ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি বাতিল হওয়া ১৬৯ শিক্ষার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগামী মঙ্গলবার জানা যেতে পারে। ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি এবং ভর্তি বাতিল নিয়ে পৃথক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রোববার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক–আল–জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য ২১ মে দিন ধার্য করেছেন।
নির্দিষ্ট বয়সসীমার বাইরে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লটারিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে অভিযোগ তুলে ভর্তিসংক্রান্ত নীতিমালা এবং ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তিতে প্রথম শ্রেণিতে বয়সসীমাসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি নিয়ে লটারিতে উত্তীর্ণ প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর মা পারভিন আকতারসহ দুজন অভিভাবক গত ১৪ জানুয়ারি একটি রিট করেন। এরপর ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। অন্যদিকে ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত ও ভর্তি বাতিলের বৈধতা নিয়ে ভর্তি বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের ১৩৬ জন অভিভাবক আরেকটি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৫ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন। পৃথক রুলের ওপর একসঙ্গে আজ শুনানি শেষ হয়।
আদালতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী দুজন অভিভাবকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শামীম সরদার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান। রিট আবেদনকারী ১৩৬ জন অভিভাবকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খুররম শাহ মুরাদ।
পরে আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি বিষয়ে এবং ১৬৯ ভর্তি বাতিলের বৈধতা নিয়ে অভিভাবকদের করা পৃথক রিটের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২১ মে রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছেন। ভর্তি বাতিল হওয়া ১৬৯ শিক্ষার্থীর বিষয়ে সেদিন সিদ্ধান্ত জানা যেতে পারে।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, নির্দিষ্ট বয়সসীমার বাইরে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লটারিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে অভিযোগ তুলে ভর্তিসংক্রান্ত নীতিমালা এবং ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তিতে প্রথম শ্রেণিতে বয়সসীমাসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি নিয়ে লটারিতে উত্তীর্ণ প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর মা পারভিন আকতারসহ দুজন অভিভাবকের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। জাতীয় শিক্ষানীতি–২০১০ ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সসীমা অনুসরণ না করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে লটারিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ফল বাতিল বিষয়ে পারভিন আকতারের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক বরাবর করা আবেদনটি ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতেও নির্দেশ দেন।
মাউশিতে করা ওই আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে আদালতকে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। একই সঙ্গে ভিকারুননিসার ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করতে নির্দেশনাসংবলিত মাউশির মহাপরিচালকের এক চিঠি (স্মারক) তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ। স্মারকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ১৬৯ শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করে জরুরি ভিত্তিতে মাউশিকে অবহিত করতে অনুরোধ করা হয়। কারণ হিসেবে বিধিবহির্ভূত ভর্তি বলে উল্লেখ করা হয়।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মাউশির ওই সিদ্ধান্ত (স্মারক) বাস্তবায়ন (কমপ্লায়েন্স) বিষয়ে হলফনামা আকারে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষকে ৬ মার্চ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের পক্ষে হলফনামা আকারে কমপ্লায়েন্স (বাস্তবায়ন) প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারটি শাখায় প্রথম শ্রেণিতে বিধিবহির্ভূতভাবে ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এক স্মারকে মাউশি নির্দেশনা দেয়। মাউশির নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে মাউশিতে গত ৪ মার্চ চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
গত ৬ মার্চ হাইকোর্ট ১৬৯টি শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে প্রথম শ্রেণিতে এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে নির্দেশ দেন। শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি ও পুরো অপেক্ষমাণ তালিকা হলফনামা আকারে (কমপ্লায়েন্স) দাখিল করতে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ভর্তি বাতিল হওয়া ৩৬ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন সেদিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট।
এ অবস্থায় হাইকোর্টের ৬ মার্চের আদেশ স্থগিত চেয়ে ৩৬ শিক্ষার্থীর অভিভাবক আপিল বিভাগে আবেদন করেন, যা গত ১৮ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে ২০ মার্চ শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। ধার্য তারিখ ২০ মার্চ আপিল বিভাগে শুনানি হয়।
সেদিন শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি বাতিল করা ১৬৯ শিক্ষার্থীর শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এ–সংক্রান্ত রুল দুই মাসের মধ্যে হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়।
এরপর ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মাউশির স্মারক এবং ভর্তি বাতিল বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গত ৪ মার্চের চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ভর্তি বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের ১৩৬ জন অভিভাবকের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন। দুই অভিভাবকের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া রুল এবং ১৩৬ অভিভাককের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া রুলের ওপর একসঙ্গে হাইকোর্টে শুনানি হয়।