বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে চাকরি পাওয়াকে অনেকে ‘সোনার হরিণ’ বলেন। এ চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ বিসিএসগুলোতে অবিবাহিত প্রার্থীদেরই বেশি প্রাধান্য থাকছে। কিন্তু বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিদের প্রায় অর্ধেক বিবাহিত।
তিনটি সাধারণ ও দুটি বিশেষ বিসিএসের তথ্য পর্যালোচনায় এমন চিত্র উঠে এসেছে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বার্ষিক প্রতিবেদনে। প্রতিবেদন তথ্য বলছে, সাধারণ বিসিএসগুলোতে যেখানে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত অবিবাহিত, সেখানে বিশেষ বিসিএসে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের প্রায় ৪৬ শতাংশ অবিবাহিত। অন্যদিকে ২৩ থেকে ২৭ বছর বয়সী প্রার্থীরাই বেশি (প্রায় ৬৬ শতাংশ) চাকরি পাচ্ছেন।
পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনটি সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছে পিএসসি। গতকাল রোববার প্রতিবেদনটি জাতীয় সংসদেও উপস্থাপন করা হয়েছে। পিএসসির মাধ্যমেই সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির (বর্তমানে চাকরির পরিচয় শ্রেণিপ্রথার পরিবর্তে গ্রেডভিত্তিক) নিয়োগগুলো হয়ে থাকে।
পিএসসির ২০২১ সালের বার্ষিক এই প্রতিবেদনে ৩৬তম বিসিএস থেকে ৪২তম বিসিএসে অংশ নেওয়া এবং সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের বৈবাহিক অবস্থার তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। ৩৬তম, ৩৭তম ও ৩৮তম বিসিএস ছিল সাধারণ বিসিএস; যেখানে সব ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর ৩৯তম ও ৪২তম বিসিএস ছিল বিশেষ বিসিএস; যেখানে কেবল চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়।
পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ৩৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল ২০১৫ সালে। ওই বিসিএসে ২ হাজার ৩২৩ জনকে চাকরির জন্য সুপারিশ করেছিল পিএসসি, যাঁদের মধ্যে প্রায় ৮৬ শতাংশ অবিবাহিত। বাকিরা বিবাহিত।
৩৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল ২০১৬ সালে। ওই বিসিএসে ১ হাজার ৩১৩ জনকে চাকরির জন্য সুপারিশ করেছিল পিএসসি। এর মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ ছিলেন অবিবাহিত। ২০১৭ সালের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হওয়া ৩৮তম বিসিএসে চাকরির জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল ২ হাজার ২০৪ জনকে। এর মধ্যে প্রায় ৮৪ শতাংশ অবিবাহিত।
২০১৭ সালের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হওয়া ৩৯তম বিসিএস ছিল বিশেষ বিসিএস। এই বিসিএসে কেবল চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ওই বিসিএসে সাড়ে ৩৭ হাজারের মতো প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। এরপর পরীক্ষার মাধ্যমে ৬ হাজার ৭৯২ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ৪৪ শতাংশ বিবাহিত। বাকি ৫৬ শতাংশ অবিবাহিত।
এই বিসিএসে চাকরি পাওয়া একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি প্রথমে দুটি সাধারণ বিসিএসে অংশ নিয়েছিলেন। পরে কয়েকটি বিসিএসে অংশ না নিয়ে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে অংশ নেন এবং চাকরি হয়। তাঁর মতে, বিবাহিত–অবিবাহিত বিষয় নয়, বয়সই মুখ্য।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরির সর্বোচ্চ বয়স ৩০ বছর হলেও বিশেষ বিসিএসে সর্বোচ্চ বয়স ৩২ বছর।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ বিসিএসের (৪২তম) মাধ্যমে চিকিৎসক নিয়োগ দেয় সরকার। ২০২০ সালের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই বিসিএসে ৪ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের সুপারিশ করেছিল পিএসসি, যাঁদের মধ্যে প্রায় ৪৬ শতাংশ বিবাহিত। এর মধ্যে প্রায় ২৭ শতাংশ নারী ও ১৯ শতাংশ পুরুষ। বাকি প্রার্থীরা অবিবাহিত। এই বিসিএসে চাকরি পাওয়া অর্ধেকই নারী।
৪২তম বিসিএসে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে পিএসসির ওই বার্ষিক প্রতিবেদনে। এতে দেখা যায়, চাকরির জন্য সুপারিশ করা প্রার্থীদের মধ্যে ৩৮ শতাংশের বেশি প্রার্থীর বয়স ২৫ থেকে ২৭ বছর। ২৭ দশমিক ৪৮ শতাংশের বয়স ২৩ থেকে ২৫ বছর। অর্থাৎ চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের প্রায় ৬৬ শতাংশের বয়স ২৩ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে। ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে চাকরি পাওয়ার হার ২০ শতাংশের মতো।