৪৬তম বিসিএসে আবেদনের সময় কাল রোববার শেষ হচ্ছে। এতে আবেদনকারীরা কম আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক পরীক্ষার্থী। তবে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বলছে, বিসিএসের পরীক্ষাপদ্ধতিতে পরিবর্তন, একসঙ্গে বসা বন্ধ করা ও দেখাদেখি বন্ধ করায় অনেক পরীক্ষার্থী আবেদনের আগ্রহ হারাতে পারেন। কেননা, এখন পরীক্ষার বিষয়ে কঠোর পিএসসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির একাধিক সদস্য আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ৪৬তম বিসিএসে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ২ লাখ ৪০ হাজার ৯০০ আবেদন জমা পড়েছে। এই আবেদন কার্যক্রম কাল শেষ হচ্ছে। আবেদন কি কিছুটা কম, জানতে চাইলে পিএসসির ওই সদস্য বলেন, প্রকৃত প্রার্থীরাই আবেদন করছেন। আগে দেখাদেখি, কথা বলাবলি—এসব সুযোগ নিতে আবেদনকারীরা নানাভাবে তৎপর ছিলেন। পিএসসি সেই তৎপরতা একেবারে বন্ধ করেছে। কোনোভাবেই রেজিস্ট্রেশন করে বা টাকা জমা দিয়ে পাশাপাশি বসার সুযোগ নেই। আবার ঘাড় ঘুরালেই খাতা নেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে। এ ছাড়া কথা বললে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা ও পরীক্ষকদের বেশি তৎপরতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পিএসসির এসব উদ্যোগ সম্পর্কে অনেকে জেনেছেন, তাই শুধু পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পরীক্ষা দেওয়ার নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন পরীক্ষার্থীরা। এসব কারণে আবেদন কিছুটা কম এসেছে বলে মনে করেন ওই সদস্য।
কিছু পরীক্ষার্থী বলেন, বিসিএসের বিপুল পরিমাণ আগ্রহে ভাটা পড়েছে। এর অন্যতম কারণ সময় বেশি লাগা। একেকটি বিসিএসে গড়ে চার বছর সময় লাগে। এই সময়ে অন্য চাকরিও করা কঠিন। তাই অনেকে এই দীর্ঘ সময়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন, তাই বিসিএসে এবারে আবেদনে আগ্রহ কম বলে মনে করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা তরুণ সাব্বির হোসেন বলেন, ‘বিসিএসের চাকরি পেতে অন্তত পাঁচ ধাপে নানাভাবে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা হয়। এই বড় সময়ে অন্য কিছু করা যায় না। তাই আমি বিসিএসের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছি। এখানে বেতনও ভালো, সময় তুলনামূলক কম লাগে।’
১০ ডিসেম্বর থেকে ৪৬তম বিসিএসের আবেদন শুরু হয়। আবেদনের জন্য প্রার্থীর বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হতে হবে। যাঁদের জন্মতারিখ ১৯৯৩ সালের ২ নভেম্বর এবং ২০০২ সালের ২ নভেম্বরের মধ্যে, তাঁরা আবেদন করতে পারবেন। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রার্থী ও বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ বয়স ৩২ বছর।
আগ্রহী যোগ্য প্রার্থীদের অনলাইনের মাধ্যমে আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। প্রার্থীদের পিএসসির ওয়েবসাইটে গিয়ে পিএসসির নির্ধারিত ফরমের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, আবেদন করা যাবে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ইউজার আইডিপ্রাপ্ত প্রার্থীরা পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আবেদন ফি জমা দিতে পারবেন।
৪৬তম বিসিএসে মোট পদ ৩ হাজার ১৪০। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে স্বাস্থ্য ক্যাডারে। এতে বিসিএস সহকারী সার্জন ১ হাজার ৬৮২ জন, সহকারী ডেন্টাল সার্জন ১৬ জন নেওয়া হবে। এর পরপরই সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে শিক্ষা ক্যাডারে। বিভিন্ন বিষয়ে এই ক্যাডার থেকে বিসিএস শিক্ষায় ৫২০ জন নেওয়া হবে। বিসিএস প্রশাসনে ২৭৪, পররাষ্ট্রে ১০, পুলিশে ৮০, আনসারে ১৪, মৎস্যে ২৬ ও গণপূর্তে ৬৫ জন নেওয়া হবে। আবেদন শেষে ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ৩৫, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য ৩৫, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ৩০, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ২০, ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ১০, সাধারণ বিজ্ঞান ১৫, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি ১৫, গাণিতিক যুক্তি ১৫, মানসিক দক্ষতা ১৫ এবং নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসনের ওপর ১০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ও লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক সিলেবাস পিএসসির ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। আগ্রহী প্রার্থীরা কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে তাঁদের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস ডাউনলোড করতে পারবেন।