শুধু ৩টি নয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব বই সংশোধন হচ্ছে

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব কটি বইয়েরই ভুল-অসংগতিগুলোর সংশোধনী দিচ্ছে এনসিটিবি
প্রতীকী ছবি

কথা ছিল এ বছর তিনটি বইয়ের সংশোধনী দেওয়া হবে। তবে এখন এনসিটিবি জানিয়েছে, তিনটি নয়, নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব কটি বইয়েরই ভুল-অসংগতিগুলোর সংশোধনী দিচ্ছে তারা।

পবিত্র রমজান মাসেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সংশোধনীগুলোর সফট কপি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীরা তা হাতে পাবে ছুটি শেষে ঈদের পর।

এদিকে আগামী বছর দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পাশাপাশি মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হবে। তবে এখন পর্যন্ত বই লেখার কাজ শুরু হয়নি। গেলবারও দেরিতে বই লেখার কারণে ভুল-অসংগতি ছিল।এবারও দেরি হতে থাকায় একই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আগামী বছর থেকে অন্যান্য শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হবে।

আগামী বছর থেকেই নতুন শিক্ষাক্রমের সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি হতে যাচ্ছে। এখন মাধ্যমিক অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে অভিন্ন বিষয় পড়ে নবম শ্রেণিতে গিয়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভাগ হয়। কিন্তু আগামী বছর থেকে নবম শ্রেণিতে আর এই ভাগ হবে না। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে অভিন্ন বই পড়তে হবে। আর একেবারে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে বিভাগ বিভাজন হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই বদলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে চালু হওয়া তিন শ্রেণির বইয়ে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। যদিও নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর পরই পাঠ্যপুস্তকের ভুল ও অসংগতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এই বিতর্কের মুখে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে নেয় এনসিটিবি।

আগামী বছর দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পাশাপাশি মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হবে। তবে এখন পর্যন্ত বই লেখার কাজ শুরু হয়নি।

নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ওই দুটি বইয়ের নাম একই। এনসিটিবি জানিয়েছিল, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলনী পাঠ’এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়েরও কিছু অধ্যায় সংশোধন করা হবে। তিনটি বইয়ের সংশোধনী ‘শিগগিরই’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জানানো হবে। কিন্তু মার্চ শেষ হলেও সংশোধনী দিতে পারেনি এনসিটিবি।

জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পরিমার্জন করে বইগুলো সংশোধনের কাজটি শেষ পর্যায়ে। এখন সাজানো গোছানোর কাজ চলছে। তাঁরা ষষ্ঠ শ্রেণির ১৩টি এবং সপ্তম শ্রেণির ১৩ টি—মোট ২৬টি বই সংশোধন করেছেন। এগুলোতে এ বছরের জন্য বানান ভুলসহ তথ্যগত যেসব ভুল সংশোধন করা দরকার তা করে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। সংশোধনীর সফট কপি পাঠানো হবে। বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে মাউশির সংযোগ আছে, তাই মাউশির মাধ্যমে সংশোধনীগুলো পাঠানো হবে। তবে আগামী বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি বই আরও পরিমার্জন (সংযোজন-বিয়োজন) করে দেওয়া হবে।

বিতর্কের মুখে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে নেয় এনসিটিবি।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, এই সংশোধনীর জন্য এর আগে যাচাই-বাছাইয়ের (ট্রাই আউট) জন্য সারা দেশের প্রায় ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এনসিটিবির কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহ করেন। এরপর ২০, ২১ ও ২২ মার্চ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এ নিয়ে কর্মশালা ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়। তার ভিত্তিতে ২৭ থেকে ৩১ মার্চ পরিমার্জনের কাজটি করা হয়।

এ বছরের পাঠ্যবই নিয়ে অভিযোগ ছিল বই লেখার কাজটি খুবই কম সময় নিয়ে করা হয়েছিল। শিক্ষাবর্ষের শেষ সময়ে এসে পাণ্ডুলিপি লেখার কাজ করে তা ছাপা হয়। তা অনেক ভুল-ভ্রান্তি ছিল। যা নিয়ে বেকায়দায় পড়ে এনসিটিবি। কিন্তু বছরের তিন মাস চলে যাওয়ার পরেও আগামী বছরের পাঠ্যবই লেখার কাজ শুরু করা যায়নি। তাই চলতি বছরের আশঙ্কা আগামী বছরের ক্ষেত্রেও হতে পারে।

অবশ্য এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেছেন, শিগগিরই অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই লেখার কাজ শুরু হবে।