অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে আলোচনা হচ্ছে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে পক্ষে–বিপক্ষে নানা যুক্তি ও বিতর্ক রয়েছে। গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরেও আলোচনা হচ্ছে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এ জন্য আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গতকাল রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। যত দূর পারবেন তাঁরা আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাবেন। তবে এমনভাবে এটি করা হবে, যাতে যেসব শিক্ষার্থী নতুন শিক্ষাক্রমে আছে, তাদের কোনো অস্বস্তি না হয়। এ জন্য পরিমার্জন (শিক্ষাক্রম) করা হবে।
উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গতকালই প্রথম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসেন উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘যত দূর পারি আমরা আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাব। কিন্তু এমনভাবে যাব, যেন শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় কোনো অস্বস্তি না হয়।’
তবে শিক্ষাবিদেরা বলছেন, পুরোনো শিক্ষাক্রমে ফেরত যাওয়া বলতে কোন সময়ের শিক্ষাক্রমকে বোঝানো হচ্ছে, সেটি স্পষ্ট নয়। এর আগে ২০১২ সালে একবার শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। তারও আগে ১৯৯৬ সালে শিক্ষাক্রমে নতুন শিক্ষাক্রম হয়েছিল। পুরোনো শিক্ষাক্রমগুলোতেও নানা সমস্যা ছিল। তাই শিক্ষক–শিক্ষাবিদ ও অভিভাবক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে শিক্ষাক্রমের বিষয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।
সাধারণত পাঁচ বছর পরপর নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে দুবার শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। এর মধ্যে প্রথমবার পরিবর্তন আসে ২০১২ সালে। এরপর গত বছর আরেক দফায় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আসে, যা নতুন শিক্ষাক্রম নামে পরিচিত।
নতুন শিক্ষাক্রম চালুর শুরু থেকেই বিতর্ক তৈরি হয়। গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়। আর চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আগামী বছর মাধ্যমিকের দশম শ্রেণিতে এবং প্রাথমিক পর্যায়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে তা চালু হওয়ার কথা। আর ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
পুরোনো শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়া নিয়ে শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে মত আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান মনে করেন, বিদ্যমান শিক্ষাক্রম স্থগিত করে পুরোনো শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী করা যেতে পারে। তবে নতুন শিক্ষাক্রম শুরুর মাঝপথে এসে পুরোনো শিক্ষাক্রমে ফেরত গেলে শিক্ষার্থীদের কী হবে, সেটিও গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদেরা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, এখন বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে বড় পরিবর্তন ঘটেছে। নতুন প্রজন্ম সেটি দেখিয়েছেও। পুরোনো শিক্ষাক্রমে পড়াশোনা ছিল পরীক্ষানির্ভর সনদব্যবস্থা। এ জন্য কোচিং–প্রাইভেটের প্রাধান্য ছিল, যা তাঁদের গবেষণাতেও দেখা গেছে। তাই নতুন শিক্ষাক্রমে যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে সেগুলো দূর করার জন্য সংশোধন–পরিমার্জন হতে পারে। কিন্তু একেবারে পুরোনো শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়া সংগত হবে না বলে তিনি মনে করেন।