আগামী বছর থেকে দেশের সব কটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘একক’ ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। নতুন এই নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ‘ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ)’ নামে পৃথক একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে।
দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়। আজ সোমবার বিকেলে আগারগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) অনুষ্ঠিত হয় এই সভা। ইউজিসি সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিও সাংবাদিকদের এ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানান।
বর্তমানে দেশে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদাভাবে ভর্তি করা হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হয়। তবে ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে, তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েট) আরেকটি গুচ্ছে এবং কৃষি ও কৃষিশিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় অপর একটি গুচ্ছুভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, আন্তরিকতার অভাব, ‘ইচ্ছাকৃত সংকট’ তৈরি করে রাখাসহ কয়েকটি কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি সুস্থির ভর্তিব্যবস্থা চালু করা যাচ্ছে না। এ জন্য ভর্তি নিয়ে এখনো একধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দীর্ঘ বছরের চেষ্টায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে দেশের ৩০টির বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ায় বড় অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু একই গুচ্ছে থাকা ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে এখনো সংকটগুলো কাটেনি। ‘জটিলতার’ কারণে এখানে ভর্তির কাজ শেষ করতে দীর্ঘ সময় লাগছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিও রয়ে গেছে।
এ রকম একটি পরিস্থিতিতে এখন আগামী বছর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলো।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, আজ সভায় বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববদ্যিলয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফুল হাসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান সভায় অংশগ্রহণ করেন। একক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠান বিষয়ে তাঁরা একমত পোষণ করেন।
সভায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার পরে একক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সূচি প্রকাশ করা হবে এবং উচ্চশিক্ষার সব ক্ষেত্রে একই সময়ে ক্লাস শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য, স্বায়ত্তশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বার্থে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সভা শেষে এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, আগামী বছর থেকে কি করে একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সমন্বিত মানে একটি পরীক্ষা নয়, বছরে হয়তো দুবার হবে। কীভাবে হবে, কী করে হবে, কী পদ্ধতিতে হবে, তা ঠিক করার বিষয় রয়েছে। এটি নতুন করে উদ্ভাবনের বিষয় নয়, এটি পৃথিবীতে ভালোভাবেই চলছে। সেগুলো দেখে সবচেয়ে বেশি উপযোগী ও ব্যয় সাশ্রয়ী বিবেচনায় নিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন।
সভায় একক ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটি কাঠামো, জাতীয় পর্যায়ে একটি নীতিমালা তৈরি ও পরীক্ষার মাধ্যমে একটি স্কোর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সভায় কমিশনের ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, নতুন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করলে এক মাসের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব।
অবশ্য সভায় পরীক্ষার পদ্ধতি ঠিক হয়নি। একক ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি ঠিক করার বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান শিগগিরই একটি কমিটি গঠন করবেন।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মো. সাজ্জাদ হোসেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর, অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ ও অধ্যাপক মো. আবু তাহের, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবু ইউসুফ মিয়া, ইউজিসি সচিব ফেরদৌস জামান প্রমুখ।