চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ভাতা নেবেন না শিক্ষকেরা, ফরম বিক্রি ২২ কোটি টাকার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনে ভাতা না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ভর্তি পরীক্ষার আয়ের টাকা কোন খাতে খরচ করা হবে, এর যথাযথ ব্যাখ্যা না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টায় এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হকের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক সমিতির এক সাধারণ সভায় শিক্ষকেরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় যাবতীয় আয়–ব্যয়ের একটি স্বচ্ছ বিবরণী প্রদান ও দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকদের যৌক্তিক পরিমাণ সম্মানী (ভাতা) প্রদানের সিদ্ধান্তে উপনীত না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকেরা ভর্তি পরীক্ষার কোনো সম্মানী (ভাতা) নেবেন না। তবে ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনে শিক্ষকেরা সহযোগিতা করবেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এ সমস্যার সন্তোষজনক সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের কোনো সম্মানী (ভাতা) দেওয়ার কথা নয়। যদি দেওয়া হয়, তাহলে শিক্ষক সমিতি এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এর করণীয় জানাবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে ২ মার্চ, আগামী শনিবার। পরীক্ষা শেষ হবে ১৬ মার্চ। প্রতি বছরের মতো এ বছরও চারটি ইউনিট ও দুটি উপইউনিটে পরীক্ষা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন রয়েছে ৪ হাজার ৯২৬টি। এর মধ্যে সাধারণ আসন ৪ হাজার ১৮৯টি। আর বাকি ৭৩৭টি আসন কোটায় বরাদ্দ থাকবে। এ বছর মোট পরীক্ষায় বসবেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৫৫ শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকেরা পরিদর্শক, প্রধান পরিদর্শক ও সমন্বয়কারী—এই চার ক্যাটাগরিতে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতি শিফটের পরীক্ষায় শিক্ষকেরা ভাতা পান ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা। একজন শিক্ষক পুরো ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর মোট ভাতা পান প্রায় ১৯ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা। এ ভাতা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন অনেক শিক্ষক।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডি নানা অজুহাতে ভর্তি পরীক্ষার তহবিল থেকে অনেক টাকা নিয়ে নেন। শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনের জন্য যে টাকা দেওয়া হয়, সেটা তূলনামূলক অনেক কম।

আবদুল হক বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার টাকা আমরা এভাবে নিতে চাই না। কম বা বেশি বলে নয়, আমাদের টাকা না দিলেও সমস্যা নেই। আমরা চাই, ভর্তি পরীক্ষার টাকা কোন খাতে খরচ হচ্ছে, এর স্বচ্ছ ব্যাখ্যা থাকুক। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় প্রায় ২২ কোটি টাকা ফি এসেছে। এক হাজার শিক্ষক দায়িত্ব পালন করে পাবেন তিন কোটি টাকা। বাকি টাকা কোথায় খরচ করা হবে, এর সম্ভাব্য ব্যয়ের খাত প্রশাসন দিক, যাতে শিক্ষকেরা ভর্তি পরীক্ষার টাকা সবাই মিলে ভাগ–বাঁটোয়ারা করে এমন কথা কেউ না বলে।

শিক্ষক সমিতির সভা বর্জন
শিক্ষক সমিতি যে সাধারণ সভায় ভর্তি পরীক্ষার ভাতা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে সভা বর্জন করেছেন প্রশাসন ঘনিষ্ঠ শিক্ষকেরা। গত ২২ ফেব্রুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান প্রশাসন ঘনিষ্ঠদের হলুদ দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল্লাহ মামুন। দলটি মূল হলুদ দল থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বের হয়েছে। এ দলের পুরো নাম বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ। এটি আওয়ামী ও বামপন্থী শিক্ষকদের রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে পরিচিত।

২২ ফেব্রুয়ারি আবদুল্লাহ মামুনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমান শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের মেয়াদ শেষ। এ অবস্থায় সাধারণ সভা ডাকার কোনো নৈতিক ও সাংবিধানিক বৈধতা নেই। তাই হলুদ দল অবৈধ এ সভা বয়কট করছে। তবে পাশাপাশি আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনের জন্য যে ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা সম্মানজনক নয় বলে মনে করে হলুদ দল। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ভর্তি পরীক্ষার এ ভাতা একেবারেই সম্মানজনক হয়নি। তাই প্রশাসনকে অন্য অংশীজনদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমানুপাতিক হারে বাড়ানোর জন্য হলুদ দল জোর দাবি জানাচ্ছে।