জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক ধর্মঘট চলাকালে আন্দোলনকারী এক নেতার ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের নেতৃত্বে ‘হামলা’ চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো কলাভবনের ফটকে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার শিক্ষার্থীর নাম নজির আমিন চৌধুরী। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি।
অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর হলেন মহিবুর রৌফ ওরফে শৈবাল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, আজ সকাল থেকে সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন নিরাপত্তা প্রহরীকে নিয়ে বিভিন্ন অনুষদ ভবনে যান। অনুষদ ভবনের ফটকে আন্দোলনকারীদের দেওয়া তালা খুলে ফেলার চেষ্টা করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুরোনো কলা অনুষদে তালা খুলতে গেলে নজির আমিন চৌধুরী তালা না খোলার অনুরোধ জানান। এ সময় নিজের মুঠোফোনের ক্যামেরা চালু করে নজির আমিনের শার্টের কলার ধরে টানতে শুরু করেন মহিবুর রৌফ। মহিবুরের সঙ্গে থাকা কয়েকজন ছাত্রও নজিরকে টানতে শুরু করেন। মহিবুরকে বাধা দিলে একজন ছাত্রীকেও লাঞ্ছিত করেন ওই ছাত্ররা। পরে কর্মচারীদের একজন তালা ভেঙে ফেলেন।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা। ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো কলা ভবন থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিভিন্ন অনুষদ ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘উপাচার্য অপসারণ মঞ্চে’ গিয়ে শেষ হয়।
আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘একজন সহকারী প্রক্টরের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। একটি ভিডিও দেখে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। একজন শিক্ষক তাঁর ছাত্রের ওপর কীভাবে হামলা করতে পারেন। মাস্তান শিক্ষক আমরা চাই না। একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা হতে পারে, এটা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক ঘটনা। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল থেকে আন্দোলনকারীদের দেওয়া তালা কাটছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দল। আমি পুরোনো কলা অনুষদের সামনে গেলে সেখানে নজির আমিনকে দেখতে পাই। তাঁকে ডেকে বললাম, এদিকে আসো তোমার সঙ্গে কথা বলি। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজন আমার তলপেটে আঘাত করে। এরপর আমি নজির আমিনকে টেনে বাইরে নিয়ে আসি। যাতে আমি আর মার না খাই।’
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে দুই মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। প্রথমদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে উপাচার্যের ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগের নেতাদের বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তদন্তসহ তিন দফা দাবিতে তাদের এ আন্দোলন শুরু হয়। দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দুই দফা বৈঠক হয়। বৈঠকে আন্দোলনকারীদের দুই দফা দাবি মেনে নিলেও আর্থিক অনিয়ম তদন্তের দাবির বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা।
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় ২ অক্টোবর থেকে উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র ও স্নাতকোত্তরের এক শিক্ষার্থীকে শিবির সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর চলমান আন্দোলনে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর আন্দোলনকারীদের দাবি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বানচাল করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ নাটক সাজিয়েছে। এরপর গত সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করছেন আন্দোলনকারীরা।
এদিকে আন্দোলনকারীদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ অনুরোধ জানান।