সারাক্ষণ বাসায় থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের মানসিক অবসাদ দেখা দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ভবিষ্যতের জন্য করণীয় কী, তা নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞ রাশেদা কে চৌধূরীর সঙ্গে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রেও বড় ধরনের আঘাত এসেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সংগত ও যৌক্তিক কারণেই বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে টেলিভিশন, অনলাইন, বেতার ও মুঠোফোনের মাধ্যমে সরকার পড়াশোনা চালু রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এসব প্রক্রিয়া চালু রাখার পরও সব শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানো যায়নি।
কীভাবে শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে সব উন্নয়নশীল দেশই হিমশিম খাচ্ছে। এটি আমাদের জন্যও বিরাট চ্যালেঞ্জ। আমাদের এখানে মূল্যায়ন হয় শ্রেণিকক্ষে, বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় এবং জাতীয় কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে। কিন্তু করোনার কারণে সব থমকে গেছে। যারা বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়, এমন পরিস্থিতিতে তাদের কীভাবে ধরে রাখা যাবে, এটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। মনে রাখতে হবে, এ ধরনের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অনলাইন বা টেলিভিশনে প্রচারিত শিক্ষার কোনো মাধ্যমেই যুক্ত হতে পারেনি।
সরকার বিদ্যালয় খোলার ক্ষেত্রে ধীরগতিতে এগোচ্ছে, এটি যুক্তিসংগত। কিন্তু যখন পরিবেশ অনুকূল হবে, তখন বিদ্যালয় খুললে প্রথমত সব শিক্ষার্থীকে ফেরত পাওয়া যাবে কি না, এটি একটি বড় প্রশ্ন। দ্বিতীয়ত, যারা কোনো মাধ্যমেই যুক্ত হতে পারেনি, তাদের ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে? করোনা–পরবর্তী পুনরুদ্ধার কর্মসূচির যে কথা সরকার বলছে, তা বাস্তবায়নের জন্য তিনটি বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। প্রথমত, করোনার সময়ে যারা শিক্ষার কোনো মাধ্যমেই যুক্ত হতে পারেনি, তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে হবে। এসব শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে আস্থা আনতে হবে।
দ্বিতীয়ত, এখন থেকেই শিক্ষকদের প্রস্তুত করতে হবে। নতুন করে শিক্ষকও লাগবে। আর এসবের জন্য লাগবে বিনিয়োগ।
তৃতীয়ত, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনা ও তাদের সহায়তার জন্য তহবিল থাকতে হবে। সে জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে প্রণোদনা প্যাকেজ দরকার। একই সঙ্গে এর যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কি না, সে জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সব ক্ষেত্রেই ক্ষতি হয়তো একদিন পুষিয়ে নেওয়া যাবে, কিন্তু শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে না পারলে অন্য ক্ষতি পুষিয়েও লাভ হবে না।
রাশেদা কে চৌধূরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা