যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি তদন্তে আজ রোববার তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী বোর্ডের সদস্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবীরকে সভাপতি, যশোরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঝোলানো হয়েছিল নৌকা প্রতীকের ফেস্টুন। সম্প্রতি তার পাশেই ক্যাম্পাসে র্যাগিংবিরোধী ফেস্টুন টাঙায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যা সরিয়ে দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে মুঠোফোনে এক শিক্ষকের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার। এর জেরে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থেকে মুখোমুখি অবস্থানে শিক্ষক সমিতি ও ছাত্রলীগ। গতকাল শনিবার উভয় পক্ষ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, গত মঙ্গলবার যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল কবির জাহিদকে মুঠোফোনে ‘রাজাকার’ বলে অকথ্য ভাষায় গালি ও হুমকি দেন। পাল্টা অভিযোগ করে ছাত্রলীগ বলেছে, ওই শিক্ষক ছাত্রলীগ নিয়ে ‘কটূক্তি’ ও গালিগালাজ করেছেন।
শিক্ষক সমিতির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ শিক্ষকদের পাঠদান ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগে পাঠদান ও পরীক্ষায় শিক্ষকেরা অংশ নেননি।
আজ সকালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে ছাত্রলীগ পাঁচ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেনের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে। দাবিগুলো হলো ছাত্রলীগ নিয়ে কটূক্তি ও অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহারকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি; র্যাগিং বিরোধীর নামে ক্যাম্পাসে টাঙানো অযৌক্তিক ও বিভ্রান্তমূলক পোস্টার সিনিয়র শিক্ষার্থীদের অপমান করেছে, যার বিচার চায়; রিটেক ফি, ল্যাব রিটেক ফি, লাইব্রেরি জরিমানা কমানো; বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের প্রোগ্রাম এখন থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণ ও পরিচালনায় হতে হবে এবং বিনা রসিদে কোনো বিভাগে টাকা না নেওয়া।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৭ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউকে কমিটিতে রাখা হয়নি। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ড বোর্ডের সদস্য কিন্তু অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এমন একজনকে সভাপতি এবং জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কমিটিকে বলা হয়েছে।
তিনি জানান,‘ সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একটি স্মারকলিপি পেয়েছি। তাদের পাঁচটি দাবিই মেনে নেওয়া হয়েছে।’
কবে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হবে-জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি, ছাত্রলীগের কারণে শিক্ষকেরা অত্যন্ত মর্মাহত- তারা এই ধকল কাটিয়ে ওঠতে দুই দিনের সময় চেয়েছেন। তারা শিক্ষক সমিতির বৈঠক আহ্বান করেছেন। ওই বৈঠক থেকেই তাঁদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে বলে আশা করছি।’ আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হবে বলেও উপাচার্য আশা করেন।