩ এপ্রিল।
এইচএসসির ফরম পূরণ শুরুর সম্ভাব্য সময় ৮ জুন।
চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা আগামী ১৯ জুন এবং এইচএসসি পরীক্ষা ২২ আগস্ট শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এবার নির্বাচনী পরীক্ষা (টেস্ট) হবে না। তার বিকল্প হিসেবে ‘প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা’ নেওয়া হবে। এসএসসিতে এ বছর তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে না শিক্ষার্থীদের। আর এইচএসসিতে বাদ যাচ্ছে একটি বিষয়।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড গত সোমবার ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ দিয়ে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষাসংক্রান্ত এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
এসএসসিতে বিভাগভেদে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উচ্চতর গণিত, জীববিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগ, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, ভূগোল ও পরিবেশ, পৌরনীতি ও নাগরিকতা, অর্থনীতি, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান এবং কৃষি শিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা হবে।
করোনার কারণে ঠিকমতো শ্রেণি কার্যক্রম না হওয়ায় নির্বাচনী পরীক্ষা দিতে হবে না এসএসসি ও এইচএসসির শিক্ষার্থীদের। সাধারণত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নেওয়া নির্বাচনী পরীক্ষায় সব বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হতো শিক্ষার্থীদের।
এসএসসি শুরু ১৯ জুন, এইচএসসি ২২ আগস্ট। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সশরীর ক্লাস শুরু আজ।
এদিকে প্রায় দেড় মাস বন্ধের পর আজ বুধবার দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও সশরীর ক্লাস শুরু হচ্ছে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাস হবে প্রতিদিন (সপ্তাহে ছয় দিন)। তবে প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা আপাতত বন্ধই থাকবে। আরও দুই সপ্তাহ করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনা হবে। সব বিদ্যালয় দুই পালায় পরিচালিত হবে। তবে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে যে সমাবেশ হতো, তা আপাতত হচ্ছে না। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া অভিভাবকদের বিদ্যালয়ে আসা নিরুৎসাহিত করতে হবে। এ ছাড়া করোনার টিকা দেওয়া ছাড়া কোনো শিক্ষক–কর্মচারী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারবেন না।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গত ২২ ফেব্রুয়ারি খুললেও প্রাথমিকের ছুটি ১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।
সাধারণত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি এবং এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা হয়। করোনার সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলো হয়ে গেছে। ঠিক সময়ে পরীক্ষা হচ্ছে না বা কখনো কখনো বাতিল করতে হচ্ছে। এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে হচ্ছে।
শিক্ষা বোর্ডের ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে’ বলা হয়েছে, চলতি ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ শুরুর সম্ভাব্য সময় আগামী ১৩ এপ্রিল। নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) করা শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে অনলাইনে ফরম পূরণ করবে। প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ আগামী ১৯ মে।
অন্যদিকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ শুরুর সম্ভাব্য সময় আগামী ৮ জুন। আর প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা হতে পারে ১৪ জুলাই।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্বে) অধ্যাপক তপন কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনী পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে এবার প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বছর বাংলা, ইংরেজি, গণিতসহ অধিকাংশ বিষয়ে পরীক্ষা হবে। গত বছরের এসএসসি ও এইচএসসিতে শুধু গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছিল।
এবার এসএসসিতে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে না। এর সঙ্গে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে না। আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে না। একজন শিক্ষার্থীকে যে তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা দিতে হবে না সেসব বিষয়ের মূল্যায়ন হবে ‘ম্যাপিং’ (জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে) করে।
এসএসসিতে বিভাগভেদে যেসব বিষয়ে পরীক্ষা হবে সেগুলো হলো—বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উচ্চতর গণিত, জীববিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগ, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, ভূগোল ও পরিবেশ, পৌরনীতি ও নাগরিকতা, অর্থনীতি, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান এবং কৃষি শিক্ষা।
২০২২ সালের পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা নেই, সেসব বিষয়ে ৫৫ নম্বরের (সৃজনশীল ৪০, এমসিকিউ ১৫) পরীক্ষা হবে। আর যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা আছে, সেসব বিষয়ে ৪৫ নম্বরের (সৃজনশীল ৩০, এমসিকিউ ১৫) পরীক্ষা হবে। তবে ইংরেজি প্রথম পত্রে ৫০ এবং দ্বিতীয়পত্রেও ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার সময় ও নম্বর বিভাজনের নির্দেশিকাও দেওয়া হয়েছে শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে।
পরীক্ষা হবে দুই ঘণ্টায়। এর মধ্যে এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন) অংশের সময় ২০ মিনিট এবং রচনামূলক বা সৃজনশীল অংশের সময় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। স্বাভাবিক সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হতো ৩ ঘণ্টায়।
অন্যদিকে এইচএসসিতে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বাদে বাংলা, ইংরেজি, গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক তিনটি বিষয় এবং একটি ঐচ্ছিক বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ের মূল্যায়ন হবে ‘ম্যাপিং’ করে।
করোনার আগে এসএসসিতে বিভিন্ন বিষয়ে ১২টি পত্রে ও এইচএসসিতে বিভিন্ন বিষয়ে ১৩টি পত্রে পরীক্ষা হতো।
এইচএসসিতে যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা আছে, সেসব বিষয়ে ৪৫ নম্বরে এবং যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা নেই, সেসব বিষয়ে ৫৫ নম্বরের পরীক্ষা হবে। তবে বাংলা প্রথম পত্রে ৫০ নম্বর, দ্বিতীয় পত্রে ৫০, ইংরেজি প্রথম পত্রে ৫০ ও দ্বিতীয় পত্রে ৫০ নম্বরের ভিত্তিতে পরীক্ষা হবে। এইচএসসিতেও পরীক্ষা হবে দুই ঘণ্টায়।