ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ মুবারক আলী কেস সেন্টারের গতকাল (০৩ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলো। মুবারক আলী ফাউন্ডেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের ব্যবসায় শিক্ষাক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জিত হয়েছে।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে প্রয়াত মুবারক আলীর অর্জন, কর্ম স্মরণ ও উদ্যাপন করা হয়। একজন দূরদর্শী ও সফল উদ্যোক্তা এবং জনদরদি ব্যক্তি হিসেবে দেশের ব্যবসা ও শিক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার মাধ্যমে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মুবারক আলী।
আইবিএ ক্যাম্পাসে ফিতা কাটার মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। এরপর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ‘দ্য গ্র্যান্ড বলরুমে’ এক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশের শিক্ষা ও ব্যবসায় খাতের স্বনামধন্য ব্যক্তিরা। আইবিএ মুবারক আলী কেস সেন্টার শিক্ষাক্রমের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ব্যবসায়িক কেস স্টাডি একীভূত করার মাধ্যমে দেশের ব্যবসায়িক শিক্ষায় ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে এবং বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী যেন দেশে ব্যবসায়িক শিক্ষাখাত বিস্তৃত হতে পারে, এ ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে।
শিক্ষা খাতের সমৃদ্ধিতে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন
এ উদ্যোগ গ্রহণের পেছনের কারণ তুলে ধরে মুবারক আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আমরীন বশির আলী ও তানভীর আলী বলেন, আইবিএ মুবারক আলী কেস সেন্টারটি শুধু একাডেমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই ভূমিকা রাখবে, এমন নয়; পাশাপাশি এ সেন্টার প্রাসঙ্গিক ও বাস্তবসম্মত শিক্ষার পরিসর বিস্তৃতিতে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসাক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক ব্যবসাক্ষেত্র সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জনে সহায়তার মাধ্যমে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে।
অংশীদারিমূলক এ উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরে আইবিএ’র পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মাদ এ মোমেন বলেন, ‘হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল ও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট বেঙ্গালুরুর মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অংশীদারি আমাদের শিক্ষাক্রম এবং শিক্ষাদান পদ্ধতি সমৃদ্ধ করতে এবং দেশে ব্যবসায় শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন নজির স্থাপনে অনন্য ভূমিকা রাখবে।’
বৈশ্বিক অংশীদারিমূলক প্রচেষ্টা
বাংলাদেশের ব্যবসা খাতের ওপর আলোকপাত করে কেস স্টাডি তৈরি ও প্রকাশে কাঠামো তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল পাবলিশিং ও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে এ অংশীদারি। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে যেন শিক্ষার্থীরা উদীয়মান বাজারের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ সম্পর্কে ধারণা ও জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।
হার্ভার্ড বিজনেস পাবলিশিং এডুকেশনের দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক পরিচালক দিব্যেশ মেহতা বলেন, ‘আমরা আইবিএ মুবারক আলী কেস সেন্টারের সঙ্গে অংশীদার হতে পেরে আনন্দিত। এ উদ্যোগ বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের ব্যবসা খাতের সম্ভাবনা তুলে ধরবে। পাশাপাশি শিক্ষার ক্ষেত্রে অর্থবহ অংশীদারি কীভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, তারও অনন্য উদাহরণ তৈরি করবে। একসঙ্গে আমরা সাফল্যগাথা রচনা করছি; আর এর শিকড় প্রাসঙ্গিকতা ও রূপান্তরমূলক শিক্ষাগত অভিজ্ঞতার ভেতরে নিহিত রয়েছে।’
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট বেঙ্গালুরুর (আইআইএমবি) ডিসিশন সায়েন্সেস ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ইউ দীনেশ কুমার বলেন, ‘আইআইএম বেঙ্গালুরু (আইআইএমবি) আইবিএ মুবারক আলী কেস সেন্টারের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এ অংশীদারিমূলক উদ্যোগ নিতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। এ অংশীদারি বাংলাদেশের ব্যবসায়িক মডেলের কার্যকারিতা বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। কেস স্টাডি তৈরির পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখার মাধ্যমে এ অংশীদারি বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রদান করবে।’
ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়নের দিকে যাত্রা
অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে মুবারক আলী বিগত চার দশকে সফলভাবে একটি অনবদ্য প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
আজ মুবারক আলীর অন্তর্ধানের এক বছর পূর্তি। তাঁর সাফল্যমণ্ডিত জীবন ও কর্মের স্মরণে আইবিএ মুবারক আলী কেস সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষা, শিল্পকলা ও স্থাপত্যে টেকসই উন্নয়ন এবং উৎকর্ষ অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে মুবারক আলী ফাউন্ডেশন।
শিল্পকলার ক্ষেত্রে এ ফাউন্ডেশন লন্ডনে ফ্রিজ আর্ট ফেয়ার ইমার্জিং আর্টিস্ট প্রাইজে সহায়তা করে যাচ্ছে।
এ অঞ্চলগুলোর প্রতি ফাউন্ডেশনের প্রতিশ্রুতি কমিউনিটির উন্নয়ন ও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি প্রয়াত মুবারক আলীর নিষ্ঠা ও নিবেদনকেই প্রতিফলিত করে।
ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে আগত অতিথিদের উদ্যম ও উৎসাহ প্রকাশের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। আইবিএ মুবারক আলী কেস সেন্টারের উদ্বোধন বাংলাদেশে ব্যবসায় শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। এ উদ্যোগ দেশে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব তৈরিতে ভূমিকা পালন করবে, যারা দেশে ও বিশ্বব্যাপী ব্যবসার ভবিষ্যৎ আকৃতিদানে ভূমিকা পালন করবে।