প্রথম ধাপে আবেদন করেও একাদশে ভর্তির সুযোগ পায়নি ৪৫০০০ শিক্ষার্থী

ফাইল ছবি

একাদশ শ্রেণিতে (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তির জন্য আবেদন করেও প্রথম দফায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (কলেজ-মাদ্রাসা) ভর্তির সুযোগ পায়নি ৪৫ হাজার ১৬১ জন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী। এবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল ১৩ লাখ ৬ হাজার ৯৫৮ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে কোনো না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে ১২ লাখ ৬১ হাজার ৭৯৭ জন শিক্ষার্থী।

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এখন আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভর্তি হওয়ার নিশ্চয়তা (অনলাইনে নির্ধারিত পদ্ধতি নিশ্চয়ন) দিতে হবে। এটি না করলে প্রথম পর্যায়ে নির্বাচন ও আবেদন বাতিল হবে। সে ক্ষেত্রে ওই সব ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে পুনরায় ফিসহ আবেদন করতে হবে।

যারা প্রথম দফায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পায়নি, তারা পরের ধাপে প্রতিষ্ঠানের পছন্দক্রম পরিবর্তন করে আবেদন করে ভর্তির সুযোগ পেতে পারে
তপন কুমার সরকার, আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান

বেশ কয়েক বছর ধরেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কাজটি হচ্ছে অনলাইনে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহায়তায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কেন্দ্রীয়ভাবে এ ভর্তির কাজটি হয়। একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে কোনো বাছাই পরীক্ষা হয় না। এসএসসি ও সমমানের ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। অনলাইনে পছন্দক্রম দিয়ে সর্বোচ্চ ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করা যায়।

গত ২৮ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন। এরপর অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হয় গত ১০ আগস্ট থেকে। আবেদন নেওয়া হয় ২০ আগস্ট পর্যন্ত। যার প্রথম দফায় ফলাফল প্রকাশ করা হয় গতকাল।

পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রথম দফায় যত শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে, তাদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী কলেজ-মাদ্রাসায় ভর্তির জন্য আবেদন করেনি। অবশ্য কারিগরিসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও অনেকে ভর্তি হয়।

আবার যত শিক্ষার্থী আবেদন করেছে, তাদের মধ্যে ৪৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পায়নি। ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী বেশি—৬ লাখ ৭৬ হাজার ১৫০। এ ছাড়া ছাত্রসংখ্যা ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৬৪৭ জন। ভর্তির সুযোগ মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৪ শতাংশ ছাত্রী এবং ৪৬ শতাংশ ছাত্র।

জানতে চাইলে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, যারা প্রথম দফায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পায়নি, তারা পরের ধাপে প্রতিষ্ঠানের পছন্দক্রম পরিবর্তন করে আবেদন করে ভর্তির সুযোগ পেতে পারে। আর এই ভর্তিতে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ভর্তির কার্যক্রম চলছে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভর্তির কার্যক্রম আলাদাভাবে হচ্ছে। দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী কারিগরিতেও ভর্তি হয়। ফলে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাস করা সব শিক্ষার্থী কলেজ ও মাদ্রাসার জন্য আবেদন করেনি।

দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন শুরু ১২ সেপ্টেম্বর থেকে

পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে। চলবে ১৪ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় পর্যায়ের ফল প্রকাশ হবে ১৬ সেপ্টেম্বর। আর তৃতীয় পর্যায়ে আবেদন নেওয়া হবে ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর এবং ফল প্রকাশ হবে ২৩ সেপ্টেম্বর। যাচাই-বাছাই শেষে ভর্তির কাজটি হবে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। ভর্তির কাজ শেষে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে ৮ অক্টোবর থেকে।

সাধারণত স্বাভাবিক সময়ে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হতো জুলাই মাসে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলো হয়ে গেছে। এসএসসি ও এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষাগুলো যথাসময়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আবার কখনো কখনো পরীক্ষায় ছাড়াই ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। অবশ্য আগামী বছর থেকে এসএসসি পরীক্ষা স্বাভাবিক সময়ের মতোই ফিরছে।

আগামী বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করা হয়েছে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে। যদিও এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আগামী বছরও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দেরিতে শুরু হবে। সম্ভাব্য সময় অনুযায়ী আগামী বছরের জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা।

উল্লেখ্য, এত দিন স্বাভাবিক সময়ে ফেব্রুয়ারির শুরুতে এসএসসি ও এপ্রিলের শুরুতে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হতো।