ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) নির্বাচিত না হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। আর ডাকসুতে আলোচনা না করে তাঁদের মনোনীত করায় সিনেট অধিবেশন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক। ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত অনেকেও বলেছেন, এ বিষয়ে ডাকসুতে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি৷
ডাকসুতে নির্বাচিতদের মধ্যে ৩ জন সিনেট সদস্য হয়েছেন ৷ তাঁরা হলেন সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী ও সদস্য তিলোত্তমা শিকদার ৷ এদের মধ্যে নুরুল হক কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আর অন্য দুজন ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ৷ চলতি মাসের ২৬ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সভা অনুষ্ঠিত হবে৷
১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ২০ (ঠ) ধারায় বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) মনোনীত শিক্ষার্থীদের পাঁচজন প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্য হবেন।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ডাকসুর প্রতিনিধিরা চাইলে ডাকসুর বাইরে থেকেও সিনেট সদস্য মনোনীত করতে পারেন ৷ বিগত সময়েও এভাবে হয়েছে ৷ ডাকসুর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষার্থী সিনেট সদস্য হতে পারেন। ১৯৭৩-৭৪ সালের ডাকসুতেও এভাবে সিনেট সদস্য হয়েছিলেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে ডাকসুর প্রথম ভিপি ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির এখনকার সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সময়ও ডাকসু নির্বাচনে অনির্বাচিত কিন্তু ডাকসু কর্তৃক মনোনীত তিনজন সিনেট সদস্য হয়েছিলেন৷
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতিকে সিনেট সদস্য করায় ক্ষুব্ধ ডাকসুর ভিপি নুরুল হক ৷ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। ছাত্রলীগ যেভাবে সব সিদ্ধান্ত নেয় যে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক যা বলেন, তা-ই ঠিক; ডাকসুতে যেহেতু তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা, তাদের সাধারণ সম্পাদক (গোলাম রাব্বানী) এটা ঠিক মনে করেন বলে অন্যদের নামেও সেটা চালিয়ে দিচ্ছেন।’
নুরুল হক বলেন, ‘ডাকসুতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়নি, সেই প্রতিনিধিরা সিনেটে প্রতিনিধিত্ব করবেন—এটি আমি সমর্থন করি না৷ আসন্ন সিনেট সভা আমি বর্জন করতে পারি।’
এদিকে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত অনেকেই প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, সিনেট সদস্য নির্ধারণ নিয়ে ডাকসুতে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি৷
ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত প্রথম আলোকে বলেন, ডাকসুতে আনুষ্ঠানিক আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ অনানুষ্ঠানিকভাবে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত আমরা ২৩ জন বসেছিলাম, কিন্তু সেটি কোনো ফলপ্রসূ আলোচনা ছিল না৷ কারা সদস্য হলেন, সেটি কোনো ব্যাপার নয়, কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে এটি করা হয়েছে—এখানেই আমার আপত্তি।’
ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ বলেন, ‘দলীয় ফোরামে হয়তো সিদ্ধান্ত হয়েছে, তবে আমি সে বিষয়ে অবগত নই।’
ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসুর আরেক সদস্য রাকিবুল ইসলাম বলছেন, প্রাথমিক একটি আলোচনা হয়েছিল, তবে এভাবে যে চূড়ান্ত করে দেওয়া হবে, জানতাম না। ভোটাভুটির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও করা হয়নি।
ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসুর সদস্য নিপু ইসলাম বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটাভুটি আসলে হয়নি। হয়ে থাকলেও আমি জানি না।’
এ বিষয়ে জানতে ডাকসুর জিএস ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং এজিএস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।