মজার মজার গান গেয়ে, ভিডিও তৈরি করে সম্প্রতি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন মাশরুর ইনান। ফেসবুক-ইউটিউবে যিনি ‘কিটো ভাই’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থীকে এখন ক্যাম্পাসেও হয়তো ‘কিটো ভাই’ বলেই ডাকার কথা, কিন্তু সে সুযোগ আর হচ্ছে কই? ক্যাম্পাস বন্ধ। বহু শিক্ষার্থীর মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের চেনা পরিবেশ মিস করছেন কিটো ভাইও।
আমি বরাবরই উদ্যমী, উচ্ছল মানুষ। গল্প, আড্ডা, গান, ক্যাম্পাস, বন্ধুবান্ধব, নিত্যনতুন অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে দৌড়াদৌড়ি আর ক্লাসের ব্যস্ততা—সঙ্গে ঢাকার ব্যস্ত জনজীবন, আটকে পড়া যানজটে স্থবিরতা, সব মিলিয়ে সহজ-সুন্দর আর স্বাভাবিক জীবন চলছিল। আর আমি এর মধ্যেই সহজভাবে বেঁচে ছিলাম। যেমনটা থাকি সব সময়, হাসি–খুশি!
চঞ্চল এত সব ব্যস্ততা আর রঙিন আয়োজন; সবকিছু কেমন নিমেষেই থমকে গেছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত মহামারি করোনার আক্রমণে। এ আলোচনা বড্ড পুরোনো, কমবেশি সবাই-ই জানি। মাস চারেক হয়ে গেল, সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ছুটিতে তাই বাসায় বন্দী। সব ঠিকঠাক থাকলে, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো এখন বর্ষা উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা চলত। ক্লাবের প্রিয় মানুষ, বন্ধুবান্ধব সবাইকে নিয়ে হয়তো বেশ ব্যস্ত সময় কাটত।
এখন পরিস্থিতি ভিন্ন! রাস্তায় বের হয়ে আকাশ দেখে আয়েশ করে হাঁটার জো নেই, কিংবা মাঠে গিয়ে খেলার সুযোগ নেই। কেননা সর্বত্রই করোনা নামক ভাইরাসের করাল গ্রাস, আতঙ্ক। তাই বলা চলে, অনেকটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইন্টারনেট তথা ভার্চ্যুয়াল জগতেই বিচরণ করছি, প্রিয় মুখগুলোর সঙ্গে সেখানেই প্রতিনিয়ত সাক্ষাৎ হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিদিন অনলাইন ক্লাসের সুবাদে দেখা হচ্ছে ক্লাসের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে। ব্যস! এটুকুই।
এই চার দেয়ালে, চারপাশের সব নেতিবাচক সংবাদের মধ্যে থেকেও খানিকটা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে একরকম লড়াই করছি প্রতিদিন, যেন মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ি। আশা নিয়ে আছি, আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে, আবার প্রিয় বন্ধুর পাশে বসে টংয়ের চায়ে জমিয়ে আড্ডা হবে! একটা সময় ছিল হাঁসফাঁস করতাম কাজের ব্যস্ততায়, পড়ালেখার চাপে পিষ্ট হয়ে, কবে যে ছুটি মিলবে! সে যেন সোনার হরিণ! কিন্তু এখন অনভ্যস্ত এই লম্বা বন্ধে, মানিয়ে চলতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। পেছনের দিনগুলোর সুন্দর-স্বাভাবিক প্রতিটা মুহূর্তকে মনের সেলুলয়েডে কল্পনায় দেখতে হচ্ছে। কাছের প্রিয় মানুষদের পাশে পাচ্ছি না। ভার্চ্যুয়াল জগতের মেলামেশায় বুঁদ থাকলেও ব্যাপারটা অনেকটা দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মতো।
বেশির ভাগ আড্ডা হতো ক্যাম্পাসে, জমিয়ে হতো গান৷ বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষ হওয়ার আগেই সবকিছু নিয়ে কেমন এক অদ্ভুত স্মৃতি কাতরতা! তার ওপর সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকাটাও বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও এই সীমিত লকডাউনে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সঠিক সময় সম্পর্কে এখনো নিশ্চয়তা নেই। আমি বরাবরই নিজেকে ইতিবাচক রাখতে পছন্দ করি। তাই অন্য সবার মতো ধীরে ধীরে ‘নতুন স্বাভাবিক’ নামের নতুন এই অধ্যায়ে নিজেকে অভ্যস্ত করে নিচ্ছি। তবু প্রিয় এই বন্ধুবান্ধব, সহপাঠীদের অভাবটা তো আসলে এই কোয়ারেন্টিনে বসে পূরণ করা সম্ভব নয়!
প্রতিদিন যখনই কোনো না কোনো সংবাদমাধ্যমে দেখি, ‘করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি!’ কিংবা ‘করোনার প্রতিষেধক তৈরির আপ্রাণ চেষ্টা’, তখন কৌতূহলী মন একটা বিষয় খুঁজে বেড়ায়, আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব তো! প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে উল্লাসে মেতে উঠতে পারব?
সত্যিকার অর্থেই স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ অন্য রকম। জানি না, প্রিয় মানুষদের সঙ্গে ঠিক কবে দেখা হবে। তবে বিশ্বাস করি এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, যেন সেই সুদিন খুব বেশি দূরে না হয়। হয়তো অচিরেই, এই কালো মেঘ সরে যাবে! আবারও বৈশাখ, বর্ষা, ফাল্গুন উৎসবে মাতব প্রিয়জনদের সঙ্গে! পারব তো? আশা রাখি। কারণ শুনেছি, ‘যে মানুষ আশায় বাঁচে, বিশ্বাস রাখে, সে কখনো মরে না!’