ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) গঠনতন্ত্র নিয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী। ডাকসুর সভাপতি হিসেবে তারা উপাচার্যের নামমাত্র প্রধানের ভূমিকা পালনের প্রস্তাব দিয়েছে। সংগঠনটি মনে করছে, ডাকসুর কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে উপাচার্যের কোনো কার্যনির্বাহী ক্ষমতা থাকতে পারে না। সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ও কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা থাকবে কমিটির নির্বাচিত সদস্যদের হাতে।
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ডাকসু গঠনতন্ত্রের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। এরপর বিকেলে মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে এ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি নূজিয়া হাসিন।
শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুনর্গঠনে ডাকসু নির্বাচনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নূজিয়া হাসিন বলেন, গঠনতন্ত্রের ২(ডি) উপধারাতে ডাকসু রাষ্ট্রের অনুগত ‘সত্যিকার নাগরিক’ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করবে বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে। সংগঠনটি মনে করছে, এই ধরনের বিধান গণতন্ত্র পরিপন্থী।
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর যুক্তি, রাষ্ট্র নাগরিকের আনুগত্য আদায় করতে পারে একমাত্র সব নাগরিকের অধিকার নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক জ্ঞান, মুক্তচিন্তা চর্চা এবং প্রথাবিরোধী অবস্থানের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যাবে এবং এর মধ্য দিয়েই রাষ্ট্র উন্নততর সমাজ নির্মাণের দিকে এগোবে। মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতে ২(ডি) উপধারা বাতিল করে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চা ডাকসুর অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবে আইনভুক্ত করতে হবে।
গঠনতন্ত্রের ৩ নম্বর ধারাতে ডাকসুর সব কার্যক্রমের পাশাপাশি সিনেট ও সিন্ডিকেটে ডাকসুর কার্যকরী কমিটির অংশগ্রহণ এবং তাদের মূল্যায়নের বিষয়টিও আলাদাভাবে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন মনে করছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী।
ডাকসুর গঠনতন্ত্র নিয়ে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী সংস্কার প্রস্তাবে অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, ২০১৯ সালের সংশোধিত গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক প্রসঙ্গ (ধারা ৫-ই)। সংগঠনটির ভাষ্য, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বের মধ্যে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী উপাদান হিসেবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চর্চা ও প্রচার এবং শেখ মুজিবের দর্শন, চিন্তার চর্চা ও প্রচার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আওয়ামী স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে এই পদটি তৈরি করা হয়েছে। তবে ইতিহাসের অংশ হিসেবে এই পদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সংগঠনটি এ পদের নাম ‘মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম বিষয়ক সম্পাদক’ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে।
সংগঠনটি মনে করছে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম বিষয়ক সম্পাদক’ পদের কার্যক্রম হওয়া উচিত ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ থেকে শুরু করে সিপাহি, সাঁওতাল, তেভাগা, তানোরের কৃষক, নানকার, টঙ্ক, হাজং—প্রভৃতি বিদ্রোহ ও আন্দোলন; ’৫২-এর ভাষা, ‘৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন; ‘৬৯-এর অভ্যুত্থান, ‘৭১-এর মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম; ‘৮৩-এর শিক্ষা, ‘৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী, ‘৯৮-এর ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন; ২০০৬ সালের ফুলবাড়ী অভ্যুত্থান; ২০১৫ সালের ভ্যাট বিরোধী, ২০১৬ সালের সুন্দরবন, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক, ২০২২ সালের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বিরোধী, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি আন্দোলন এবং সর্বশেষ ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের আকাঙ্ক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া।