২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনসংখ্যা অন্তত ১ হাজার কমিয়ে ৬ হাজারে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উচ্চশিক্ষাকে প্রয়োজন ও দক্ষতাভিত্তিক করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে আসনসংখ্যা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়—এমন সমালোচনা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে।
শিক্ষার্থীদের আবাসনব্যবস্থা, গ্রন্থাগার–সুবিধা, শ্রেণিকক্ষ ও পরিবহন থেকে শুরু করে সর্বত্র অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর চাপ রয়েছে। গত দুই দশকে অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন বিভাগ-ইনস্টিটিউট খোলা ও একই অনুপাতে অবকাঠামো না বাড়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। অবকাঠামো বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘ভৌত মহাপরিকল্পনা’ প্রস্তুত করেছে। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভৌত মহাপরিকল্পনার আগে একটি ‘একাডেমিক মহাপরিকল্পনা’ প্রস্তুতের আহ্বান জানান।
এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আসনসংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নিল। ‘শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও যথোপযুক্ত দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা-সামর্থ্য এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আসনসংখ্যা পুনর্নির্ধারণ’ বিষয়ে আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির এক বিশেষ সভা হয়। উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ, সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল ও অনুষদগুলোর ডিনরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে জনসংযোগ দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় বিভাগ-ইনস্টিটিউট ও অনুষদগুলোর চাহিদা ও প্রস্তাব পর্যালোচনা করা হয় এবং ভর্তির যৌক্তিক আসনসংখ্যা নির্ধারণ বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়। এ সুপারিশ অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে পুনর্নির্ধারিত আসনসংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
কত আসন কমবে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল বলছেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনভিত্তিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে বেকারত্ব কমিয়ে আনার জন্য আসনসংখ্যা কমানোর উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন যে সাত হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়, এত শিক্ষার্থী আর ভর্তি করা হবে না। প্রতি শিক্ষাবর্ষে ছয় হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। শ্রেণিকক্ষে যেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মনোযোগ থাকে—এমন নানা বিষয় বিবেচনায় শিক্ষার্থীসংখ্যা পুনর্বিবেচনার এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আসনসংখ্যার বিষয়ে মতামত বিভাগগুলো থেকেই এসেছে। আজ অনুষদগুলোর ডিনদের সঙ্গে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করলাম। এটি নিয়ে আরও আলোচনা হবে।’
মাকসুদ কামাল বললেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনভিত্তিক উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করবে। শিক্ষার্থীরা যে বিষয়ে পড়াশোনা করবেন, সেই বিষয়ের ওপর তাঁদের দক্ষতা যেন পরিপূর্ণ হয়, তার জন্য সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়াতে হবে। শ্রেণিকক্ষের আকার অথবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষার্থীরা যে অনুপাত হয়, সেই বিবেচনায় আমরা শিক্ষার্থীসংখ্যা নির্ধারণ করব। যেসব বিষয়ে শিক্ষার্থীসংখ্যা বাড়ানো দরকার, সেগুলোতে বাড়ানো হবে। অন্যদিকে যেসব বিষয়ে শিক্ষার্থীসংখ্যা কমানো দরকার, সেখানে কমানো হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৩টি অনুষদের অধীন ৮৩টি বিভাগ রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ১৩টি বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট। সর্বশেষ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ৭ হাজার ১৪৮ শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব বিভাগ-ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।