গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা
গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা

গুচ্ছ ভর্তি বহাল রাখতে উপাচার্যদের চিঠি দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম বহাল রাখতে গুচ্ছভুক্ত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অনুরোধ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সোমবার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব নুমেরী জামানের সই করা এক চিঠিতে এই অনুরোধ করা হয়েছে।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি এবং খরচ কমাতে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হয়েছিল গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে তা শুরু হয়। প্রথমে হয় কৃষি ও কৃষি শিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। আর সর্বশেষ দেশের ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা নেয়।

এই প্রক্রিয়ায় ভর্তি-ইচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষা দিয়েই তাঁর যোগ্যতা ও পছন্দ অনুযায়ী গুচ্ছে থাকা যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন। কিন্তু এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছপদ্ধতি থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আলাদাভাবে ভর্তির কার্যক্রম শুরু করেছে। আরও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।

অভিযোগ আছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব আইন, একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ও স্বকীয়তার কথা বললেও বাস্তবে আর্থিকভাবে বিপুল লাভের কারণেই মূলত আলাদা পরীক্ষা নিতে চায়। কারণ, ভর্তির ফরম বিক্রি বাবদ বিপুল আয়ের বড় অঙ্কই শিক্ষকসহ ভর্তির কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পেয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আলাদাভাবে পরীক্ষা হলে ভোগান্তি-ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি তাঁদের প্রস্তুতিতেও ব্যাঘাত ঘটবে। এ জন্য গুচ্ছপদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখার দাবিতে আসন্ন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। এসব নিয়ে গণমাধ্যমেও খবর প্রকাশিত হয়েছে।

এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে উপাচার্যদের চিঠি দিল। এতে বলা হয়, উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীবান্ধব একটি কার্যক্রম হিসেবে গুচ্ছপদ্ধতি আস্থা অর্জন করেছে। এতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, আবাসন এবং অন্যান্য খরচ কমেছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে একটি মানসম্মত প্রশ্নপত্রের ভিত্তিতে মেধাভিত্তিক ভর্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি অভিভাবকেরা একাধিক ভর্তি পরীক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় (সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) এই পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে। তবে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব উদ্যোগে পৃথকভাবে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। এটি হলে শিক্ষার্থীদের এবং অভিভাবকদের জন্য বাড়তি আর্থিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে জনমনে শিক্ষা প্রশাসনের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে।

এ অবস্থায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পুনরায় গুচ্ছপদ্ধতির সুফল বিবেচনা করে এই পদ্ধতি বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করা হয় চিঠিতে। গুচ্ছপদ্ধতি বহাল রাখতে উপাচার্যদের প্রতি শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের দেওয়া আধা সরকারি পত্রের কথাও চিঠিতে তুলে ধরা হয়।