‘পপুলার’ বিভাগে তৃতীয়। প্রাথমিকভাবে প্রতিযোগিতার এই ফল জেনে খুব একটা খুশি হতে পারেননি পূষণ আলম, সাদমান ফাকিদ ও এস এম নাফিজ আহমেদ। বিচারকদের রায়ে একটা কিছু পাওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁদের।
‘আমার মোবাইলে একটা মেইল এসেছিল সকালে, কিন্তু আমি মেইলটা খুলেও দেখিনি। ভাবছিলাম, হয়তো অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে মেইল পাঠিয়েছে।’ বললেন পূষণ। ‘আর আমার মেইলটা চলে গিয়েছিল স্প্যাম ফোল্ডারে। নাফিজই প্রথম জানাল, আমরা পপুলার ক্যাটাগরিতে তৃতীয় হওয়ার পাশাপাশি বিচারকদের রায়ে প্রথম হয়েছি! প্রথমে বিশ্বাস হয়নি, পরে মেইল চেক করে দেখলাম সত্যিই তাই।’ সাদমান ফাকিদের গলার স্বর, চোখের ঝিলিক দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, প্রথম হওয়ার খবরটা তাঁদের কতটা চমকে দিয়েছে।
আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (এআইসিএইচই) প্রতিবছরই বিশ্বব্যাপী একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের কেমিকৌশলে (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) আগ্রহী করে তোলার জন্য একটি ভিডিও বানাতে হয় প্রতিযোগীদের। সঙ্গে জুড়ে দিতে হয় কেমিকৌশলের মৌলিক কোনো নির্বাচিত বিষয়। এবারের বিষয় ছিল ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট’। ‘পানিদূষণে আক্রান্ত বর্তমান বিশ্বে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর এই কাজটা কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদেরই।’ বলছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র পূষণ আলম। তাঁদের তিন বন্ধুর দল ‘দ্য ওয়ানস উইথ কেমিক্যালস’, এআইসিএইচই আয়োজিত প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লড়া প্রায় ৩২টি দলের মধ্যে প্রথম হয়েছে। এই ফল প্রকাশ পেয়েছে ৯ নভেম্বর। ‘প্রতিযোগিতায় ইউসি বার্কলি, এনআইটি, ইউনিভার্সিটি অব ইন্দোনেশিয়া, ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডাসহ আরও নানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩২টি দল অংশগ্রহণ করেছিল।’ জানালেন পূষণ।
এর আগে প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও বানানোসহ, দু-একটা শর্টফিল্মের কাজ করেছেন পূষণ ও সাদমান। আর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের প্রস্তাব এসেছে নাফিজের কাছ থেকে। ব্যস, তিন বন্ধু মিলে দাঁড়িয়ে গেছে দারুণ একটা দল। নাফিজ ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট’ সম্পর্কিত যত সাম্প্রতিক গবেষণা আছে, সেগুলো উল্টে–পাল্টে দেখেছেন। এ বিষয়ে কী কী ভিডিও তৈরি হয়েছে, খোঁজ নিয়েছেন পূষণ। আর সাদমান ভেবেছেন, কীভাবে একটা চমকপ্রদ ভিডিও বানানো যায়।
‘সারা দিন ধরে আমরা শুট করেছি। রোজার ছুটি চলছিল তখন। অনেক ল্যাব ছিল বন্ধ, তাই সেখানে শুট করা যাচ্ছিল না। প্রভাষক নাজিবুল ইসলামকে বলে আমরা সেই ল্যাবগুলোতে শুট করার ব্যবস্থা করি। ভিডিওর দৈর্ঘ্য ৫ মিনিট, সাইজ ৫ মেগাবাইটের বেশি হলে চলবে না। কপিরাইটেরও অনেক কড়াকড়ি ছিল। সব মিলিয়ে কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি।’ বলছিলেন নাফিজ।
‘পপুলার’ ক্যাটাগরির জন্য তাঁদের দরকার ছিল ভোট, সেই ভোট হিসাব করা হচ্ছিল ইউটিউবে লাইকের মাধ্যমে। এই ভোট চাওয়া নিয়েও কত ঝক্কি! বলছিলেন সাদমান, ‘অনেকেরই প্রকৌশল নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ নেই, তাই আমরা শুরুতে তেমন লাইক পাইনি। তবে শেষ পর্যন্ত চমক হাসান ভাই আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। তিনি শেয়ার করে সবাইকে আমাদের ভিডিওটার গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন। তা ছাড়া বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই আমাদের হয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন, সব মিলিয়ে পরে তো তৃতীয়ই হয়ে গেলাম। তাঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’
পুরস্কার জিতে এখন তিন বন্ধু পড়েছেন মধুর বিপাকে। ক্যাম্পাসের ক্লাসে, ল্যাবে, লাইব্রেরিতে, ক্যাফেটেরিয়ায়—যেখানেই যার সঙ্গে দেখা হয়, সে-ই নাকি ‘ট্রিট’ চায়। এই প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পর নিশ্চয়ই আরও একবার ‘ট্রিট চাওয়ার’ ধুম পড়বে! পূষণ, সাদমান, নাফিজদের জন্য শুভকামনা।