আবাসিক হল বন্ধ রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার প্রতিবাদ জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা। অবস্থানে থাকা নেতা-কর্মীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই কর্মসূচি চলবে।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরীক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হল খুলে দেওয়াসহ চার দফা দাবিতে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা। পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, নেতা শাকিল উজ্জামান, তারেক রহমানসহ ছয়জন এই কর্মসূচিতে আছেন।
ছাত্র অধিকার পরিষদের অন্য তিন দাবি হলো—
পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে, প্রয়োজনে মেকআপ ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে; ডিভাইস সমস্যায় থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিশ্রুত ডিভাইসের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সব শিক্ষার্থীকে ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনার জন্য ন্যূনতম মাসিক খরচ দিতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরীক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের পরামর্শ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে করোনা ইউনিট স্থাপন এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। বহিরাগত প্রবেশ সীমিত করতে হবে। হলে প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর তল্লাশি ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। খাবার বাক্সে করে কক্ষে নিয়ে যেতে হবে। প্রতিটি অনুষদে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে ভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আমাদের দাবির বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। আপাতত আমরা এই কয়েকজনই কর্মসূচিতে আছি।’
করোনা পরিস্থিতির কারণে গত মার্চ থেকে বন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে চলতি বছরে স্নাতক শেষ হতো ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের। স্নাতকের শেষ প্রান্তে এসে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হওয়া এসব শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করে ২৬ ডিসেম্বর থেকে তাঁদের ও মাস্টার্সের আটকে থাকা পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় গত বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের অনেকে আপত্তি জানিয়েছেন। বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বলছেন, আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক নয়। তাঁদের দাবি, পরীক্ষা নিতে হলে হলগুলো সীমিত পরিসরে হলেও খুলে দিতে হবে কিংবা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করতে হবে।
তবে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, এই মুহূর্তে পরীক্ষাগুলো নেওয়া খুব জরুরি। ফলে, তাঁরা এর কোনো বিকল্প ভাবছেন না। উপাচার্য বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষাগুলো নেওয়া খুব জরুরি। করোনা পরিস্থিতির কারণে আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গার বিষয়টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলো সমন্বয় করবে। এই মুহূর্তে আমাদের হাতে আর কোনো অপশন নেই।’