বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

এ বছর নিজস্ব ক্যাম্পাসে না গেলে ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বন্ধ

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)
ফাইল ছবি

আইনানুযায়ী নিজস্ব ক্যাম্পাসে যায়নি—দেশের এমন ২২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সংস্থাটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে না যায়, তাহলে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া অন্যান্য ক্যাম্পাস বা ভবনগুলো অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

সম্প্রতি ইউজিসি এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিগগির তা সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হবে। ইউজিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে ইউজিসির অবস্থান জানিয়ে দেওয়া হবে।

বর্তমানে দেশে ১০৮টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আইনানুযায়ী, প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে। এ জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে এক একর ও অন্য এলাকায় দুই একর জমি থাকতে হবে। ২০১০ সালে সংশোধিত আইন হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছিল সরকার। কয়েক দফায় সময় দেওয়ার পরও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি।

ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং স্থায়ী ক্যাম্পাসের বিষয়ে ইউজিসিতে জবাব দেয়নি। এ বিষয়ে ইউজিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যকে আহ্বায়ক করে আইনজীবীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পরে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

অথচ পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো কোনোটি প্রতিষ্ঠার বয়স দেড় যুগের বেশি, কোনোটির বয়স দুই দশকের বেশি হয়ে গেছে। তারপরও পুরোনো ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৩টি এখনো পুরোপুরিভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যায়নি। এর মধ্যে একটি নিজস্ব ক্যাম্পাসের বিষয়ে ইউজিসিকে কিছুই জানায়নি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কমিটি গঠন করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইউজিসি।

জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) বিশ্বজিৎ চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, সিদ্ধান্তটি হলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে হবে। তা না হলে স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য ক্যাম্পাস বা ভবনগুলো অবৈধ হবে এবং সেগুলোয় শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে। আগামী আট মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

কোনটির অবস্থা কী

ঢাকায় অবস্থিত দ্য পিপল’স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ১৯৯৬ সালে সাময়িক অনুমতি পেয়েছিল। কিন্তু এখনো নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে ইউজিসি বলেছে, তাদের আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করতে হবে। অন্যথায় আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্যান্য ভবন বা ক্যাম্পাস অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সব প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে।

২০০০ সালে সাময়িক অনুমোদন পাওয়া ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বর্তমানে বনানী ও গ্রিন রোডে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। নিজস্ব ক্যাম্পাসের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির সাতারকুলে স্থায়ী ক্যাম্পাসে ৬২ হাজার বর্গফুটের একটি ভবনে ইউজিসি অনুমোদিত ২৯টি প্রোগ্রামের মধ্যে ১০টির ক্লাস হয়। তাদের ৬০ হাজার বর্গফুটের আরেকটি ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণরূপে স্থানান্তর করতে পারবে। তবে ইউজিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের সম্পূর্ণরূপে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে হবে।

মানারত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ইউজিসিকে জানিয়েছে, তারা ২০১৭ সাল থেকে আশুলিয়ায় ৩ দশমিক ৩০ একর নিজস্ব জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস চালু করেছে। তবে গুলশানে অবস্থিত নিজস্ব ভবনে প্রশাসনিকসহ সীমিত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তাদেরও এ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে হবে।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ঢাকার মোহাম্মদপুরের আদাবরে নির্মাণাধীন ভবনে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া ইকবাল রোডে অস্থায়ী ক্যাম্পাসেও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ গাজীপুরে ৩ দশমিক ৮২ একর জমি কিনেছে। তবে তাদের জমিটি ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের কাছে হওয়ায় বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পায়নি এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে ভবনের নকশা অনুমতি না হওয়ায় নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেনি। কেনা ওই জমিতে একটি আধা পাকা টিনশেড ভবন রয়েছে; যেখানে চারুকলা ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ‘আউটডোর পাঠদান’ হয়। অননুমোদিত আটটি ক্যাম্পাসের জন্য ইউজিসির ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়টির নামের পাশে লাল তারকা চিহ্ন দেওয়া হয়েছে।

সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির তেজগাঁওয়ে শিল্প এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া বনানীতে অননুমোদিত চারটি ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ জন্য ইউজিসির ওয়েবসাইটে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে লাল তারকা চিহ্ন দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব ক্যাম্পাসের বিষয়ে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী বছরের অক্টোবরে তাদের কাজ শেষ হবে। তবে ইউজিসি বলেছে, এ বছরের মধ্যেই নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে হবে।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ২০০২ সালে অনুমোদন পেয়েছিল। তারা বলেছে, ২০২৪ সালের মধ্যে ডেমরায় গ্রিন মডেল টাউনে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারবে। কিন্তু ইউজিসি সেটি মানেনি। ইউজিসি বলছে, এ বছরেই তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে হবে।

২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত স্টেট ইউনিভার্সিটি চায় ২০২৫ সালের মধ্যে ক্যাম্পাসে যেতে; যদিও ইউজিসি তা মানেনি।

নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ অঙ্গীকারনামা দিয়ে বলেছে, তাদের সব কার্যক্রম এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করবে।

আশা ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ২০০৬ সালে সাময়িক অনুমোদন পেলেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে তাদের যথেষ্ট সদিচ্ছার অভাব প্রতীয়মান হয়েছে ইউজিসির কাছে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, বর্তমান প্রকল্পের কাজ অতি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পের কাজের প্রায় ৫৫ শতাংশ শেষ হয়েছে এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কার্যক্রম শতভাগ শেষ করার জন্য কাজ করছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকেই নিজস্ব ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি সরকারের অনুমোদন পেয়েছিল ২০০১ সালে।

ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং স্থায়ী ক্যাম্পাসের বিষয়ে ইউজিসিতে জবাব দেয়নি। এ বিষয়ে ইউজিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যকে আহ্বায়ক করে আইনজীবীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পরে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

এ বছরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে সময় বেঁধে দেওয়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো শান্ত–মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আট৴স বাংলাদেশ ।