ক্যাম্পাস : আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি–বাংলাদেশ

শেখা ও জানানোর বিশাল ক্যাম্পাস

গোলাকার এই লাইব্রেরি ভবনটি এআইইউবির ক্যাম্পাসের বড় আকর্ষণ। ছবি: খালেদ সরকার
গোলাকার এই লাইব্রেরি ভবনটি এআইইউবির ক্যাম্পাসের বড় আকর্ষণ। ছবি: খালেদ সরকার

বাংলাদেশের মানচিত্র নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন কজন শিক্ষার্থী। কাছে গিয়ে জানতে চাই, কী হচ্ছে? শিক্ষার্থীদের একজন নুসরাত জাহানের উত্তর, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে একটি পোস্টার তৈরি করছি আমরা। যেখানে থ্রিডি উপস্থাপনার মাধ্যমে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা আমরা প্রকাশ করব। এর পাশাপাশি যাঁরা দেখতে পান না, তাঁদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে পোস্টারের মাধ্যমে ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করছি আমরা।’

এক পোস্টারে এত কিছু! দেখার লোভ সামলানো গেল না। নুসরাত ও তাঁর বন্ধু সায়েম, সঞ্চয় কয়েক দিন ধরে ক্লাসরুমের পড়ার বাইরে অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে পোস্টার নির্মাণে বেশ সময় দিচ্ছেন। ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক করছেন এই শিক্ষার্থীরা, কিন্তু ব্যবসার বাইরে বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতির পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাসহ তৃতীয় ভাষা শেখানো হয় নুসরাতদের। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি– বাংলাদেশের (এআইইউবি) পড়াশোনার পরিবেশ এমনই। ক্লাসরুমে যেমন চলে সিলেবাসের পড়াশোনা, তেমনি ক্লাসরুমের বাইরে চলে আগামীর জন্য তৈরি হওয়ার প্রস্তুতি।

প্রশান্তির প্রাঙ্গণ

এআইইউবির বিশাল ক্যাম্পাসে পা রাখলে বেশ খোলামেলা একটা পরিবেশের দেখা মেলে। প্রবেশপথের পাশেই চোখে পড়ে বিশাল এক খেলার মাঠ। যেখানে সকাল–সন্ধ্যা ফুটবল আর বাস্কেটবল নিয়ে অনুশীলনে ব্যস্ত থাকেন অনেক শিক্ষার্থী। কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অনেক তারকা ক্রিকেটারই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী। মাঠ পেরিয়ে একটু দূরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিন। ক্যানটিনের দরজা খুললেই আপনার কানে আসবে তুমুল আড্ডা কিংবা গিটারের টুংটাং শব্দ। পড়াশোনা ও খেলাধুলার মধ্যের সময়টায় শিক্ষার্থীদের জম্পেশ আড্ডা জমে এখানে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়েই সবুজের একটা চাদর আছে বলে যেখানেই ছায়া, সেখানেই জমে যায় আড্ডা। আড্ডার বিষয় কখনো খেলাধুলা, ক্যারিয়ার; কখনো সৌরশক্তিচালিত গাড়ি তৈরির কৌশল কিংবা নতুন কোনো ড্রোন-রোবটের মাধ্যমে ত্রাণ কিংবা ওষুধ পরিবহনের ভাবনা...

শেখা-পড়ার যত আয়োজন

এআইইউবিতে ব্যবহারিক শিক্ষার দিকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। মিডিয়া ও গণমাধ্যম বিষয়ে পড়ুয়া একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রতি মাসেই কোনো না কোনো গণমাধ্যমের অফিসে হাজির হতে হয় তাঁদের। ক্লাসরুমে যা সকালে শেখানো হয়, কখনো কখনো বিকেলেই নাকি আবার হাতে–কলমে দেখা ও চর্চার সুযোগ পান তাঁরা। এআইইউবির শিক্ষার্থী অনুপম দাস, অভি ইসলাম ও আইনুলের কাছ থেকে এমন অভিজ্ঞতার কথাই শোনা হলো। অনুপম জানালেন, ‘আমাদের শিক্ষকেরা ভীষণ আন্তরিক। ক্লাসরুমের পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণা, ইন্টার্নশিপ ও ইন্ডাস্ট্রি ট্যুরের সুযোগ পাই আমরা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায়ে প্রশাসন, প্রকৌশল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদে প্রায় ৩২টি বিষয়ে সাড়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থী বর্তমানে পড়ছেন। প্রায় ৪০০ জন শিক্ষক পড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নানা ধরনের প্রণোদনা ও বৃত্তি প্রদান করছে। ভালো পড়াশোনার জন্য যেমন বৃত্তি পান শিক্ষার্থীরা, তেমনি ভালো কাজের জন্য মেলে অনুপ্রেরণা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সরাসরি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলার দিকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা। ক্লাসরুমের সামনে কথা হয় মহিমা জামান, নুজাত কাশফিয়া, তাহসিন তাবাসসুম, মিম দাস, সাদিয়া ইসলামের সঙ্গে। মিম বলেন, ‘আমাদের এখানে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কটা দারুণ। আমরা শিক্ষার্থীরা সব সমস্যার জন্য উপাচার্যসহ সব শিক্ষকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পাই। তাঁরাও যথাসম্ভব সাহায্য করেন।’

আধুনিক ক্যাম্পাস

বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কী? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে এআইইউবির শিক্ষার্থী অভি ইসলাম, করবি কায়সার ও নোমান আহমেদ আমাদের নিয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে। বিশাল এক গোলকের মধ্যে আধুনিক মানের এই লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয়েছে। দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বুঝি আস্ত একটা বিশ্ব স্থির হয়ে আছে। বিশাল লাইব্রেরিটি ঘুরে দেখতে আমাদের সাহায্য করেন অভি। সারি সারি টেবিলে নিমগ্নভাবে পড়তে দেখা গেল একদল শিক্ষার্থীকে।

ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হচ্ছেন এই তরুণেরা

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি–বাংলাদেশের প্রাক্তনীরা দেশের বিভিন্ন বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে যেমন কর্মরত আছেন, তেমনি গুগল, অ্যামাজন মাইক্রোসফটসহ বিশ্বে খ্যাতনামা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও কাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক আড্ডায় কথা হয় তাসফিক জামান, সুলতানা মারিয়ম ও রকিবুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁরা জানান, ‘আমরা আমাদের সিনিয়রদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাই। তাঁদের দেখে মনে হয়, যেহেতু একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, হয়তো আমরাও তাঁদের অবস্থানে পৌঁছাতে পারব। সিনিয়র ভাইয়া-আপুরা তাঁদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাসে আসেন। এটাও খুব কাজে লাগে।’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও এআইইউবির শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সাফল্যের খোঁজ পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা সম্মেলনসহ বেশ বড় মানের কয়েকটি সম্মেলন নিয়মিত আয়োজন করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

ক্লাব কথন

এআইইউবির শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্লাব কার্যক্রমে যুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাবের মধ্যে পারফরর্মিং আর্টস ক্লাব, ফটোগ্রাফি ক্লাব, বিজনেস ক্লাবসহ অনেক ক্লাব বেশ সক্রিয়। কথা হয় ফটোগ্রাফি ক্লাবের স্বরনিমা গুপ্তা, অর্পণ চৌধুরী, ইমরান হোসেন ও ভিক্টরের সঙ্গে। স্বরনিমা বলেন, ‘ছবি তোলা নিয়ে সারা বছরই বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকি আমরা। পরীক্ষার একটু বেশি চাপ থাকলেও ক্লাবের কাজগুলো আমাদের মন ভালো রাখে।’ পড়ার বাইরে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের সামাজিক কাজে যুক্ত থাকার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে জানার সুযোগ পাচ্ছেন বলে জানালেন দুই শিক্ষার্থী নূর জাকিয়া ও সুমাইয়া বিনতে সাইফ।

প্রকৌশল অনুষদের তিন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যস্ততা চোখে পড়ল। ক্লাসরুমের পড়াশোনা আর ল্যাবের গবেষণা নিয়ে সবাই বেশ ব্যস্ত। প্রতি মাসেই রোবটিকস, প্রোগ্রামিং কিংবা প্রজেক্ট তৈরির কোনো না কোনো কাজ থাকে। এক আড্ডায় দেখা হলো কম্পিউটার ক্লাবের সিফাত শাহরিয়ার, সাফির, আবিদ, মেহদী ও ফারিয়া তাসনিমের সঙ্গে। সিফাত বললেন, ‘ফল সেমিস্টারে আমাদের প্রতিবছর প্রজেক্ট তৈরি করতে হয়। প্রায় সারা বছরই আমরা ব্যস্ত থাকি প্রজেক্ট আর হ্যাকাথনের মতো প্রতিযোগিতা নিয়ে।’

>
ড. কারমেন জেড ল্যামাগনা
শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশে গুরুত্ব দিচ্ছি
ড. কারমেন জেড ল্যামাগনা
উপাচার্য, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি–বাংলাদেশ
আমি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে ভীষণ আশাবাদী, তারা দারুণ মেধাবী ও সৃজনশীল। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তরুণ শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তিক ও পেশাগত দক্ষতা বিকাশে ২৫ বছর আগে যাত্রা শুরু করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি। আমরা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের দিকটি যেমন ভীষণভাবে গুরুত্ব দিই, তেমনি তারা যেন ভবিষ্যতের দক্ষতাগুলো অর্জন করতে পারে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখি। প্রতিনিয়তই আমরা আমাদের পাঠ্যক্রমকে সমৃদ্ধ করছি। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণার দারুণ একটি পরিবেশ তৈরি করার জন্য সব রকম চেষ্টা করছি আমরা। আমাদের একটি বিশাল রঙিন ক্যাম্পাস আছে। যে ক্যাম্পাসটি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও মনন বিকাশে সহায়ক। আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে যেমন শিক্ষার দিকে গুরুত্ব দিই, তেমনি খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমেও উৎসাহ দিই। শিক্ষার্থীদের ভেতর প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা তৈরির জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সব সময় অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষকেরা প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের ব্যক্তি মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।