বিসিএসে জট কমাতে এবার ৪৫তম বিসিএসে গণিতের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখতে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এতেই সবচেয়ে দ্রুতগতিতে খাতা দেখা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির। বিশেষ এ পদ্ধতি অব্যাহত থাকলে লিখিতের খাতা দেখার সময় আরও কমিয়ে আনাসহ দ্রুত বিসিএস শেষ করা সম্ভব হবে বলে মনে করে পিএসসি।
জানতে চাইলে পিএসসি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, গণিতের খাতা দেখা একটি সময়সাপেক্ষ বিষয় এবং নানা জটিলতা দেখা দেয়। তাই এবার পিএসসি চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত অনুসারে ৪৫তম বিসিএসের গণিতের লিখিত পরীক্ষার খাতা পিএসসিতে বসেই দেখার সিদ্ধান্ত হয়। এখানে টিম অনুসারে সম্প্রতি পিএসসিতে এসেই পরীক্ষকেরা একটি কক্ষে বসেন। ক্রমানুসারে একেক পরীক্ষক একেক প্রশ্নের উত্তর দেখেন। কোনো সমস্যা মনে হলে প্রধান পরীক্ষক তা যাচাই করে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেন। এভাবে একের পর এক খাতা দেখা হয়। তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে যাওয়ার দরকার পড়ে না। এই বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে এখানে তিন দিনে প্রায় সাত হাজার লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখা শেষ হয়েছে। আর বাকি প্রায় চার হাজার খাতা দেখতেও দুই দিন লাগবে। সেটিও দুই দিনেই সম্ভব বলে মনে করে পিএসসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার ৪৫তম বিসিএসে পাইলট প্রকল্প হিসেবে গণিতের খাতা পিএসসিতে বসেই দেখার সিদ্ধান্ত হয়। আমরা সেটি করতে পেরেছি। প্রথম দফায় আমরা সব শক্তি ব্যবহার না করেও অনেক সফল। এতে এই খাতা আর তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠাতে হচ্ছে না। কোনো সন্দেহ থাকলে বিশেষজ্ঞ পরীক্ষকেরাই এক স্থানে বসে সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন। আমরা এ পদ্ধতি অন্য পরীক্ষার খাতায় ব্যবহার করা যায় কি না, সেটিও ভেবে দেখছি। এটি সম্ভব হলে বিসিএসের খাতা দেখতে আর বেশি সময় লাগবে না।’ চেয়ারম্যান জানান, বর্তমান পদ্ধতিতে কম করে হলেও লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখতে আট মাসের মতো সময় চলে যায়, যা ফল দেরিতে হওয়ার অন্যতম একটি বড় কারণ। সেটি কমিয়ে এনে দ্রুত ফল দেওয়ার চেষ্টা করছে পিএসসি।
পিএসসি সূত্র জানায়, বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা প্রথমে প্রথম পরীক্ষকের কাছে পাঠায় পিএসসি। সেখান থেকে আসার পর যাচাই–বাছাই হয়ে আবার তা দ্বিতীয় পরীক্ষকের কাছে যায়। সেখানে যদি দেখা যায়, প্রথম ও দ্বিতীয় পরীক্ষকের দেওয়া নম্বরের পার্থক্য ২০ শতাংশ বা এর বেশি, তাহলে তা আবার তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে যায়। তাঁর দেওয়া নম্বরই চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।
পিএসসির একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, ৪১তম বিসিএসের ফল প্রকাশ দেরি হওয়ার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পিএসসি। ফল দিতে দেরির কারণ হিসেবে তদন্ত কমিটি ৩১৮ পরীক্ষকের গাফিলতি বা দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পায়। পরীক্ষকদের এমন অবহেলা কীভাবে কমানো যায়, সে জন্য তদন্ত কমিটি বেশ কিছু সুপারিশ করে। সেই সুপারিশের অংশ হিসেবে পিএসসি বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। পিএসসির নানা উদ্যোগের কারণে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা যাওয়ার হার কমেছে। ৪১তম বিসিএসে ১৫ হাজার, ৪৩তম বিসিএসে ১০ হাজার ও ৪৪তম বিসিএসে ৯ হাজারের কিছু বেশি খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে যায়। এতে দেখা যাচ্ছে, তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা যাওয়ার হার কমেছে। তবে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা যাওয়াকে বিসিএসের ফল দেরির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
২০২৩ সালের জুনে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ১২ হাজার ৭৮৯ জন। ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা এ বছরের ২৩ জানুয়ারি শুরু হয়, চলে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। ৪৫তম বিসিএসের মাধ্যমে মোট ২ হাজার ৩০৯ ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ৪৫তম বিসিএসে ২ হাজার ৩০৯ ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪ ও প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।