ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলে বাগানের মালি পদের একটি নিয়োগ থেকে কৌশলে অর্থ হাতানোর চেষ্টা করছে ছাত্রলীগ। নিয়োগবাণিজ্যের এই পরিকল্পনায় এক পক্ষে আছেন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শরিফ আহমেদ। অন্য পক্ষে আছেন আগামী কমিটিতে হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী নেতারা। নিয়োগ থেকে ‘ভাগ’ পেতে বেশ কিছুদিন ধরে প্রার্থী ও হল প্রশাসনের সঙ্গে দর-কষাকষি করছেন ছাত্রলীগের নেতারা।
শহীদুল্লাহ্ হলে একজন স্থায়ী বাগান মালি ছাড়াও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে একজন নিরাপত্তা প্রহরী, একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও খণ্ডকালীন একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে গত ২০ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন হলের প্রাধ্যক্ষ মুহাম্মদ জাবেদ হোসেন। ৯ মার্চ পর্যন্ত প্রার্থীদের আবেদনের সুযোগ ছিল। শিগগিরই এই নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।
আমার কাছে এ রকম কোনো তথ্য আসেনি। কেউ এ ধরনের অভিযোগও করেননি। অভিযোগ না পেলে তো আমরা কিছু বলতে পারবে নামুহাম্মদ জাবেদ হোসেন, প্রাধ্যক্ষ, শহীদুল্লাহ্ হল
নিয়োগ–বাণিজ্যের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত শহীদুল্লাহ্ হল শাখা ছাত্রলীগের তিনজন নেতার এ বিষয়ে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড প্রথম আলোর কাছে রয়েছে। তাঁদের কথোপকথন পর্যালোচনা করে জানা গেছে, হল প্রশাসন একজন অভ্যন্তরীণ প্রার্থীকে মালি পদে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দিতে চাইছে। হল শাখা ছাত্রলীগের এক শীর্ষ নেতা ইতিমধ্যে ওই প্রার্থীকে ডেকে নিয়ে হুমকি দিয়ে বলেছেন, তাঁদের টাকা না দিলে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সময় তাঁকে হলে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ওই প্রার্থী ওই নেতার কক্ষে গিয়েছেন—এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আগামী কমিটিতে হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী নেতারা ধারণা করেন যে ওই প্রার্থী ওই নেতাকে টাকা দিয়েছেন।
হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা কিছুদিন আগে মালি পদের ওই প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেন। ওই প্রার্থী তাঁদের বলেন, তিনি ছয় লাখ টাকার বেশি দিতে পারবেন না। অন্যদিকে নিয়োগ পেতে ১১ থেকে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে একাধিক প্রার্থী হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। নিয়োগ–বাণিজ্যের ভাগ পেতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা ইতিমধ্যে হলের একজন আবাসিক শিক্ষকের সঙ্গেও কথা বলেছেন। ওই শিক্ষক ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করতেন। ২৬ মার্চ তিনি বিদেশে চলে যাবেন। তিনি বিদেশে যাওয়ার আগেই নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করে দেওয়ার বিষয়ে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে কথোপকথনের রেকর্ডে উঠে এসেছে।
নিয়োগের ভাগবাঁটোয়ারার বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে সমঝোতা না হলে হলটিতে সংঘর্ষ বা মারামারি হতে পারে বলে আশঙ্কা সাধারণ শিক্ষার্থীদের। হলের এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, হল শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার হলের প্রধান ভবনে আসন না পাওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে শহীদুল্লাহ্ হলে ছাত্রলীগ মারামারিতে জড়ায়। এতে গভীর রাত পর্যন্ত হলে আতঙ্ক ছড়ায়। এতে দুই পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হন। নিয়োগের ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে সমঝোতা না হলে আবারও মারামারি হতে পারে।
শহীদুল্লাহ্ হল শাখা ছাত্রলীগের অন্তত চারজন শীর্ষ পদপ্রত্যাশী এই প্রতিবেদকের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কথোপকথনে নিয়োগ–বাণিজ্যের পরিকল্পনার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তাঁরা নাম প্রকাশে ইচ্ছুক নন। হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হলের নিয়োগ দেয় হল প্রশাসন। এখানে আমাদের জড়িত থাকার কোনো সুযোগ নেই। কেউ সে রকম কিছু করে থাকলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে।
শহীদুল্লাহ্ হলের প্রাধ্যক্ষ মুহাম্মদ জাবেদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে এ রকম কোনো তথ্য আসেনি। কেউ এ ধরনের অভিযোগও করেননি। অভিযোগ না পেলে তো আমরা কিছু বলতে পারবে না।’