বিদ্যালয়ে ফিরছে পাঠদান

ফেব্রুয়ারি থেকে খুলতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মাস্ক ছাড়া স্কুলে যাওয়া যাবে না, বসতে হবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে।

  • বেঞ্চের দৈর্ঘ্য পাঁচ ফুটের কম হলে প্রতিটিতে একজন করে শিক্ষার্থী বসতে পারবে।

  • স্কুল খোলার প্রথম দুই মাস শিক্ষার্থীর ওপর চাপ নয়।

বিদ্যালয় খোলার পর বেঞ্চে এভাবে পাশাপাশি বসা যাবে না। দুই শিক্ষার্থীর মাঝে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে

করোনাকালে দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে যে ধুলা-ময়লা জমেছে, তা এবার পরিষ্কারের পালা। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধাপে ধাপে খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি, তবে ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, তার ‘গাইডলাইনও’ দিয়েছে। ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালুকরণ’ শীর্ষক এই গাইডলাইনে নতুন স্বাভাবিক বা নিও নরমাল জীবনে কী কী মেনে চলতে হবে, তা বলে দেওয়া হয়েছে। তবে খোলার বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত মাসে জানিয়েছিল, তাদের পরিকল্পনা হলো, সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারি থেকে প্রথমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনা। এরপর পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে অন্যান্য স্তরের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি রয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা সংক্রমণের হার কমেছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকেই মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সময় এসেছে। বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের এডুকেশন ওয়াচ নামের এক সাম্প্রতিক জরিপে উঠে আসে যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ও ৭৬ শতাংশ অভিভাবক বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পক্ষে।

বসতে হবে দূরত্ব রেখে

মাউশির নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন স্বাভাবিক সময়ে বিদ্যালয় খোলার পর সব ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বেঞ্চে বসার সময় দুই শিক্ষার্থীর মাঝে দূরত্ব থাকবে তিন ফুট। বেঞ্চের দৈর্ঘ্য পাঁচ ফুটের কম হলে প্রতিটিতে একজন করে শিক্ষার্থী বসতে পারবে। দৈর্ঘ্য পাঁচ থেকে সাত ফুট হলে প্রতি বেঞ্চে দুজন করে বসতে পারবে। স্কুলের প্রাঙ্গণ ও খোলা জায়গায় চলাফেরা করতে হবে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে।

মাউশির নির্দেশনায় আরও বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর প্রথম ১৫ দিন যেকোনো একটি শ্রেণির কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। ষষ্ঠ থেকে দশম পর্যন্ত সব শ্রেণির কার্যক্রম একই সঙ্গে চালু করতে হলে কয়টি পালা (শিফট) প্রয়োজন হতে পারে এবং প্রতিটি পালার জন্য শিক্ষাঘণ্টা কতটুকু হবে, তা–ও নির্ধারণের পরিকল্পনা করতে হবে। প্রয়োজনে দূর শিখন ও সপ্তাহ বিভাজন করে একেক দলকে একেক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনার ব্যবস্থা করতে হবে বলেছে মাউশি।

গাইডলাইনে আরও বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর প্রথম দুই মাসের মধ্যে এমন কোনো আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা বা মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা যাবে না, যা শিক্ষার্থীর ওপর চাপ তৈরি করতে পারে।

মাস্ক ছাড়া স্কুল নয়

মাউশি বলেছে, স্কুলে প্রবেশের আগেই সবার তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব দৃশ্যমান স্থানে ‘নো মাস্ক, নো স্কুল’ লিখে তা সবাইকে মানার নির্দেশ দিতে হবে। প্রতি ৩০ জন মেয়ে শিক্ষার্থীর জন্য একটি এবং ৬০ জন ছেলে শিক্ষার্থীর জন্য একটি—এই অনুপাতে টয়লেট বা শৌচাগারের সংখ্যা বিবেচনা করতে হবে। দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্লাসের পড়ালেখা সম্পন্ন করতে অতিরিক্ত সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে।

দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে, তা থেকে মুক্ত করার জন্য নিরাপদ ও আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মাউশির পক্ষ থেকে। বলা হয়েছে, প্রথম এক বা দুই সপ্তাহ পাঠক্রমভিত্তিক শিখনের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

মাউশির মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। সরকার যখনই বলবে, তখনই স্কুল খোলা হবে।’