বিভাগ পরিবর্তনে আলাদা পরীক্ষা না নেওয়ার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এক পরীক্ষাতেই অন্য বিভাগেও ভর্তির সুযোগ রাখা হচ্ছে।
১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তিতে বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আগের মতো আলাদা পরীক্ষা রাখতে চাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একজন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে একটি পরীক্ষা দিয়েই নিজ বিভাগের বিষয়ের পাশাপাশি অন্য বিভাগভুক্ত বিষয়েও ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। যেমন বিজ্ঞানের একজন শিক্ষার্থী চাইলে একটি পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগভুক্ত বিষয়ের পাশাপাশি বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের বিষয়েও পড়তে পারবেন।
কিন্তু ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ, বিশেষ করে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাঁরা বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আগের মতো (ঘ ইউনিটের মতো) আলাদা পরীক্ষা চান। কারণ, বিভাগ পরিবর্তনের পরীক্ষার জন্য তাঁরা এক বছরের বেশি সময় ধরে বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এখন হঠাৎ করে এই সুযোগ বন্ধ করা হলে তাঁরা বিপাকে পড়বেন। বিভাগ পরিবর্তনের পরীক্ষায় মূলত বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করলেও এখনো বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান। আবার বিভাগ পরিবর্তনের পরীক্ষা দিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিকে পড়া নিজ বিভাগ ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য বিষয়ে পড়ার সুযোগ পান। এই সুযোগ বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য—সবার জন্য থাকলেও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য তা বেশি। বিভাগ পরিবর্তনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলাদা করে আসনও বরাদ্দ রাখা হয়।
ইউজিসি আশা করছে, শিক্ষার্থীদের আগে যেসব সুযোগ-সুবিধা ছিল, সেগুলো এবারও বহাল থাকুক।অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর, সদস্য, ইউজিসি
রংপুর থেকে মারুফ আল হাসান নামের এক ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী এক ই-মেইল বার্তায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনটি ইউনিটে ভর্তি নেওয়ার ফলে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে নিজ ইউনিটে (বিভাগ) ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। এতে যেসব পরীক্ষার্থী দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে বিভাগ পরিবর্তনের জন্য এক বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন, তাঁরা আর কোথাও পরীক্ষা দিতে পারবেন না। ফলে মেধার সঠিক মূল্যায়ন হবে না।’
সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পর ১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও উপাচার্যদের এক সভায় এবার আরও ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা হবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হলো, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মোট তিনটি ভর্তি পরীক্ষা হবে। একটি পরীক্ষা হবে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য, আরেকটি মানবিকের জন্য এবং অপরটি ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের জন্য। এর মধ্যেই বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একটি স্কোর দেওয়া হবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ চাহিদা অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্কোর ও আসনের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে।
এরপর থেকেই দ্বিতীয়বার পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ দাবি করে আসছেন, তাঁরা বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আলাদা পরীক্ষাই চান। পারভেজ মাহমুদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, এই সুযোগ না থাকলে তাঁর মতো হাজারো ছাত্রছাত্রীর স্বপ্ন নষ্ট হবে। এ জন্য তাঁরা চান এবারও এই সুযোগ থাকুক।
তবে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষাবিষয়ক কার্যক্রমের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির বাইরে কোনো বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে না। তিন বিভাগের জন্য তিনটি পরীক্ষা হবে। এর মধ্যেই বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে।
কবে এসব ভর্তি পরীক্ষা হবে, জানতে চাইলে অধ্যাপক মীজানুর রহমান বলেন, এখনো তারিখ ঠিক হয়নি। করোনা পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হলে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে।
দেশে ৪৬টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় না। বাকি ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা হয়। এগুলোতে আসনসংখ্যা ৬০ হাজারের কিছু বেশি। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষা ছাড়াই জেএসসি ও এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এ মাসেই মূল্যায়নের ফল ঘোষণা করার কথা। এর মাধ্যমে ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করবেন। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করবেন।
শিক্ষার্থীদের বিভাগ পরিবর্তনের পৃথক পরীক্ষার দাবির বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমত, ইউজিসির চেষ্টা ছিল ভর্তি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে দৌড়াদৌড়ির দুর্ভোগ বন্ধ হোক। এ জন্যই গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত। পরীক্ষা কীভাবে হবে এবং কী কী শর্ত, সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঠিক করছে। ১৯ ডিসেম্বর এ নিয়ে উপাচার্যদের সভা হওয়ার কথা আছে। ইউজিসি আশা করছে, শিক্ষার্থীদের আগে যেসব সুযোগ-সুবিধা ছিল, সেগুলো বহাল থাকুক।