স্পেনের আইইএসই বিজনেস স্কুলের সুনাম বিশ্বজুড়ে। প্রতিষ্ঠানটি ছয় বছর ধরে বিজনেস এক্সিকিউটিভ প্রোগ্রামের জন্য বিশ্বের প্রথম। ২০১৮ সালে ‘ইকোনমিস্ট’-এর র্যাঙ্কিং অনুযায়ী আইইএসই ইউরোপের সেরা এবং বিশ্বের ষষ্ঠ সেরা বিজনেস স্কুল। ৬২ বছর আগে স্পেনে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে হার্ভার্ডের সহযোগী হিসেবে এমবিএ প্রোগ্রাম চালু করে। আইইএসই বিজনেস স্কুলে শিক্ষার্থী হিসেবে বাংলাদেশিদেরও পড়ার সুযোগ রয়েছে।
প্রথম বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে আইইএসই বিজনেস স্কুল থেকে সফলভাবে এমবিএ সম্পন্ন করা মেহেদি হাসান বলেন, স্পেনের এ বিজনেস স্কুলটি অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে আলাদা। হার্ভার্ডের মতোই আইইএসইর পূর্ণ এমবিএ প্রোগ্রাম হচ্ছে ৮০ শতাংশ কেস স্টাডি মেথড। সেখানে বাস্তব জীবনের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। গাড়িচালককে শুধু তাত্ত্বিক পরীক্ষায় যাচাই করা যায় না, বাস্তবে গাড়ি চালানো জানতে হয়। এখানে হাতে-কলমে সে শিক্ষাই দেওয়া হয়। তাঁকে যেমন এমবিএতে ৩৫০ কেস স্টাডি নিয়ে কাজ করতে হয়েছে, তেমনি শ্রেণিকক্ষে বিতর্ক করতে হয়েছে। নিজে বোঝার পাশাপাশি অন্যকেও বোঝাতে হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে পোশাকশিল্প থেকে বিভিন্ন খাতের কেস স্টাডি নিয়ে পড়তে হয়েছে। নিজে গিয়ে কোম্পানি দেখা, ক্লাসে উপস্থিতির মতো বিষয়গুলো মানতে হয়েছে।
আইইএসই বিজনেস স্কুলের আকর্ষণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আসেন। এখানকার ৮৫ শতাংশই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী। এর অ্যালামনাই ৫০ হাজারের বেশি। এখানে অন্যকে সাহায্য করার পাশাপাশি আরও ভালো মানুষ হয়ে ওঠার মতো নানা বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। এ শিক্ষা মানুষকে পরিবর্তন করে দেয়। এ ক্ষেত্রে ‘দ্য মোস্ট ট্রান্সফরমেড স্টুডেন্ট’ পুরস্কারও দেওয়া হয়ে থাকে।
স্পেনের বার্সেলোনা হচ্ছে আইটি হাব। এখানে অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রকৌশলী পদের জন্য লোক নিয়োগ হয়। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য স্পেনে চাকরি তুলনামূলক সহজ। যাঁরা আসতে চান, তাঁদের জন্য মেহেদির পরামর্শ হচ্ছে, আইইএলটিএস ও জিম্যাটের প্রস্তুতি নিয়ে শিক্ষার্থী ঋণ, এমবিএর ধরন, চাকরির বাজার গবেষণা করতে হবে। এর বাইরে চাকরির জন্য নিজেকে যথেষ্ট দক্ষ করে প্রস্তুত করতে হবে। ভর্তির পরিচালককে পুরো পরিস্থিতি জানানোর পাশাপাশি বিনা মূল্যের ক্লাসগুলোতে হাজির হতে হবে। ধৈর্য ধরে লেগে থাকলে সফল হওয়া সম্ভব। বিজনেস স্কুল তাদের এমবিএ শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি করে সব সময়। অধিকাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষের আগেই চাকরি পান।
দেশের কেউ যদি আইইএসইতে পড়তে চান, সে সুযোগ রয়েছে। যেকোনো শীর্ষ এমবিএ প্রোগ্রামের মতোই আইইএসইতে ভর্তির জন্য জিম্যাট এবং আইইএলটিএস বা টোফেল প্রয়োজন। জিম্যাট না থাকলে আইইএসই আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নেবে। এর বাইরে ভর্তি পরিচালকের সাক্ষাৎকারে হাজির হতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এমবিএ ও আইইএসই কেন বেছে নিতে চান, সে বিষয়ে ভালো রচনা জমা দিতে হবে। এখানে পূর্ণ কোর্সের পাশাপাশি চাকরি করে কোর্স করার সুযোগও রয়েছে। সিলেবাস থেকে শুরু করে শিক্ষক সবই এক। পূর্ণ এমবিএতে বৃত্তি বেশি। কিন্তু এতে ২ বছরের পুরো খরচ পকেট থেকে দিতে হবে। কাজের পাশাপাশি এমবিএ করতে অনেক কষ্ট। প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা কেস প্রস্তুত করতে লেগে যায়। তবে স্পেনে শিক্ষার্থীদের ঋণ সুবিধা রয়েছে। এ জন্য ২ দশমিক ৪ শতাংশ সুদ দিতে হয়। বেড়ানোর খরচ নিজেকে বহন করতে হয়। মধ্যবিত্তদের জন্য চাকরির পাশাপাশি এমবিএ করাটাই বেশি ভালো হবে।
মেহেদি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করার পর তিনি চাকরি শুরু করেন। এরপর এমবিএর জন্য স্পেনের এ বিজনেস স্কুল বেছে নেন। তিনি চাকরির পাশাপাশি এমবিএ করার সুযোগ খুঁজছিলেন। তাই বেছে নেন আইইএসই বিজনেস স্কুলকে। তাঁর জিম্যাট স্কোর ৬৯০ আর আইইএলটিএস ৭.৫ ছিল। তাই যাঁরা দেশের বাইরে এমবিএ করার পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জন্য ম্যাট স্কোর আর আইইএলটিএসে ভালো করতে হবে।