রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাষ্ট্রবিজ্ঞান অ্যালামনাইয়ের দ্বিতীয় পুনর্মিলনী উৎসব

‘আরে, মোসাদ্দেক না’...এই বলেই সমস্বরে চিৎকার সবার। কিন্তু জবাব পাওয়া গেল না কারও। বরং সবার নজর অনুসরণ করে একজনকে মঞ্চে গিয়ে সভাপতির পাশের চেয়ারটিতে বসতে দেখা গেল। একটু পরে নিজের পরিচয় দেন তিনি। সবাইকে আশ্বস্ত করে জানান—হ্যাঁ, তিনিই মোসাদ্দেক।

রংপুরের সমাজসেবা কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে দেখা নেই ৩০ বছর, তবু বন্ধুরা তাঁকে চিনতে ভুল করেননি। গতকাল শুক্রবার তিনি এসেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দুদিনের অ্যালামনাই আয়োজনে যোগ দিতে। শুধু মোসাদ্দেক নন, তাঁর মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক সাত শতাধিক শিক্ষার্থী এসেছেন এই আয়োজনে অংশ নিতে। ছুটির দিনে তাঁদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবন ও তার আশপাশ। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করা হলো এই পুনর্মিলনী। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে গতকাল সারা দিন মেতে ছিলেন হাসি, আনন্দ আর স্মৃতি রোমন্থনে। আজ শনিবার ভাঙবে তাঁদের মিলনমেলা।

গতকাল সকালে অংশগ্রহণকারীদের নিবন্ধনের মাধ্যমে শুরু হয় দিনের কর্মসূচি। দুপুরে বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাইদের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আয়োজনের প্রথম দিন শেষ হয়।

দুপুরে খাবারের পরেই অ্যালামনাই সম্মিলনে অংশ নেওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আড্ডায় মেতে ওঠেন। হারিয়ে যান ছাত্রজীবনে ফেলে আসা দিনগুলোতে। ভবনের সামনের মাঠে কেউ চেয়ার পেতে, কেউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই মেতে ওঠেন আড্ডায়। বাগমারার হাটগাঙ্গোপাড়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মমতাজ হোসেন এক দিন আগে এসেই গোটা ক্যাম্পাস ঘুরেছেন। তিনি বলেন, ‘৩০ বছর পর ক্যাম্পাসে এসে সেই আগের মতোই লাগছে। মনে হচ্ছে, কোনো কিছুরই পরিবর্তন হয়নি।’

সিরাজী ভবনের পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন বন্ধু। গত ১৯৯৮ সালে তাঁরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করে কর্মজীবন শুরু করেছেন। প্রায় ২০ বছর পর বন্ধুরা আবার একত্র হয়েছেন পুরোনো দিনের মতো। কলেজশিক্ষক ইতি ও খোদেজা আক্তার ক্যাম্পাসের দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করছিলেন নিজেদের মধ্যে। এই ফাঁকে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন রেজাউল করিম। তিনি জামালপুর জেলার একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। ওই সময়ে (১৯৯৮ সালে) তিনি ক্লাসের সবচেয়ে চঞ্চল আর মজার ছেলে ছিলেন। পুরোনো দিনের মতোই সহপাঠীদের পেয়েই শিক্ষকের ভিরিক্কি ঝেড়ে ফেলে মেতে উঠলেন দুষ্টুমিতে।

বিভাগের সভাপতি ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. এস. এম. একরাম উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহুদিন পর বন্ধুদের কাছে পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’

আজ শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে অ্যালামনাই পুনর্মিলনী উৎসবের। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহান, সহ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা ও চৌধুরী মো. জাকারিয়া।

এদিন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে গোটা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করবে। পরে সিরাজী ভবনের চতুর্থ তলায় আলোচনা, স্মৃতিচারণামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অ্যালামনাইয়ের নতুন কমিটি গঠন এবং গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হবে। দুপুরে শেখ রাসেল মডেল স্কুল মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হবে।