দীর্ঘ সময় মানুষ যখন ঘরবন্দী, ক্যাম্পাস শূন্য, প্রকৃতি তখন যেন মেতে উঠেছে আপন কোলাহলে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে তাকালে তা–ই মনে হয়। ক্যাম্পাসের সবুজ এখন আরও গাঢ়, আবারও প্রস্তুত সবুজ প্রাণদের বরণ করে নিতে।
পাখির চোখে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দেখলে মনে হতে পারে, গাছগুলো বড় মায়ায় ঘিরে রেখেছে ক্যাম্পাসটিকে। শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়কে যতটা ভালোবাসেন, এই প্রাঙ্গণের প্রতি সবুজের দাবি নিশ্চয়ই তার চেয়ে কম নয়।
ছবি তুলেছেন আনিস মাহমুদ।
শাটলের ক্যাম্পাসে ট্রেন থামে না অনেক দিন। দল বেঁধে ট্রেন থেকে ছাত্রছাত্রীদের নামার দৃশ্যও চোখে পড়ে না করোনার আঘাতের পর থেকে। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিতে সবুজ হয়েছে আরও। কাটা পাহাড়, জয় বাংলা চত্বর, বুদ্ধিজীবী চত্বর—সবই আগের চেয়েও সবুজ। নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু হলের কাজ এগিয়েছে অনেকখানি। আর লতানো গাছ বিজ্ঞান অনুষদের ভবনটিকে জড়িয়ে ধরেছে আষ্টেপৃষ্ঠে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর ছবি তুলেছেন জুয়েল শীল।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি যে আগের চেয়েও সুন্দর হয়েছে, সেটা নিশ্চয় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে পা রাখলেই টের পাবেন। সবুজ প্রাঙ্গণ হয়েছে আরও সবুজ। ছাত্রছাত্রীদের অনুপস্থিতিতে ক্যাম্পাসে পাখির আনাগোনা বেড়েছে। বটতলার দোকানগুলো বন্ধ। তবে করোনার বন্ধেও ক্যাম্পাসের আশপাশে থাকা শিক্ষার্থীদের একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে নানা রকম ছবি এঁকেছেন। ছবিগুলো প্রিয় ক্যাম্পাসকে করেছে আরও রঙিন।
ছবি তুলেছেন শামসুজ্জোহা স্থির
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ‘তপনদার চায়ের দোকান’ এক আবেগের নাম। সেই দোকানের এমন হাল দেখে অনেকেরই নিশ্চয় বুকটা হু হু করে উঠবে। দেখে বোঝার উপায় নেই, একসময় এখানেই বসত জমজমাট আড্ডা। দীর্ঘদিন ছাত্রছাত্রীদের অনুপস্থিতির কারণে জায়গাটা দখল করে নিয়েছে গুল্মলতার দল।
গত ২১ সেপ্টেম্বর ছবি তুলেছেন সাদ্দাম হোসেন।
ক্যাম্পাসের চারা গাছগুলো বন্ধের মধ্যে বেড়ে উঠছে। বিজ্ঞান ভবনের সামনে গাছগুলা এমনভাবে পাতা মেলেছে, জায়গাটা অচেনা ঠেকে। কাঠগোলাপের গাছটা বড় হয়েছে। ফুল ফুটেছে। টুকিটাকি চত্বরের গাছগুলো যেন মহিরুহ হয়ে উঠেছে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ ‘শতবর্ষে শতপ্রাণ’ নামে যে আমবাগান করা হয়েছিল, তা এখন বেশ চোখে পড়ছে। করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিনের উপহার হিসেবে একটি আমবাগান করা হয়েছে। সেটিও ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ছবি তুলেছেন আবুল কালাম আজাদ।
বড় চমক অপেক্ষা করছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের জন্য। করোনাকালে এই ক্যাম্পাসে হয়েছে বেশ কিছু সংস্কারকাজ। নির্মাণাধীন ভবনগুলোর কাজ অনেকটা এগিয়েছে। তা ছাড়া ক্যাম্পাসেই এখন চোখে পড়ে টলমলে পানির একটি লেক, যা বছর দেড়েক আগে ছিল না।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর পাবিপ্রবির ছবি তুলেছেন হাসান মাহমুদ।
সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজ (এমসি কলেজ) আরও সবুজ হয়ে ওঠার পেছনে কৃতিত্ব দিতে হয় প্রথম আলো বন্ধুসভাসহ ক্যাম্পাসের কয়েকটি সংগঠনকে। এই করোনাকালে অনেকেই কলেজে বৃক্ষ রোপণ করেছেন। কলেজ ভবনের সামনের পদ্মপুকুরটা পাতায় ছেয়েছে, হয়েছে আরও সবুজ। টিলাগুলোর ওপরে জারুল ফুলের গাছ শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় আছে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর ছবি তুলেছেন আনিস মাহমুদ।