চৈত্রের প্রথম সকাল। রোদ্রের দাবদাহ তখনো শুরু হয়নি। সকালের আলো ফুটতেই বিদ্যালয়ের মাঠে জড়ো হচ্ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। মাঠে ঘুরছিলেন শরিফুল হাসান (৫২)। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মুক্তিযোদ্ধা বাবা আজমল হক বিশ্বাস (৭৬) এবং ছোট ছেলে ইমতিয়াজ হাসান (১৯)। একই পরিবারের এই তিন প্রজন্ম এসেছেন বিদ্যালয়ের শত বছর পূর্তি উৎসবে।
শুধু শরিফুল হাসানই নন, তাঁর মতো প্রায় তিন হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মিলনমেলা বসেছে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সরকারি সাঁড়া মাড়োয়ারী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে। প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে দুই দিনব্যাপী এ মিলন উৎসব।
গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় বিদ্যালয় মাঠ থেকে বের হয় একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এতে অংশ নেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা। শোভাযাত্রাটি ঈশ্বরদী শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে আবার মাঠে এসে শেষ হয়। বাঁশি, ভেঁপু, ভুভুজেলার শব্দ আর অংশগ্রহণকারীদের উল্লাসে মুখরিত হয়ে ওঠে ঈশ্বরদী শহর। শোভাযাত্রা শেষে বিদ্যায় চত্বরে ফিরে এসে আনন্দ, ভালোবাসায় একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে বিদ্যালয়ের স্মৃতিবিজড়িত মসজিদ প্রাঙ্গণে জুমার নামাজ শেষে বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় উৎসবের প্রথম দিনের প্রথম পর্ব।
দুপুরের বিরতির পর পূর্তি উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পাবনা-৪ আসনের সাংসদ শামসুর রহমান শরীফ। শতবর্ষপূর্তি উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক শিক্ষক আবদুর রহিমের সভাপাতিত্বে বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অধ্যক্ষ আয়নুল ইসলাম, প্রাক্তন ছাত্র ও সাবেক সাংসদ মঞ্জুর রহমান বিশ্বাস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহাম্মদ হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ। এরপর অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় মুক্ত আলোচনা। সাবেক শিক্ষক হাসান আলীর সভাপতিত্বে এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিবিএস কেব্লসের পরিচালক আশরাফ আলী খান মঞ্জু, প্রাক্তন ছাত্র ব্যারিস্টার সৈয়দ আলী প্রমুখ। এরপর বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় আতশবাজি উৎসব।
ঈশ্বরদী সরকারি সাঁড়া মাড়োয়ারী স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সালে ১০০ বছর পূর্ণ হয় বিদ্যালয়টির। এ উপলক্ষে শতবর্ষপূর্তি উৎসবের প্রস্তুতি হিসেবে শতবর্ষ উদ্যাপন কমিটি গঠন করা হয়। নানা প্রতিকূল অবস্থার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শত বছর পূর্তির এক বছর পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।