করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তে গত মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে একটি ল্যাব পরিচালনা করছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেসে (কার্স) স্থাপিত এই ল্যাবটির (পরীক্ষাগার) কার্যক্রম আজ সোমবার থেকে বন্ধ হয়ে গেছে৷
ল্যাবের কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকার তথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়া ল্যাব বন্ধ হওয়ার মূল কারণ৷ তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলছেন, আগে নেওয়া একটি সিদ্ধান্তের আলোকেই ল্যাব বন্ধ৷ অন্য কোনো কারণে নয়।
১২ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়৷ ৫ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্বোধন করা হয় করোনা পরীক্ষার ওই ল্যাব৷ ল্যাবটিতে প্রতিদিন ৪০০ নমুনা পরীক্ষা করার সুযোগ ছিল৷
ল্যাব পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক শিক্ষকের ভাষ্য, মূলত বিশেষজ্ঞের অভাব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ল্যাব চালাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগিতা না পাওয়া, স্বেচ্ছাসেবকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা ও লজিস্টিক সাপোর্ট সরবরাহ করা সম্ভব না হওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদে যন্ত্রপাতির সীমাবদ্ধতার কারণে ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে৷ তাঁরা দাবি করেন, ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর চিঠি দিয়ে তাঁরা জানিয়েছিলেন যে সরকার সহায়তা করলে ৩১ মে'র পর ল্যাবটি চালানো সম্ভব, অন্যথায় নয়৷ কিন্তু কোনো সাড়া তাঁরা পাননি৷
ল্যাবের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকা একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা-প্রতিষ্ঠান, কোনো মেডিকেল বা স্বাস্থ্যসেবা-প্রতিষ্ঠান নয়৷ ল্যাবের স্বেচ্ছাসেবকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী৷ বিশ্ববিদ্যালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো প্রণোদনা না দেওয়া হলে একসময় কাজে তাঁদের অনীহা চলে আসাটা স্বাভাবিক৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষে থেকে তাঁদের নির্দিষ্ট পিপিই পর্যন্ত দেওয়া হয়নি৷ ল্যাব পরিচালনার কিছু আর্থিক খরচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেয়নি৷ ল্যাবটি চালাতে মাসে ১০ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ভর্তুকি দিয়ে এই খরচ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়৷
ওই অধ্যাপক বলেন, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যাঁরা ল্যাবে কাজ করেছেন, তাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি বা গবেষণা করেন৷ এখন সীমিত পরিসরে অফিস-আদালত খোলা হচ্ছে, তাঁরা তাঁদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে চলে যাবেন৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা ও লজিস্টিক সাপোর্ট তাঁরা পাননি৷ তা ছাড়া বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের যন্ত্রপাতি নিয়ে ল্যাবটি করা হয়েছিল৷ এসব যন্ত্রপাতি অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব নয়৷ কারণ তাদের নিজস্ব গবেষণাসহ অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয় রয়েছে৷
এসব অভিযোগের কথা অস্বীকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিভাগের যন্ত্রপাতি নিয়ে করোনা পরীক্ষার ল্যাবটি স্থাপন করা হয়েছিল৷ এখন সেগুলো নিয়মিত গবেষণা-কার্যক্রমে চলে যাবে৷ মূলত এ কারণেই দীর্ঘমেয়াদে ল্যাবটি পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না৷ ৩১ মে পর্যন্ত ল্যাবের কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্তটি আগেই নেওয়া৷