জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছ থেকে কোটি টাকা পাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে স্বীকার করার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করেছেন শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। এদিকে উপাচার্য বিরোধী এক সহ-উপাচার্যসহ ছয় শিক্ষক ও তিন ছাত্রলীগ নেতার মুঠোফোন সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার রাত সোয়া নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের অতিথি কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান সাদ্দাম হোসেন।
গত রোববার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বাদ পড়া সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের মুঠোফোনে কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ৬ মিনিট ১০ সেকেন্ডের অডিওতে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম উপস্থিত থেকে ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে এক কোটি টাকা ভাগ করে দিয়েছেন বলে রাব্বানীকে জানান সাদ্দাম। সেই ভাগ থেকে ২৫ লাখ টাকা পেয়েছেন সাদ্দাম ও তাঁর অনুসারীরা।
পরদিন সোমবার গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে টাকার ভাগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন সাদ্দাম হোসেন ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নিয়ামুল হোসেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা সাংবাদিকদের বলেন, এসব অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সংবাদ সম্মেলনে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে উপাচার্যের বাসভবনে কোটি টাকা বাঁটোয়ারার বিষয়টি বলার পর থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন মহল আমাকে হুমকি দিচ্ছে। মোবাইলে পরিচয় না দিয়ে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।’
সাদ্দাম আরও বলেন, ‘হঠাৎ করে আমাদের তিনজনের (শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নিয়ামুল হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম মোল্লা) মোবাইলের ইনকামিং ও আউটগোয়িং সেবা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কাস্টমার কেয়ারে ফোন দেওয়ার পর তাঁরা বলছেন, নম্বর আপাতত বন্ধ আছে। কিন্তু কেন বন্ধ আছে সেটি তাঁরা বলছেন না। আমরা মনে করি, এটি আমাদের চাপে ফেলার পাঁয়তারা।’
ছয় শিক্ষকেরও মুঠোফোন সুবিধা বন্ধ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহ-উপাচার্যসহ ছয় শিক্ষক ও তিনজন ছাত্রলীগ নেতার মুঠোফোন সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁদের ফোনে কল আসা যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে বলে তারা জানিয়েছেন।
শিক্ষকেরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের শিক্ষক লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক রায়হান রাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, একই বিভাগের অধ্যাপক তারেক রেজা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন।
এই ছয়জনের মধ্যে আমির হোসেন উপাচার্য বিরোধী, আর পাঁচজন শিক্ষক চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
মুঠোফোন সুবিধা সন্ধ্যা থেকে বন্ধ জানিয়ে অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, ‘একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে মানুষের যোগাযোগকে রুদ্ধ করাটা অন্যায়। এটা রাষ্ট্র তখন করতে পারে যদি রাষ্ট্রবিরোধী কিছু করা হয়। কিন্তু যারা একটা অনিয়মের তদন্ত চাচ্ছে তাদের প্রতি এই ধরনের আচরণ সভ্য দেশে কাম্য হতে পারে না।’
অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘আমার ফোনটি লক অবস্থায় আছে। বুঝতে পারছি না কেন এমন হচ্ছে। আমাকে সাঈদ ফেরদৌস ফেসবুকে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়েছেন আমার ফোনে কল ঢুকছে না। পরে বিষয়টি খেয়াল করি।’
প্রথম আলোর বার্তা কক্ষ থেকে মুঠোফোন নম্বর দিয়ে রাত ১১টা ২৪ মিনিটে ফোন করা হয় রায়হান রাইনকে। তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর এই কারও ফোন ঢুকল। তবে অধ্যাপক আমির হোসেন ও শামীমা সুলতানার মুঠোফোন নম্বরে ফোন করা হলে তাতে সাড়া মেলেনি। তাদের নম্বরগুলো বন্ধ দেখায়।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়েছে। দুটি কারণে এসব কাজ ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত, ‘পূর্ণাঙ্গ মহাপরিকল্পনা’ ছাড়াই এসব উন্নয়নকাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অভিযোগ করেছে। দ্বিতীয়ত, উপাচার্য ফারজানা ইসলামের মধ্যস্থতায় ছাত্রলীগের নেতাদের বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়া সংক্রান্ত আরেকটি অভিযোগ। এ অভিযোগ প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ আন্দোলন করতে শুরু করেন।