ইউজিসি ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমিয়ে ‘যৌক্তিক’ করার সিদ্ধান্ত নিলেও উল্টো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবার ফি বাড়িয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ১০০০ টাকা আবেদন ফি। গতবার ছিল ৬৫০ টাকা।
জাহাঙ্গীরনগরে আবেদন ফি ৯০০ টাকা। গতবার ছিল ৬০০ টাকা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন ফি ৮৫০ টাকা। গতবার ছিল ৬৫০ টাকা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফি ১১০০ টাকা, গতবারও একই ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ওপর ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফির বোঝা কমছে না। বরং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আসন্ন শিক্ষাবর্ষেও (২০২১-২২) আবেদন ফি আগের চেয়ে ২০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আগেই বাড়িয়েছিল, এবারও সেটি বহাল রাখছে।
প্রায় এক মাস আগে (৭ এপ্রিল) উপাচার্যদের সঙ্গে ইউজিসির এক সভায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার ফি আনুপাতিক হারে কমিয়ে ‘যৌক্তিক’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তখন ঠিক হয়েছিল, ফি কমিয়ে যৌক্তিক করলে আগে যেভাবে ভর্তি ফি বাবদ আয়ের ৪০ শতাংশ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে জমা দিতে হতো, সেটি দিতে হবে না।
কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবার আবেদন ফি বাড়িয়েছে। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় না কমিয়ে আগের ফি বহাল রেখেছে। আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফি বাড়ানোর তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ইউজিসির একজন সদস্য।
এ নিয়ে ইউজিসি ক্ষুব্ধ হলেও তারা শক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, এখন ইউজিসির সদস্যরা বসে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
আগে ১০টি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা হতো। সেখান থেকে কমিয়ে এবার পাঁচটি ইউনিটে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই হিসেবে এবার ফি বাড়েনি, বরং কমেছে।মো. নুরুল আলম, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
তবে ইউজিসির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন ফি কমাবে না, তারা আবেদন ফি বাবদ আয়ের ওই ৪০ শতাংশ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে জমা না দেওয়ার বিষয়ে ছাড় পাবে না।
অভিযোগ আছে, ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় হয়। যার বড় অংশই ভর্তি পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে যায়। ফির এই টাকা নিয়ে নয়ছয়েরও অভিযোগ আছে। যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রির আয় থেকে উদ্বৃত্ত আট কোটি টাকা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগ-ভাঁটোয়ারা করার অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করছে ইউজিসি।
দেশে ৫২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে এবার নতুন ৩টিসহ ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতিতে হবে। এতে একজন শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষা দিয়ে গুচ্ছে থাকা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। বাকিরা আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে।
এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২০ এপ্রিল অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন গ্রহণ শুরু করে, যার শেষ সময় ১০ মে। এবার সব ইউনিটে আবেদন ফি ৩৫০ টাকা বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। গত শিক্ষাবর্ষে আবেদন ফি ছিল ৬৫০ টাকা।
আগামী ৩ জুন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত গ ইউনিটের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। পরে ৪ জুন খ ইউনিট, ১০ জুন ক ইউনিট, ১১ জুন ঘ ইউনিট এবং ১৭ জুন চারুকলা অনুষদভুক্ত চ ইউনিটের সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রাথমিকভাবে ৮৫০ টাকার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত হবে ভর্তি পরীক্ষার সভায়।এস এম আকবর হোছাইন, বিশ্ববিদ্যালয়টির ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার
বিশ্ববিদ্যালয়টির সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, গতবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতবার ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ডিনরা জানিয়েছেন, এর ফলে খরচ বেড়েছে। মূলত ডিনদের সুপারিশের ভিত্তিতেই আবেদন ফি বাড়ানো হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন প্রক্রিয়া ১৮ মে শুরু হয়ে ১৬ জুন পর্যন্ত চলবে। এবার আবেদন ফি ৩০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ, বি, সি এবং ই ইউনিটের আবেদন ফরমের ফি করা হয়েছে ৯০০ টাকা। গতবার ছিল ৬০০ টাকা। তবে ডি ইউনিটের ফি ৬০০ টাকাই রাখা হয়েছে।
অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আগে ১০টি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা হতো। সেখান থেকে কমিয়ে এবার পাঁচটি ইউনিটে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই হিসেবে এবার ফি বাড়েনি, বরং কমেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ১৬ আগস্ট। প্রাথমিকভাবে আবেদন ফি এবার ২০০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আবেদন ফি করা হয়েছে ৭৫০ টাকা। এর সঙ্গে আরও ১০০ টাকা ‘প্রসেসিং ফি’ যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ একজন ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে আবেদনের সময় মোট ৮৫০ টাকা দিতে হবে। গতবার সব মিলিয়ে এই ফি ছিল ৬৫০ টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার এস এম আকবর হোছাইন প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ৮৫০ টাকার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত হবে ভর্তি পরীক্ষার সভায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফি আগে থেকেই বেশি। গতবার চূড়ান্ত প্রার্থীদের মোট আবেদন ফি ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা (সার্ভিস চার্জসহ)। এবারও ফি একই রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম।
কৃষি এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও ২২টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। গতবার জিএসটিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত আবেদন ফি নিয়েছিল। তবে এবার শিক্ষার্থীদের মেধাক্রম এবং পছন্দের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়, বিষয় নির্ধারণসহ কয়েকটি সুপারিশ করেছে ইউজিসি। আগামী সেপ্টেম্বরে ভর্তি পরীক্ষা। যদিও এখনো আবেদন ফির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।
ইউজিসি ও গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, তাঁরা আশা করছেন এবার গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবেদন ফি যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করবে।