যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির নিউক্লিয়ার প্রকৌশল ও বিকিরণবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ বাহাউদ্দিন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস কৌশলে পড়ালেখা শেষে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করেছেন তিনি। নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেছেন ফ্রান্সের পারমাণবিক শক্তি কমিশনে। সম্প্রতি নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘আউটস্ট্যান্ডিং টিচিং অ্যাওয়ার্ড’ও পেয়েছেন। ছুটিতে দেশে এসেছেন এই বাংলাদেশি শিক্ষক। পড়ুন তাঁর সাক্ষাৎকার
আউটস্ট্যান্ডিং টিচার অ্যাওয়ার্ডের জন্য আপনাকে অভিনন্দন। কী কী বিষয় বিবেচনা করে এই পুরস্কার দেওয়া হয়?
ধন্যবাদ। আউটস্ট্যান্ডিং টিচিং অ্যাওয়ার্ড মূলত পাঠদানে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি। কিছু বিশেষ মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে এই সম্মানজনক পুরস্কারটি দেওয়া হয়। যেমন শিক্ষাগত মূল্য, প্রশিক্ষকের কার্যকারিতা, সামগ্রিক শিক্ষার কার্যকারিতা ইত্যাদি। বছরব্যাপী ছাত্রছাত্রীদের মতামত ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
আলবার্ট আইনস্টাইনের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে—‘কোনো বিষয় আপনি যদি ছয় বছর বয়সী একটা বাচ্চাকে বোঝাতে না পারেন, তার মানে আপনি নিজেও বিষয়টি বোঝেননি।’
নিউক্লিয়ার প্রকৌশল তো বেশ কঠিন একটা বিষয়। এই বিষয় পড়িয়েও কীভাবে শিক্ষার্থীদের মন জয় করলেন?
নিউক্লিয়ার প্রকৌশল অন্য যেকোনো প্রকৌশলের বিষয়ের মতোই। আলবার্ট আইনস্টাইনের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে—‘কোনো বিষয় আপনি যদি ছয় বছর বয়সী একটা বাচ্চাকে বোঝাতে না পারেন, তার মানে আপনি নিজেও বিষয়টি বোঝেননি।’ আমি আমার যেকোনো ক্লাস বা রিসার্চ মিটিংয়ের আগে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এটাই মাথায় রাখি, যেন বিষয়টা সহজভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি।
দেশের বাইরে পিএইচডি করতে যাওয়ার জন্য ভালো সিজিপিএ কতখানি জরুরি?
এ ব্যাপারে আমি যে মতামত দিচ্ছি তা একেবারেই আমার ব্যক্তিগত। আমার মনে হয়, সিজিপিএ ভালো থাকলে ভর্তি কমিটি প্রাথমিকভাবে আপনার ব্যাপারে উৎসাহী হবেন। কিন্তু শুধু এই মানদণ্ড দিয়ে গবেষক হিসেবে আপনাকে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। তাই সিজিপিএর পাশাপাশি গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকলে সেটা খুব কাজে আসে। একটা ছোট উদাহরণ দিই। ধরুন, আমার কাছে দুটি আবেদনপত্র এল। প্রথমজনের সিজিপিএ ৩.৯–এর বেশি, কিন্তু গবেষণার অভিজ্ঞতা নেই। দ্বিতীয়জনের সিজিপিএ ৩.০০, কিন্তু গবেষণার অভিজ্ঞতা বেশ সমৃদ্ধ। আমি কিন্তু দ্বিতীয়জনকেই বেছে নেব।
নিউক্লিয়ার প্রকৌশলে কারা স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি করতে পারেন?
যদিও বাইরের বেশ কটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে স্নাতক করার সুযোগ আছে কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত পোস্টগ্র্যাড (স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি) পর্যায়ের বিষয়। আমি নিজেই বুয়েটে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস কৌশলে স্নাতক করেছি। সুতরাং কম্পিউটার বিজ্ঞান, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল, পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল, পদার্থবিজ্ঞান, রাসায়নিক কৌশল, ফলিত গণিত, রসায়নের মতো বিষয়ে যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। সহজ করে বললে, এটি একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়। বিজ্ঞান বা প্রকৌশল ব্যাকগ্রাউন্ডের যে কেউ এই বিষয়ে স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি করতে পারেন।
ভবিষ্যতে এই বিষয়ের সম্ভাবনা কতটুকু?
আগেই বলেছি, এটি একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়। তার মানে নিউক্লিয়ার–সংশ্লিষ্ট কাজের জন্যই শুধু নিউক্লিয়ার প্রকৌশলীদের দরকার হয়, তা নয়। গণিত বা প্রকৌশলের বিভিন্ন শাখায় নিউক্লিয়ার প্রকৌশলীরা কাজ করতে পারেন। তবে আমি বলব, এই বিষয়ে স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের কাজের ক্ষেত্র মূলত পাঁচটি: পদার্থবিজ্ঞান, রাসায়নিক প্রকৌশল, যন্ত্রকৌশল, কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং এনার্জি ও নিউক্লিয়ার প্রকৌশল।
যাঁরা দেশের বাইরে নিউক্লিয়ার প্রকৌশলে পড়তে চান, তাঁদের কী পরামর্শ দেবেন?
প্রকৌশলে স্নাতক যে কেউ আবেদন করতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে শক্তিশালী রিসার্চ প্রপোজাল, মোটিভেশন লেটার এবং ভালো সুপারিশপত্র কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। নিউক্লিয়ার নিয়ে বাংলাদেশের ছাত্রদের মধ্যে যে ভুল ধারণাটা কাজ করে, তা হলো ইসলামিক রাষ্ট্রের নাগরিক বা মুসলিম হলে এই পেশায় ঝামেলা হতে পারে। আমি গত ৯ বছরে প্রচুর মুসলিম এবং ইসলামিক রাষ্ট্রের নাগরিক নিউক্লিয়ার গবেষকদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। তাঁরা উন্নত দেশের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। তাই আমি বলতে পারি, এই ধারণা পুরোপুরি অমূলক। বরং বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরাও এ বিষয়ে পড়ালেখা করে উচ্চতর গবেষণায় অবদান রাখতে পারেন।