ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) বলেছে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা একটি সনদনির্ভর পরীক্ষা। এই ধরনের পরীক্ষা শিশুদের ওপর অত্যন্ত মানসিক চাপ তৈরি করে। তাই শিশুদের মানসিক চাপ নিরসন এবং তাদের সুষ্ঠু বিকাশ ও আনন্দের মধ্যে দিয়ে শিক্ষালাভের জন্য অবিলম্বে পিইসি পরীক্ষা বাতিল করতে হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রণয়ন করা ‘প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড আইন, ২০২১’–এর খসড়া পর্যালোচনা করে আইইআর এ রকম আরও কিছু প্রস্তাব করেছে। কয়েক দিন আগে আইইআরের পরিচালক অধ্যাপক মো. আবদুল হালিমের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তারা একটি কর্মশালা আয়োজন করে শিক্ষকদের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রস্তুত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে যাচ্ছে।
সরকারের প্রণয়ন করা প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেটের মতো কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি। রূপরেখায় দশম শ্রেণিতে গিয়ে পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পিইসি পরীক্ষা স্থায়ীভাবে নেওয়ার জন্য মাধ্যমিকের মতো ‘প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড’ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। বোর্ড গঠন করতে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড আইনের খসড়া করে মতামত আহ্বান করেছেন। এর পর থেকেই সংশ্লিষ্ট অনেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে। কিছুদিন আগে দেশের ৩৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড আইন করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটিকে ‘আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’ উল্লেখ করে তা থেকে সরে আসার দাবি জানিয়েছেন।
এখন প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইইআরও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানাল। আইইআরের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপটও তুলে ধরে মূল্যায়ন নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
পিইসি পরীক্ষা বাতিলের প্রস্তাব ছাড়াও আইইআর বলেছে, প্রাথমিক শিক্ষার মূল্যায়ন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য যদি কোনো প্রতিষ্ঠান করতে হয়, সেটি হতে হবে প্রাগ্রসর ও ভবিষ্যৎমুখী। রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়ন ও দ্রুত পরিবর্তনশীল সময়ের সঙ্গে সার্থক অভিযোজনের জন্য শিশুকে প্রস্তুত করে তুলবে এমনভাবে মূল্যায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তাই প্রতিষ্ঠানটির কাজ সনদনির্ভর পরীক্ষা গ্রহণ হবে না, বরং এটি এমন একটি সামগ্রিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করবে, যা শিশুকে স্বাধীন, নৈতিক ও জীবনব্যাপী শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এ জন্য মূল্যায়নের আধুনিক ধারণাসমূহ যেমন, শিখন হিসেবে মূল্যায়ন (অ্যাসেসমেন্ট ফরম লার্নিং), গাঠনিক মূল্যায়ন (ফরমেটিভ অ্যাসেসমেন্ট), যোগ্যতা অর্জনের জন্য মূল্যায়ন ইত্যাদিকে গুরুত্ব দিয়ে একটি সামগ্রিক রূপরেখা তৈরি করা এবং তা বাস্তবায়নে বিজ্ঞানসম্মত দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে এর কাজ।
আর একান্তই যদি জাতীয় পর্যায়ে কোনো মূল্যায়ন করতে হয়, তা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার মতো না হয়ে বর্তমানে প্রচলিত জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়নের (ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট) মতো হতে পারে। যার উদ্দেশ্য হবে শিখনের উন্নয়ন, শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতির পরিমার্জন এবং বিদ্যালয় ও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন।
আইইআর বলেছে, শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য একটি সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যেখানে শিক্ষার একটি সামগ্রিক আইনি কাঠামো থাকবে।
উল্লেখ, ২০০৯ সাল থেকে পিইসি পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে সরকার। মাদ্রাসার সমমানের শিক্ষার্থীদের জন্যও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু করা হয়। এখন প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী এসব পরীক্ষায় অংশ নেয়। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।