স্কুলে ফিরছে শিশুরা, কীভাবে সন্তানকে সহযোগিতা, তা জানাল ইউনিসেফ

করোনার সংক্রমণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গত রোববার এই ঘোষণার সময় বলা হয়, চলতি এবং আগামী বছরের এসএসসি, এইচএসসি ও প্রাথমিক সমাপনীর পরীক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে। এ সময়ে আবার বাইরের জগতের সঙ্গে কীভাবে মা–বাবা সন্তানকে সহযোগিতা করতে পারেন, তার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ।
কোভিড মহামারির সময়ে কঠোর বিধিনিষেধ, স্কুল বন্ধ থাকা এবং বাড়ি থেকে কাজ করার কারণে অনেকের পারিবারিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

দিনের বেলা অনেক শিশু তাদের মা–বাবা বা পরিচর্যাকারীর সঙ্গে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। আপনি কোথায় থাকেন, তার ওপর নির্ভর করে পরিস্থিতির অনেক সময় ব্যাপক হেরফের হয়। ডে–কেয়ার কেন্দ্র, স্কুল ও অফিস পুনরায় চালু হওয়ার সঙ্গে সমন্বয় করে আপনার পরিবার যদি দৈনন্দিন রুটিনে পরিবর্তন আনার প্রস্তুতি নেয়, সে ক্ষেত্রে আপনার সন্তানকে মানিয়ে নিতে সহায়তা করার জন্য এখানে কিছু পরামর্শ দিয়েছে ইউনিসেফ।

বিচ্ছেদের ফলে সৃষ্ট উদ্বেগ আসলে কেমন?

যখন আপনি আপনার সন্তানকে ছেড়ে কোথাও চলে যান (এমনকি অল্প সময়ের জন্য) অথবা যখন তারা নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তখন বিচ্ছেদ থেকে সৃষ্ট উদ্বেগের ফলে তারা কান্নাকাটি কিংবা আরও জোরালো কিছু লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে। এটি আপনার সন্তানের ৬ মাস থেকে ৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটে এবং তার বিকাশের ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ বিষয়। কোভিড মহামারিজনিত চাপ ও অনিশ্চয়তার ফলে এ ধরনের আচরণগত পরিবর্তন কখনো কখনো অপেক্ষাকৃত বয়স্ক শিশুদের ক্ষেত্রেও দেখা যেতে পারে।
শিশুদের ডে-কেয়ার বা স্কুলে ছেড়ে আসার সময়টা তাদের জন্য বিচ্ছেদের ফলে সৃষ্ট উদ্বেগ দেখা দেওয়ার একটি সাধারণ সময়। বিগত বছরের ঘটনাগুলোর কারণে এরূপ আশঙ্কা রয়েছে যে কোভিডের কারণে অপেক্ষাকৃত বয়স্ক শিশুরা নিরাপদ না–ও থাকতে পারে। এ কারণে স্কুল শুরু করার সময়টি তাদের জন্য আরও কঠিন হতে পারে। কারণ, তারা সংক্রমণের ভয় পেতে পারে।

পুরোনো রুটিনে ফিরে যাওয়া নিরাপদ, এ রকম আস্থা তৈরি করতে সন্তানদের কীভাবে সাহায্য করবেন

আপনার সন্তানকে স্কুলে ফিরে যেতে সাহায্য করা এবং আপনার কাজে ফিরে যাওয়া, বিষয় দুটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যার জন্য সময় ও পরিকল্পনার দরকার। এ বিচ্ছেদকে আপনার সন্তানের জন্য সহজ করতে এসব টিপসের কয়েকটি চেষ্টা করুন—
আপনার সন্তানের কথা শুনুন
তাদের উদ্বেগকে গুরুত্ব দিন এবং সমস্যাগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলুন। ফিরে যাওয়াটা কেমন হবে, শিশুদের সঙ্গে আপনি এ–সম্পর্কিত নাটকের অবতারণা করে তা অভিনয় করে দেখাতে পারেন। আবার তাদের ফিরে যাওয়ার ধাপগুলো নিয়ে ছবি আঁকতে বলা যেতে পারে। এর মধ্যে কেউ একজন থাকবে যে তাদের সেই সময় (করোনাকালে ঘরে থাকার সময়) ফিরিয়ে আনবে।

প্রস্তুতি নিতে তাদের সহায়তা করুন

স্কুলে ফেরার নতুন নিয়মগুলো শিখুন এবং আপনার সন্তানের সঙ্গে সেগুলো অনুশীলন করুন। স্কুলে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে তারা কেমন অনুভব করে, সে বিষয়ে আপনার সন্তানকে জিজ্ঞাসা করুন। এ ছাড়া যদি তাদের কোনো বিশেষ উদ্বেগের কারণ থাকে, তবে তাদের শিক্ষককে আপনি বিষয়টি অবহিত করুন।
শান্ত থাকুন
মনে রাখবেন, প্রাপ্তবয়স্কদের আচরণের দ্বারা শিশুরা প্রভাবিত হয়। আপনার সন্তানকে স্বস্তিতে থাকতে এবং নিরাপদ বোধ করতে সহায়তা করার জন্য নিজে শান্ত আচরণের অনুশীলন করা গুরুত্বপূর্ণ।

বহির্মুখী হওয়ার পরিকল্পনা

অপেক্ষাকৃত বয়স্ক শিশুদের বিদায় (বাইরে পড়তে পাঠানো, ছাত্রাবাসে রাখা বা আপনি নিজে চাকরি বা অন্য কারণে কোথায় গেলে) জানানো যাতে কঠিন না হয়, তা রোধ করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নিতে চেষ্টা করুন—
*বিদায় জানানোর বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করুন;
*আপনার চলে যাওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করুন;
*তাকে রেখে যাওয়ার বিষয়টির ব্যাখ্যা সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট করুন;
*আপনি তার জন্য ফিরে আসবেন, বিষয়টি আপনার সন্তানকে মনে করিয়ে দিন;
*আপনার সন্তানকে রেখে যাওয়ার সময় কোনো রকম দ্বিধা করবেন না;
নির্দিষ্ট সময়ের আগে ফিরে আসবেন না
প্রতিবার যখন আপনি আপনার সন্তানকে ছেড়ে চলে যাবেন বা তাকে নামিয়ে দেবেন, তখন একই রুটিন অনুসরণ করুন।

সন্তান স্কুলে ফিরে যেতে ভয় পায়। স্বাচ্ছন্দ্য বোধ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যে সহায়তা করতে পারেন

কয়েক মাস ধরে বাড়িতে পড়াশোনা করছে, এমন শিশুরা স্কুলে ফিরতে ভীতি বোধ করতে পারে বা অনিচ্ছুক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্কুলে যেসব পরিবর্তন আশা করতে পারেন, আপনার শিশুকে তার মধ্য দিয়ে নিয়ে যেতে পারেন বিশ্বস্ততার সঙ্গে। তাদের এবং অন্যদের নিরাপদ রাখতে সহায়তা করতে যেসব সুরক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে তাদের আশ্বস্ত করুন।

সন্তানকে ভরসা দিন যে তারা ধীরে ধীরে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে। তাদের এখনই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে না। বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে তাদের সময় লাগতে পারে। এ ছাড়া এটিই স্বাভাবিক।

অন্যদের অসুবিধা না করে সন্তান কেমন করছে, বিষয়টি কীভাবে যাচাই করবেন
সক্রিয়, কিন্তু শান্ত থাকুন। শিশুরা প্রায়ই তাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ এমন প্রাপ্তবয়স্কদের কাছ থেকে মানসিক সংকেত গ্রহণ করে। তাই সন্তানের উদ্বেগগুলো শোনা, সন্তানের সঙ্গে কথা বলা এবং তাদের আশ্বস্ত করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে যে তাদের আবেগের পরিবর্তন হতে পারে এবং এ রকম পরিবর্তন যে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, তা তাদের অবহিত করুন।

কীভাবে বহির্জগতে অনুপ্রবেশ করতে হবে, তার অনেকটাই আপনার সন্তানের ওপর নির্ভর করে। যদি সন্তান সবকিছু নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখে, তবে আপনি তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে ‘তুমি এখন কেমন আছো?’ অন্যান্য শিশু তাদের অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে বেশি স্পষ্ট হতে পারে। আপনি আপনার সন্তানকে ভালোভাবে জানেন এবং তাদের কথাবার্তাকে মমতা ও বিবেচনার সঙ্গে দেখাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।