দেশ বা সরকার কী চায়? দেশ যদি চায় জাতি শিক্ষিত হোক; দেশ যদি চায় এখন থেকে বুদ্ধিমান প্রজন্ম গড়ে উঠবে; দেশ যদি চায় শুধু শ্রমিক প্রডিউসার না, বাংলাদেশ হবে ইন্টেলিজেন্স প্রডিউসার; তাহলে প্রাথমিক সেক্টর থেকে কাজ শুরু করতে হবে। এই দায়িত্ব যাঁদের আছে বা দেওয়া হবে, তাঁদের যোগ্য হতে হবে। দেশের সবচেয়ে মেধাবীদের এই সেক্টরে নিয়োগ দিতে হবে। ইতিমধ্যে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনাময় শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের হতাশ করবেন না। তাঁদের উপযুক্ত সম্মান দিন।
পূর্বের সরকারগুলোর নানা পদক্ষেপে এই খাতে অনেক অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছে, এর দায় দেশকেই নিতে হবে। সেই অযোগ্য শিক্ষকদের সামনে দাঁড় করিয়ে এই খাতের উন্নতিকে আটকে রাখা যাবে না। শিক্ষকেরা যাতে সম্মানজনকভাবে জীবনধারণ করতে পারে এবং নিজের মনপ্রাণ উজাড় করে শিশুদের শিক্ষা দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা খুবই শক্তিশালী করতে হবে। মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে ঘটা ঘুষ–বাণিজ্য যাতে আর না থাকে, সেটার ওপর জোর দিতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। এরপরও যদি কিছু শিক্ষক নিজেদের ঘাটতি মোচনে অক্ষম হয় বা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তাহলে উপযুক্ত প্রমাণসহ তাঁদের সম্মানজনকভাবে পেনশনসহ অবসরে পাঠাতে হবে। কথাটা রূঢ় হলেও দেশের প্রয়োজনে এটা করা উচিত।
শিক্ষার কারিকুলাম উন্নত করতে হবে, সেই কারিকুলাম বাস্তবায়ন যাঁদের হাত দিয়ে হবে, তাঁদের সর্বোচ্চ আর্থিক সম্মান দিতে হবে। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় যে উচ্চ গ্রেডে বেতন পায়, তাঁর সম্মান চেয়ে নিতে হয় না। সবাই অটো তাঁদের সম্মান করে।
এ ক্ষেত্রে নিয়োগ বিধি থেকে শুরু করে অনেক অনেক বিষয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। সেটা আনবে সরকার নিজ তাগিদে। শিক্ষকদের ওপর এটা চাপিয়ে দেওয়া অযৌক্তিক। দেশের সমস্যা সমাধানই উচ্চস্তরে বসে থাকা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব। তাঁরা তাঁদের মেধা, মনন ও জ্ঞান খাটিয়ে বের করুক, কীভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে মুমূর্ষু অবস্থা থেকে তুলে আনা যায়। কীভাবে আবার সজীব করা যায়। প্রাথমিক শিক্ষকদের কাছে সমাধান চাচ্ছেন কেন? আমাদের কাজ দ্বিধাহীনভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ানো। পড়ানোর আগে–পরে যাতে চিন্তা করা না লাগে, পকেটে তো টাকা নেই। যাই দুটো টিউশনি করি অথবা অন্য কোনো ব্যবসা করি। শিক্ষকদের দাবি নিয়ে মজা নেবেন না দয়া করে।
*লেখক: শিক্ষক