যৌথভাবে লেখা ৬টি একাডেমিক গবেষণা-নিবন্ধে ৬০-৮০ শতাংশ করে চৌর্যবৃত্তি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান এবং অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান৷ দীর্ঘ তদন্তের পর কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এবার তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷
সামিয়া ও মারজানের এই একাডেমিক অপরাধের শাস্তির মাত্রা নির্ধারণের লক্ষ্যে গতকাল বুধবার প্রশাসনিক একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট৷ সিন্ডিকেটের গতকালের সভায় এই দুই গবেষকের গবেষণা নিয়ে ওঠা অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটি প্রতিবেদন উত্থাপন করে।
সিন্ডিকেটের গতকালের সভায় উপস্থিত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির তদন্তে সামিয়া ও মারজানের গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে কোনো শাস্তির সুপারিশ করা হয়নি৷ তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী এ এফ এম মেজবাহ উদ্দীনকে প্রতিবেদনটি দেওয়া হয় সুপারিশের জন্য৷ পরে বুধবার তিনি তা সিন্ডিকেটে নিয়ে আসেন৷ এরপর সিন্ডিকেট ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়৷
ট্রাইব্যুনাল গঠনের কারণ হিসেবে অধ্যাপক সামাদ বলেন, এটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদালতে গিয়ে অনেক মামলায় হেরে যাওয়ার অন্যতম কারণ ট্রাইব্যুনালসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সব প্রক্রিয়া অনুসরণ না করা৷ তাই ট্রাইব্যুনালে শাস্তির মাত্রা নির্ধারণের জন্য পাঠানো হয়েছে৷
সামিয়া ও মারজান ২০১৭ সালে 'এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্টাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম' শীর্ষক যৌথ নিবন্ধে ফিলিস্তিনী বংশোদ্ভূত আমেরিকান বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের 'কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম' গ্রন্থের পাতার পর পাতা হুবহু কপি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে সে বছরের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি করে৷
সামিয়া-মারজানের গবেষণায় নিয়ে ওঠা অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্য ছিলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম৷ তিনি প্রথম আলোকে জানান, অভিযোগ ওঠা নিবন্ধটিসহ সামিয়া-মারজানের যৌথভাবে লেখা মোট ৬টি নিবন্ধ আমরা পর্যালোচনা করেছি৷ প্রতিটি নিবন্ধে ৬০-৮০ শতাংশ করে চৌর্যবৃত্তি করা হয়েছে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নিজস্ব জার্নাল সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউয়ে সামিয়া ও মারজানের নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল৷ জার্নালটির সম্পাদক ছিলেন অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ৷ তিনি বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন৷
সামিয়া-মারজানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে ২০১৭ সালে গঠিত কমিটির প্রধান ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ৷ নিজের অসুস্থতার কারণে তদন্তে সময় বেশি লেগেছে বলে জানালেন তিনি৷ এই জ্যেষ্ঠ শিক্ষক প্রথম আলোকে বললেন, 'সামিয়া-মারজান পাতার পর পাতা নকল করেছেন৷ গবেষণা-নিবন্ধে অন্যের থেকে ধার আমরা নিতেই পারি, কিন্তু তার একটা পদ্ধতি আছে৷ সেই পদ্ধতি অনুসরণ না করে তাঁরা হুবহু কপি করেছেন৷ তাঁরা অনেকখানি চৌর্যবৃত্তি করেছেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি শনাক্তের সফটওয়্যারটি আমরা কাজে লাগিয়েছি৷ জানি না, এমন বোকার মতো কাজ তাঁরা কেন করলেন? এই ধরনের ঘটনার তদন্ত নিয়ে অনেক ঘটনাই ঘটে৷ আমরা সতর্ক না হলে চৌর্যবৃত্তি আরও ঘটবে৷'
এ বিষয়ে সামিয়া রহমান ও সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷ সামিয়া রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। আর মাহফুজুল হক মারজান উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি৷