প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফেব্রুয়ারির পর করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হলে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এই ফেব্রুয়ারি মাসটা নজরে রাখব। যদি এই ফেব্রুয়ারি মাসে অবস্থা ভালো থাকে, তাহলে পরবর্তীতে সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে শিক্ষার্থীরা যাতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারে, সে ব্যবস্থাটা আমরা নেব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার সকালে গণভবন থেকে অনলাইনে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এর আগে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সংশ্লিষ্ট বোর্ড চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে ফলাফল গ্রহণ করেন।
জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, তাহলে খুব দ্রুতই আমরা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারব এবং খুব দ্রুতই আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে পারব। আশা করছি আগামী মার্চ-এপ্রিল। মার্চ মাসটা আমরা দেখব, কেননা মার্চ মাসেই আমাদের দেশে ব্যাপক আকারে এই করোনাভাইরাস শুরু হয়েছিল।’
এইচএসসির সরাসরি পরীক্ষা না নিয়ে আগের পরীক্ষার ভিত্তিতে মূল্যায়ন নিয়ে সমালোচনা না করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতে করে শিক্ষার্থীদের মাঝে মানসিক চাপের সৃষ্টি হতে পারে।’ সবাইকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে এ ফলাফল দেখার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় গত ১৭ মার্চ থেকে আমাদের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছে। আমাদের পরীক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিলেও সকলকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে আমরা পরীক্ষা আয়োজন করতে পারিনি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশেই পরীক্ষা ছাড়াই পাস দেওয়া হয়েছে। তার আলোকে আমরাও এ পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হই। শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে এক বছর নষ্ট না করতে পরীক্ষা বাতিল করে পাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় অনেকেই সরকারের সমালোচনা করছেন। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি পরীক্ষা নেওয়ার ফলে কোনো শিক্ষার্থী যদি সংক্রমিত হয়, তার দায় কি সমালোচনাকারীরা নেবেন? নিশ্চয়ই নেবেন না। তখন তাঁরা ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতেন।’
প্রধানমন্ত্রী সমালোচকদের উদ্দেশে বলেন, ‘তাঁরা শুধু অহেতুক সমালোচনাই করতে পারেন, কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের জীবনের কথা ভেবেই এই পদ্ধতিতে ফল দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস সারা বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটা বছর নষ্ট হয়ে যাক, সেটা আমরা চাই না। তাদের জীবন চলমান থাকুক, সেটাই আমরা চাই। সেই কারণেই আমরা এই ফল ঘোষণা করলাম। আমি আশা করি, সবাই এ ব্যাপারে আনন্দিত হবেন এবং তাঁদের পড়াশোনা অব্যাহত থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিশুদের, ছোট ছেলেমেয়েদের জীবনের দিকে তাকাতে হবে। তারা যেন কোনোভাবেই হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পড়ে। এমনিতেই তারা স্কুল-কলেজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। এটা তাদের জীবনে বিরাট একটা সমস্যা সৃষ্টি করছে। তাই ফল নিয়ে সমালোচকদের বিরত থাকার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ক্রয় করে ফেলেছি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যত ধরনের পদ্ধতি আছে, সবই আমরা প্রয়োগ করে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি নির্দেশ দিয়েছি, আমাদের যাঁরা শিক্ষক, স্কুল–কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা কর্মরত, তাঁদেরও যেন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দ্রুত দেওয়া হয়।’