দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে পৌনে ৯ লাখ শিক্ষার্থী। সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়ে যত আসন আছে, তার চেয়ে প্রায় আড়াই লাখ কম আবেদন জমা পড়েছে। তবে সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে যত আসন আছে, তার প্রায় পাঁচ গুণ বেশি আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু বেসরকারি স্কুলে আসনের চেয়ে সাত লাখ কম আবেদন জমা পড়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জানিয়েছে, এখন আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে এ মাসের শেষ সপ্তাহে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করা হবে। ২৬ নভেম্বর লটারির জন্য নির্ধারিত আছে। তবে মাউশির একটি সূত্র জানিয়েছে, ২৬ নভেম্বর এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ হতে পারে বলে আলোচনা আছে। যদি ওই দিন এইচএসসির ফল প্রকাশিত হয়, তাহলে ভর্তির লটারি দু-এক দিন পেছাতেও পারে। তবে এই বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। শিগগিরই বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
মাউশির অধীন দেশের সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মহানগর ও জেলা সদর উপজেলায় অবস্থিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষের (২০২৪) জন্য প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। ভর্তির জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছিল ২৪ অক্টোবর। প্রথমে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে ১৮ নভেম্বর করা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
মাউশির সূত্রমতে, এবার কেন্দ্রীয় এই লটারির অধীনে আসা সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি ৩ হাজার ৮৪৬টি বিদ্যালয়ে মোট আসন আছে ১১ লাখ ২২ হাজার ৯৪টি। এসব আসনের বিপরীতে আবেদন করেছে ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯২ জন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী।
মোট আসনের মধ্যে ৬৫৮টি সরকারি বিদ্যালয়ে আসন আছে ১ লাখ ১৮ হাজার ১০১টি। এর মধ্যে আবেদন করেছে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ১৩টি জন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে ৩ হাজার ১৮৮টি বেসরকারি বিদ্যালয়ে আছে মোট ১০ লাখ ৩ হাজার ৯৯৩টি আসন। এর বিপরীতে আবেদন করেছে ৩ লাখ ১০ হাজার ৭৭৯ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ বেসরকারি বিদ্যালয়ে আবেদনকারী সবাই ভর্তি হলেও প্রায় সাত লাখ আসন খালি থাকবে।
বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে আসনের চেয়ে এত কম আবেদনের কারণ কী এবং এর ফলে কী এই বিপুল আসন খালি থাকবে—এমন প্রশ্নের জবাবে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৃত কারণ তাঁরাও বুঝতে পারছেন না। গতবারও বেসরকারি বিদ্যালয়ে আসনের চেয়ে কম আবেদন জমা পড়েছিল। তবে সরকারি বিদ্যালয়ে আসনের চেয়ে অনেক বেশি আবেদন জমা পড়েছে। সেখানকার আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থীরা পরে বেসরকারি বিদ্যালয়ের খালি আসনে ভর্তি হতে পারবে।
উল্লেখ্য, সরকারি বিদ্যালয়ে আসনের চেয়ে যতসংখ্যক বেশি আবেদন জমা পড়েছে, তারা সেগুলো মেলালেও বেসরকারি বিদ্যালয়ে সব আসন পূরণ হবে না।
বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর দেওয়া আসনের সংখ্যা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ প্রকাশ করলেন মাউশির একজন কর্মকর্তা। তাঁর ভাষ্য, বেসরকারি স্কুলগুলো আসনের যে সংখ্যা দিচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
আবেদনের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি আবেদনে পছন্দের ক্রমানুসারে সর্বোচ্চ পাঁচটি বিদ্যালয়ের নাম দেওয়ার সুযোগ ছিল। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পালায় (ডাবল শিফট) চলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উভয় পালা পছন্দক্রমে দিলে দুটি পছন্দক্রম বলে বিবেচিত হয়েছে।
মাউশির সূত্রমতে, সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদনকারীরা ৮ লাখ ৯২ হাজার ৮১টি পছন্দক্রম উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে বেসরকারি বিদ্যালয়ে পছন্দক্রম দিয়েছে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৬৭২টি।
প্রতিবারই বছরের শেষ সময়ে এসে পরবর্তী বছরের ভর্তির প্রক্রিয়া চলে। ভর্তি শেষে জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু হয়। আগে কেবল প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির কাজটি হতো লটারির মাধ্যমে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে বিদ্যালয়গুলোতে সব শ্রেণিতেই লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এর পর থেকে একই প্রক্রিয়ায় ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করা হচ্ছে।