ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ড। শেনজেনভুক্ত দেশটিতে শিক্ষা একটি জন্মগত অধিকার ও রাষ্ট্রকর্তৃক প্রদত্ত সেবা হিসেবে বিবেচিত হয়। শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বমানের হওয়ায় বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে ফিনল্যান্ড পড়াশোনা করার। এর নেপথ্যে রয়েছে দেশটির বিশ্বসেরা বিদ্যাপিঠ ও বহুজাতি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কাজের পর্যাপ্ত সুযোগ। ফিনল্যান্ডের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংরেজি কোর্স রয়েছে। তবে বেশির ভাগ কোর্সই ফিনিশ কিংবা সুইডিশ ভাষায় পড়ানো হয়, বিশেষ করে স্নাতক পর্যায়ে। দেশটিতে ২০১৭ সালের আগপর্যন্ত পড়াশোনার জন্য টিউশন ফি লাগত না। এরপর ইউরোপের বাইরের দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ২০১৭ সাল থেকে টিউশন ফি চালু হয়েছে। চলুন, দেশটিতে উচ্চশিক্ষার আবেদন, অধ্যয়ন খরচ, স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কেন ফিনল্যান্ড অন্যতম সেরা গন্তব্য
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সদস্যরাষ্ট্র পৃথিবীর সব থেকে নিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে একটি। ২৬ দশমিক ২ গ্লোবাল ক্রাইম ইনডেক্স নিয়ে শীর্ষ সুরক্ষিত দেশগুলোর তালিকায় এর অবস্থান ২৩ নম্বরে। এ ছাড়া বিশ্বের ১৩তম এই শান্তিপূর্ণ দেশটির গ্লোবাল পিস ইনডেক্স ১ দশমিক ৪৭৪। নিরাপদ পরিবেশের পাশাপাশি ফিনল্যান্ডের বিদ্যাপিঠগুলোর খ্যাতি শুধু ইউরোপেই নয়, বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে ১০৯তম অবস্থানে থাকা ফিনিশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম আলটো ইউনিভার্সিটি। ১১৫তম র্যাঙ্কটি ধরে রেখেছে ইউনিভার্সিটি অব হেলসিঙ্কি। ইউনিভার্সিটি অব অউলুর অবস্থান ৩১৩ ও ইউনিভার্সিটি অব তুর্কুর অবস্থান ৩১৫ নম্বরে। ল্যাপেনরান্ত ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি রয়েছে ৩৫১তম র্যাঙ্কে।
ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় আবেদনের পূর্বশর্ত কী কী
* ব্যাচেলর প্রোগ্রামের জন্য উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, হাইস্কুল ডিপ্লোমা বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
* মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য প্রয়োজন স্নাতক ডিগ্রি।
* প্রাসঙ্গিক একাডেমিক বিষয়ে সম্পন্ন ক্রেডিট পয়েন্ট ইসিটিএসের (ইউরোপিয়ান ক্রেডিট ট্রান্সফার অ্যান্ড অ্যাকুমুলেশন সিস্টেম) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
* কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় জিম্যাট বা জিআরই স্কোর চাইতে পারে।
* ইউএএস (ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্সের জন্য আলাদাভাবে দরকার হবে দুই বছরের প্রাসঙ্গিক কাজের অভিজ্ঞতা।
* ডক্টরাল প্রোগ্রামগুলোর জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পাশাপাশি গবেষণা প্রস্তাব বা প্রকাশনা থাকতে হবে।
* কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির আগে প্রবেশিকা পরীক্ষা, এসএটি পরীক্ষা বা অনলাইন ইন্টারভিউ নেওয়া হতে পারে।
ফিনল্যান্ডের সাধারণ ভাষা ফিনিশ বা সুইডিশ হলেও এখানে ব্যাপক হারে ইংরেজিতে যোগাযোগের প্রচলন রয়েছে। অধিকাংশ ফিনিশরাই, বিশেষ করে তরুণেরা খুব ভালো ইংরেজি বলতে পারেন। তাই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আলাদা করে স্থানীয় ভাষা জানার দরকার পড়ে না। ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য সাধারণত আইইএলটিএস বা টোয়েফলের ফলাফলকে বেশি মূল্যায়ন করা হয়।
চাহিদা সম্পন্ন কোর্সের তালিকা
* আলটো ইউনিভার্সিটি
* ইউনিভার্সিটি অব হেলসিঙ্কি
* ইউনিভার্সিটি অব অউলু
* ইউনিভার্সিটি অব তুর্কু
* ল্যাপেনরান্ত ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি
* লুট ইউনিভার্সিটি
* ট্যাম্পেরে ইউনিভার্সিটি
* ইউনিভার্সিটি অব জিভাস্কিলা
* ইউনিভার্সিটি অব ইস্টার্ন ফিনল্যান্ড
* অ্যাবো একাডেমি ইউনিভার্সিটি
* ইউনিভার্সিটি অব ভাসা
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নের সেরা বিষয়গুলো
* কম্পিউটার সায়েন্স ও আইটি
* ব্যবসায় প্রশাসন
* সাসটেইনেবল ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি
* রিনিউয়েবল এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং
* আর্লি চাইল্ডহুড এডুকেশন অ্যান্ড কেয়ার
* ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট
* ডিজাইন ও মিডিয়া
ফিনল্যান্ডে আবেদনের উপায়
সাধারণত দুটি মৌসুমে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেয় দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অটাম সেমিস্টারের ভর্তি শুরু হয় আগস্ট বা সেপ্টেম্বর থেকে। স্প্রিং সেমিস্টার ভর্তি শুরু হয় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। উভয় ক্ষেত্রে ভর্তির সময়সীমা সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় মাস পর্যন্ত থাকে। মূলত তিনটি উপায়ে বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারেন, তা হলো
* ইউএএসগুলোর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে
* অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে
ইউনিভার্সিটিগুলো সাধারণত দুটি উপায়ে আবেদন গ্রহণ করে
* যৌথ আবেদন
* পৃথক আবেদন
যৌথ আবেদনে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ছয়টি প্রোগ্রামে আবেদন করা যায়। আর পৃথক আবেদনটি হচ্ছে চিরাচরিত পদ্ধতি, যেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে শুধু একটি প্রোগ্রামে আবেদনের সুযোগ থাকে।
ভর্তিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
* সম্পূর্ণরূপে পূরণ করা আবেদনপত্র।
* একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও ডিপ্লোমার প্রত্যায়িত কপি।
* ইংরেজি ভাষা দক্ষতার প্রমাণ (আইইএলটিএস বা টোয়েফল)।
* পাসপোর্টের কপি।
ইউএএসে আবেদনের ক্ষেত্রে
* কর্মসংস্থানের প্রমাণপত্র।
* প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থার আবেদন।
* মাস্টার্স বা ডক্টরাল প্রোগ্রামের জন্য।
* সিভি।
* মোটিভেশন লেটার বা পার্সোনাল স্টেটমেন্ট।
* রেফারেন্স লেটার (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
* প্রকাশনা (ডক্টরেটের ক্ষেত্রে)।
* ইংরেজি ভাষা দক্ষতা সনদ ও পাসপোর্ট ছাড়া বাকি সব নথি যদি বাংলায় হয়, তাহলে সেগুলোর অফিশিয়াল অনূদিত সংস্করণ সংযুক্ত করতে হবে।
শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আবেদন
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রথমে ৯০ দিনের অধিক সময় ফিনল্যান্ডে থাকার জন্য প্রদান করা আবাসিক অনুমোদনের আবেদন করতে হয়। এতে অধ্যয়নের পুরোটা সময় দেশটিতে থাকাসহ খণ্ডকালীন চাকরির অনুমতি পাওয়া যায়। স্নাতকোত্তর অধ্যয়নের জন্য ফিনল্যান্ডে আসতে হলে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য আবাসিক অনুমোদন নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে দুই বছর পর্যন্ত বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়।
আবাসিক অনুমোদন পাওয়ার সাপেক্ষে ডি–টাইপ ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। এই ভিসা শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে ফিনল্যান্ডে প্রবেশের অনুমতি দেয়। আবাসিক অনুমতি মঞ্জুর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই ভিসার আবেদন শুরু করা উচিত। এতে পারমিট ইস্যু হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে ফিনল্যান্ড প্রবেশ করে সেখান থেকে বসবাসের অনুমতিপত্র সংগ্রহ করা যায়। অবশ্য ডি–টাইপ ভিসাসহ বসবাসের অনুমতি নিয়ে ফিনল্যান্ডে প্রবেশের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ দিন মেয়াদ থাকে।
আবাসিক অনুমোদনের জন্য সরাসরি এন্টার ফিনল্যান্ডের ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরির মাধ্যমে অনলাইন আবেদন করা যাবে। অনলাইনে জমা দেওয়ার পর পূরণ করা ফরম ডাউনলোড ও প্রিন্ট করে হাতে স্বাক্ষর করতে হবে। অতঃপর ভিসার অন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঙ্গে একত্র করে দূতাবাসে জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে।
ভিসার আবেদনের জন্য যে যে কাগজপত্র প্রয়োজন
অনলাইন আবেদন ফরম পূরণসহ দূতাবাসে জমা দিতে যেসব নথি প্রস্তুত করা প্রয়োজন, সেগুলো হলো
* ফিনিশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তির অফার লেটার।
* বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে দুটি খালি পৃষ্ঠা এবং ফিনল্যান্ডে পৌঁছার দিন থেকে অতিরিক্ত ছয় মাস পর্যন্ত মেয়াদ সম্পন্ন)।
* আয়ের প্রমাণপত্র (চাকরির সনদ)।
* আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ। শিক্ষাবর্ষের প্রথম বছরের আর্থিক সংকুলানের জন্য প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫৬০ ইউরো। বছরে ৬ হাজার ৭২০ ইউরোর ব্যাংক লেনদেনের বিবরণী বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রদর্শন করতে হবে।
* স্কলারশিপ বা স্পনসর পেয়ে থাকলে তার প্রমাণপত্র।
* স্বাস্থ্যবিমার প্রশংসাপত্র: অধ্যয়নের সময়সীমা ২ বছরের বেশি হলে ১ লাখ ২০ হাজার ইউরো। আর ২ বছরের কম হলে ৪০ হাজার ইউরো।
* এ ছাড়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দূতাবাস থেকে অতিরিক্ত সংযুক্তি চাওয়া হতে পারে।
দূতাবাসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং
এন্টার ফিনল্যান্ডে আবেদন সম্পন্ন করার পর প্রথম কাজ হচ্ছে ভারতে অবস্থিত ফিনল্যান্ড দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া। এর জন্য লিংকে নিবন্ধনের মাধ্যমে অনলাইন বুকিং দিতে হবে। বুকিং দেওয়ার পর নির্দিষ্ট তারিখ এবং সময়ে সাক্ষাৎকারের জন্য অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করা হয়। অতঃপর দিনক্ষণ অনুযায়ী ভিসার আবেদনের যাবতীয় কাগজপত্র মূল কপিসহ দূতাবাসে উপস্থিত হতে হয়। দূতাবাসের ঠিকানা: ই-৩, ন্যায়া মার্গ, চাণক্যপুরী, নয়াদিল্লি, দিল্লি-১১০০২১, ভারত।
দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি ফিঙ্গার প্রিন্ট, ছবি তোলাসহ প্রার্থীর বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করা হয়। সাক্ষাৎকার শেষে আবেদন ফিনিশ ইমিগ্রেশন সার্ভিসে পাঠানো হয়।
ফিনিশ অভিবাসন সার্ভিসে আবেদন যাচাইয়ের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত খামে (ডিসিশন এনভেলপ) করে দূতাবাসে পাঠানো হয়। এই সিদ্ধান্ত প্রার্থী ই-মেইল ও এন্টার ফিনল্যান্ডে তার অ্যাকাউন্ট থেকেও দেখতে পারেন। আর খামটি সংগ্রহের জন্য সশরীর দূতাবাসে উপস্থিত হতে হয়।
সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক হওয়া মানেই এবার শিগগিরই ডি–ভিসার জন্য আবেদন করার পালা। সাধারণত দুই সপ্তাহের মধ্যে ভিসা প্রস্তুত হয়ে যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
ভিসা প্রাপ্তির পর ফিনল্যান্ডে প্রবেশ করে আবাসিক অনুমোদন কার্ড সংগ্রহ করা যেতে পারে। মূলত এই অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হওয়াটা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ৬ মাস থেকে শুরু করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ৯ মাসও লেগে যেতে পারে। তবে সিদ্ধান্ত খাম প্রাপ্তির পর কার্ড তৈরি হতে সময় লাগে দুই সপ্তাহ। এই কার্ড সংগ্রহের সময় বৈধ পাসপোর্টটি অবশ্যই সঙ্গে থাকতে হবে।
ভিসা প্রক্রিয়াকরণের আনুষঙ্গিক খরচ
অনলাইনে রেসিডেন্স পারমিটের আবেদন ফি বা পারমিটের প্রক্রিয়াকরণ ফি ৩৫০ ইউরো। ডি-টাইপ ভিসার ফি ৯৫ ইউরো। দূতাবাসের তথা ভিএফএস সার্ভিস চার্জ ৭০ ইউরো। সব ফি অনলাইনে ভিসা বা মাস্টার কার্ড দিয়ে অথবা দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের সময় পরিশোধ করা যেতে পারে। অফলাইনে বা কাগুজে আবেদনের ক্ষেত্রে ফি ও প্রক্রিয়াকরণ সময় উভয়ই তুলনামূলকভাবে বেশি।
ফিনল্যান্ডে পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ
স্নাতক অধ্যয়নে প্রতি শিক্ষাবর্ষের জন্য বাজেট রাখতে হবে ৪ হাজার থেকে ১২ হাজার ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৫ লাখ ১৩ হাজার ২৮১ থেকে ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৮৪১ টাকার সমান। আর মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য খরচ হতে পারে ৮ হাজার থেকে ১৮ হাজার ইউরো (প্রায় ১০ লাখ ২৬ হাজার ৫৬১ থেকে ২৩ লাখ ৯ হাজার ৭৬১ টাকা)।
পিএইচডির ক্ষেত্রে সাধারণত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে স্পনসর করা হয়, তাই দেশি-বিদেশি সব শিক্ষার্থীর জন্য টিউশন ফ্রি থাকে। এখানে গবেষণার পাশাপাশি আবাসনের ব্যয়ভারও বহন করা হয়।
ফিনল্যান্ডে বাড়িভাড়া বাবদ খরচ হতে পারে মাসে ৩০০ থেকে ৭০০ ইউরো (প্রায় ৩৮ হাজার ৪৯৬ থেকে ৮৯ হাজার ৮২৪ টাকা)। প্রায় ৬০ শতাংশ বিদেশি ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নকালে বিভিন্ন শহরের ছাত্রাবাসগুলোতে বসবাস করেন। ডর্ম নামের এই আবাসনগুলোর মাসিক ভাড়া ২৪০ থেকে ৪২০ ইউরো (প্রায় ৩০ হাজার ৭৯৭ থেকে ৫৩ হাজার ৮৯৫ টাকা) পর্যন্ত।
নিত্যদিনের খাবারের জন্য সাধারণত প্রতি মাসে ১৮০ থেকে ২৪০ ইউরো (প্রায় ২৩ হাজার ৯৮ থেকে ৩০ হাজার ৭৯৭ টাকা) খরচ করে থাকে। প্রতি মাসে যাতায়াত বাবদ খরচ হয় ৬০ থেকে ৭৮ ইউরো (প্রায় ৭ হাজার ৭০০ থেকে ১০ হাজার ৯ টাকা)। বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা ইউটিলিটির জন্য মাসিক চার্জ ৮৪ থেকে ১২০ ইউরো (প্রায় ১০ হাজার ৭৭৯ থেকে ১৫ হাজার ৩৯৯ টাকা)।
ফিনল্যান্ডে স্কলারশিপের সুবিধা
হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামগুলোর জন্য বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি দেয়। তার মধ্যে ফিনল্যান্ড স্কলারশিপগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ এবং ৫ হাজার ইউরোর (প্রায় ৬ লাখ ৪১ হাজার ৬০০ টাকা) বার্ষিক উপবৃত্তি। উপরন্তু শিক্ষার্থীর একাডেমিক যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ থেকে শতভাগ অধ্যয়ন ফি মওকুফ করা হয়।
ট্যাম্পেরে ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি স্কলারশিপ মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য আংশিক থেকে সম্পূর্ণ টিউশন মওকুফ করে থাকে। গ্লোবাল স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ডে সম্পূর্ণ অধ্যয়ন ফ্রিসহ ৭ হাজার ইউরো (প্রায় ৮ লাখ ৯৮ হাজার ২৪১ টাকা) বার্ষিক উপবৃত্তি পাওয়া যায়।
ডক্টরাল অধ্যয়নের সম্পূর্ণ খরচ বহনসহ মাসিক উপবৃত্তি দেয় ইউনিভার্সিটি অব ইস্টার্ন ফিনল্যান্ড ডক্টরাল স্কলারশিপ। আলটো ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপের আওতায় একাডেমিক যোগ্যতার ভিত্তিতে মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে অধ্যয়নের সুযোগ।
ইরাসমাস মুন্ডাস জয়েন্ট মাস্টার্স ডিগ্রি স্কলারশিপ যৌথ ডিগ্রি প্রোগ্রামে টিউশন, জীবনযাত্রার খরচ ও ভ্রমণের খরচ বহন করে।
আছে খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ
ফিনল্যান্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৩০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি পান। এ ছাড়া গ্রীষ্মে ছুটির সময় কর্মঘণ্টার ওপর কোনো সীমারেখা থাকে না। কাজের প্রকৃতি ও খাত অনুসারে এই খণ্ডকালীন চাকরি থেকে আয় হয়ে থাকে ঘণ্টা প্রতি ৯ থেকে ১৩ ইউরো।
অধ্যয়ন শেষে চাকরি লাভ ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ
স্নাতক শেষের পর চাকরি খোঁজা বা ব্যবসা শুরুর জন্য অতিরিক্ত দুই বছরের ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করা যায়। মূলত ফিনল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য অধ্যয়নের সময়কালসহ দেশটিতে কমপক্ষে একটানা চার বছর থাকতে হয়। এর মাঝে কখনো সর্বোচ্চ তিন মাসের বেশি দেশের বাইরে থাকা যাবে না। দেশটির উচ্চমানের জীবনযাত্রার জন্য সেখানে কাজের সুযোগটি কেবল আকর্ষণীয়ই নয়, বরং পর্যাপ্ত ভ্যাকেন্সি থাকায় মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য তা বেশ সহজসাধ্যও বটে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়েই কাজের সুযোগ করে নিতে পারেন। এ ছাড়া ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব ও সাবলীল থাকায় আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের জন্য চাকরি পাওয়ার বিষয়টি আরও সহজ করে তোলে। তথ্যসূত্র: ইউএনবি