ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় যোগ্যতার শর্ত শিথিল, ফি বেড়ে ১০০০

প্রথম আলো ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সময়সূচি অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ৩ জুন। একই সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদনের যোগ্যতার শর্ত কমানোর বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়েছে। ২০ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত অনলাইনে এবারের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন গ্রহণ করা হবে। সব ইউনিটেই আবেদন ফি ৩৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ভর্তি কমিটির সভায় ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে এসব সিদ্ধান্ত হয়। গতকাল বুধবার ডিনস কমিটির সভার সুপারিশগুলোই এ সভায় অনুমোদিত হয়। এবারের ভর্তি পরীক্ষা আগের মতো পাঁচটি ইউনিটে (ক, খ, গ, ঘ ও চ) দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। এসব সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত অনুমোদনের কথা থাকলেও কোনো পরিবর্তন আসার ‘সুযোগ নেই’ বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ।

আজ সাধারণ ভর্তি কমিটির সভা শেষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভর্তি কমিটির নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, আগামী ৩ জুন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিটের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। এরপর ৪ জুন কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিট, ১০ জুন বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিট, ১১ জুন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিট আর ১৭ জুন চারুকলা অনুষদভুক্ত ‘চ’ ইউনিটের সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ক, খ, গ ও ঘ ইউনিটের পরীক্ষা হবে বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত (দেড় ঘণ্টা)। তবে চারুকলার সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষাটি হবে বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত (৩০ মিনিট)। ২০ এপ্রিল থেকে অনলাইনের মাধ্যমে প্রার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ও ফি জমা দেওয়া শুরু হয়ে ১০ মে পর্যন্ত চলবে। ১৬ মে থেকে পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগপর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড করা যাবে।

আবেদনের যোগ্যতার শর্ত শিথিল

ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের যোগ্যতার শর্তও এবার শিথিল করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক বা সমমান ও ২০২১ সালের উচ্চমাধ্যমিক বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ‘ক’ ইউনিটে আবেদন করতে হলে এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ-৩.৫–সহ মোট ৮ (আগে ছিল ৮.৫); ‘খ’ ইউনিটে আলাদাভাবে জিপিএ-৩-সহ মোট ৭.৫ (আগে ছিল ৮); ‘গ’ ইউনিটে আলাদাভাবে জিপিএ-৩.৫-সহ মোট ৭.৫ থাকতে হবে (আগে ছিল ৮)।

বিভাগ পরিবর্তনের ‘ঘ’ ইউনিটে আবেদন করতে হলে এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ-৩-সহ মোট ৭.৫ থাকতে হবে। তবে বিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান, গার্হস্থ্য অর্থনীতি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞান শাখা থেকে আগত প্রার্থীদের এই ইউনিটে আবেদন করতে এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ-৩.৫-সহ মোট ৮ থাকতে হবে (আগে নিজ ইউনিটের যোগ্যতা পূরণের শর্ত থাকত)। এ ছাড়া ‘চ’ ইউনিটে আবেদন করতে হলে এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে জিপিএ-৩-সহ মোট ৬.৫ থাকতে হবে (আগে ছিল ৭)।

ভর্তি পরীক্ষা ১০০ নম্বরে

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ক, খ, গ ও ঘ ইউনিটে মোট ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা হবে। এ ক্ষেত্রে ৬০ নম্বরের বহুনির্বাচনী ও ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। দুই অংশের উত্তর দেওয়ার জন্য ৪৫ মিনিট করে মোট ৯০ মিনিট সময় থাকবে। ‘চ’ ইউনিটে সাধারণ জ্ঞান অংশে ৪০ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষা হবে। সময় ৩০ মিনিট। এর ফলাফলের ভিত্তিতে পরে মেধাক্রম অনুযায়ী ১ হাজার ৫০০ জন ৬০ নম্বরের অঙ্কন পরীক্ষায় অংশ নেবেন। অঙ্কন পরীক্ষার জন্য ৪৫ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকবে। পাঁচটি ইউনিটেই প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএর ওপর ১০ করে মোট ২০ নম্বর যোগ করে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে।

কমেছে আসন

এদিকে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা কমছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট গত মাসে আসনসংখ্যা ১ হাজার ৪০টি কমিয়ে ৭ হাজার ১২৫ থেকে ৬ হাজার ৮৫ করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিয়েছে। ভর্তি পরীক্ষাবিষয়ক বিস্তারিত নির্দেশনা ও তথ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে (https://admission.eis.du.ac.bd) পাওয়া যাবে।

উপাচার্যের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ভর্তি কমিটির আজকের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ, সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার, অনুষদগুলোর ডিন ও ইনস্টিটিউটগুলোর পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।

আবেদন ফি বেড়ে ১০০০

২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি ছিল ৩৫০ টাকা। ১০০ টাকা বাড়িয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ফি ৪৫০ টাকা করা হয়। এর ঠিক পরের শিক্ষাবর্ষে (২০২০-২১) আরও ২০০ টাকা বাড়িয়ে আবেদন ফি করা হয় ৬৫০ টাকা। আসন্ন ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন ফি একলাফে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ পরপর তিন শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফি ৬৫০ টাকা বাড়ল।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে আবেদন ফি ১০০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, প্রথমবারের মতো লিখিত অংশ থাকায় ফি ‘সামান্য’ বাড়ানো হয়েছে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ২০০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরের কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়ার অতিরিক্ত খরচের কথা। এবার একলাফে ৩৫০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে গত বছরের ফিতে খরচ সংকুলান না হওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের দাবি, ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি বাড়ানোর পেছনে মুনাফা করার কোনো চিন্তা নেই। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘বিভাগীয় শহরগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র হওয়ায় আমাদের ব্যয়টা অনেক বেশি। গত বছর (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) অনেক ভর্তুকি দিতে হয়েছে। যে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, খরচ তার চেয়ে বেশি হতে পারে।’ গত বছরের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে ডিনরা জানান, এই ফি ১ হাজার ২৫০ বা ১ হাজার ৩০০ টাকা হলে যথাযথ হয়। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে তাঁরা বলেছেন, এটি কোনোভাবেই এক হাজার টাকার ওপর নেওয়া যায় না। ভর্তুকি যাতে না দিতে হয়, তার জন্য শিক্ষকদের ভর্তি পরীক্ষার অনেক কাজই বিনা পয়সায় করতে হবে।