মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ

‘কটাক্ষ’ করে শিক্ষামন্ত্রী শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে উসকে দিচ্ছেন, অভিযোগ শিক্ষকনেতার

শিক্ষকদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে ১৫তম দিনে আজ বুধবার শিক্ষকের উপস্থিতি অনেক বেশি লক্ষ করা গেছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, ঢাকা, ২৬ জুলাই
ছবি: মোশতাক আহমেদ

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিভিন্নভাবে ‘কটাক্ষ’ করে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের (সরকারিকরণ) দাবিতে শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে উসকে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনরত বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ। সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর ‘প্রাণের দাবি’ সময় থাকতে না বুঝলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভিভাবক হিসেবে দীপু মনি কতটুকু যোগ্য থাকবেন, সেটি নিয়েও  প্রশ্ন দেখা দেবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ১৬তম দিনে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বক্তৃতাকালে শিক্ষকনেতা শেখ কাওছার আহমেদ এসব অভিযোগ করেন। শিক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনকে বিভিন্নভাবে কটাক্ষ করে আপনি যেভাবে উসকে দিচ্ছেন, দয়া করে আর কোনো অস্ত্বিতে আঘাত না দিয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান থেকে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। না হয়, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে যাব না।’

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ডাকে গত ১১ জুলাই থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা। তাঁরা ঘোষণা দিয়েছেন অভিভাবক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়া তাঁরা ঘরে ও শ্রেণিকক্ষে যাবেন না।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ অভিযোগ করেন, তাঁদের আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য নানাভাবে অপচেষ্টা হচ্ছে। তাঁকে জানানো হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী জাতীয়করণের বিষয়ে একটি কর্মশালা করবেন। সেই কর্মশালায় তাঁরা (শিক্ষকেরা) উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু তাঁরা মনে করেন এই আন্দোলনকে নসাৎ করার জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই কর্মশালা করা। অশুভ কোনো ইচ্ছা বা উদ্দেশ্যে থাকতে পারে। কারণ, ওই কর্মশালা করা হবে ঢাকার বাইরে। এটি  সত্যিকারের কর্মশালা, নাকি আন্দোলনকে থামানোর কোনো অপচেষ্টা, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কথায় আশ্বস্ত হয়ে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত কোনো কর্মশালায় অংশ নেবেন না বলে জানান তিনি।

গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করে শীতকালে নেওয়ার সিদ্ধান্তকেও এই আন্দোলনকে বানচাল করার উদ্দেশ্য বলে মনে করেন শেখ কাওছার আহমেদ। তিনি অভিযোগ করেন, এই আন্দোলনকে ‘রং’ দেওয়ার জন্য একটি মহল উসকে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, অপকৌশল করছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হবে না।


শিক্ষকনেতা শেখ কাওছার আহমেদ আরও বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় (শিক্ষামন্ত্রী) বলেছেন, অল্প কিছুসংখ্যক শিক্ষক আছেন। এঁরাও হয়তো বাড়ি ফিরে যাবেন। কিন্তু মন্ত্রী মহোদয়কে বলতে চাই, আজকে কদম ফোয়ারা থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ আছে। দয়া করে গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা নিজে এসে দেখে যান।’

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির উদ্দেশে শেখ কাওছার আহমেদ আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতা, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দুজন উপদেষ্টা পর্যন্ত বলেছেন, শিক্ষকদের এই দাবি ন্যায্য এবং যৌক্তিক। বুঝতে পারছেন না অভিভাবক শিক্ষামন্ত্রী। সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর প্রাণের দাবি এখনো বোঝেননি। সময় থাকতে না বুঝলে ২৭ জুলাই (আগামীকাল বৃহস্পতিবার) প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর তাঁর সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে এর অবসান ঘটানো হবে। তখন কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভিভাবক হিসেবে আপনি (দীপু মনি) কতটুকু যোগ্য থাকবেন, সেটি নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন দেখা দেবে।’

এদিকে শিক্ষকদের এই লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে মাঝে কয়েক দিন শিক্ষকের উপস্থিতি কমে গেলেও গতকাল ও আজ বুধবার বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের উপস্থিতি দেখা গেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষকেরা এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

এর আগে ১৯ জুলাই আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনরত শিক্ষক ও অন্য শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে (জাতীয়করণ) আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই। তবে জাতীয়করণের যৌক্তিকতা আছে কি নেই, সেটাসহ শিক্ষা, শিক্ষকদের সার্বিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে দুটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী আগস্টের শেষ নাগাদ এ দুই কমিটি গঠন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটি কমিটি জাতীয়করণসহ শিক্ষা ও শিক্ষকদের মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা, যৌক্তিকতা ও করণীয় বিষয়ে গবেষণা করবে। আরেকটি কমিটি আর্থিক বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে। এ ছাড়া সেদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলেরও ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকেরা। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল হওয়ায় রোববার থেকে ক্লাস শুরু হলেও আন্দোলনকারী এসব শিক্ষক ক্লাসে ফিরে যাননি।