বিসিএসের ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই ভাইভায় (মৌখিক পরীক্ষা) অংশ নেন। ভাইভা শেষেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। বিসিএসে নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা)। এখন ৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন উঁকি দেয় যে বিসিএসের ভাইভা বোর্ড আসলে কে কে থাকেন? পিএসসির কয়েকজন সদস্য এ বিষয়ে তথ্য জানিয়েছেন প্রথম আলোর কাছে। তথ্যগুলো পিএসসি থেকেও যাচাই করেছে প্রথম আলো।
কোনো বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর থেকে মৌখিক পরীক্ষা বা ভাইভা নেওয়ার আয়োজনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে পিএসসি। যেমন গত আগস্ট মাসে ৪৩তম বিসিএসের ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সেপ্টেম্বরে ভাইভা নেওয়া শুরু করেছে পিএসসি। এ বিসিএসে প্রতিদিন ১২টি বোর্ডে ১৮০ ভাইভা নেওয়া হচ্ছে। এই বিসিএসের ১২টি বোর্ডে মূলত তিনজন সদস্য থাকেন। এতে একজন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এই চেয়ারম্যান হিসেবে থাকেন পিএসসির একজন সদস্য। পিএসসি চেয়ারম্যান নিজেও পিএসসির একজন সদস্য। তাই তিনিও বোর্ড পরিচালনা করতে পারেন। অনেক সময় করেনও। তাঁর সঙ্গে দ্বিতীয় সদস্য হিসেবে থাকেন সরকার নিযুক্ত একজন প্রতিনিধি। কে এই প্রতিনিধির দায়িত্ব পান?
পিএসসির সাবেক একজন সদস্য বলেছেন, সাধারণত পিএসসি সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ভাইভা বোর্ডের সদস্য চেয়ে চিঠি দেয়। সেই চিঠি অনুসারে সরকার প্রতি বোর্ডে একজন করে প্রতিনিধি পাঠায়। এই প্রতিনিধি হয় যুগ্ম সচিব পর্যায়ের বা তাঁর ঊর্ধ্বে পদস্থ কর্মকর্তা। যে কর্মকর্তা যে মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বিশেষজ্ঞ তাঁকে সাধারণত সেই নিয়োগ বোর্ডে পাঠায় সরকার। এখানে কৃষি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অন্যান্য মন্ত্রণালয় থেকে কর্মকর্তারা ভাইভা নিতে আসেন। তাঁদেরও জনপ্রশাসনের মাধ্যমে আনা হয়। মোটকথা তিনি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আসেন আর তাঁকে নিযুক্ত করার কাজটি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
চেয়ারম্যান যেহেতু পিএসসির একজন সদস্য তাই তিনি আলাদা করে কোনো টাকা পান না। তবে বাকি দুই সদস্য সাড়ে ৭ হাজার টাকা পান। এ থেকে ১০ শতাংশ উৎসে কর কেটে রাখা হয়।
তৃতীয় সদস্য ঠিক করে পিএসসি। এই তৃতীয় সদস্য হতে পারেন সরকারের কোনো অবসরপ্রাপ্ত সচিব, যুগ্ম সচিব বা প্রতিষ্ঠিত সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, বিশিষ্ট লেখক বা সাংবাদিক বা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। আগে এ বোর্ডে একজন মনোবিজ্ঞানী থাকলেও তা বর্তমানে তুলে দেওয়া হয়েছে। কয়েক বছর ধরে এ–সংক্রান্ত কাউকে বোর্ডে রাখা হয়নি। তবে আবার এ বিষয়ে কাউকে আনা হবে কি না, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি পিএসসি।
বোর্ডের সদস্যদের সম্মানী দেওয়া হয় কত? এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি থেকে জানানো হয়, চেয়ারম্যান যেহেতু পিএসসির একজন সদস্য তাই তিনি আলাদা করে কোনো টাকা পান না। তবে বাকি দুই সদস্য সাড়ে ৭ হাজার টাকা পান। এ থেকে ১০ শতাংশ উৎসে কর কেটে রাখা হয়। তবে এ উৎসে কর কাটার বিষয়টি ওই সদস্য আয়কর রিটার্ন দেওয়ার সময় দেখাতে পারবেন।
বোর্ডে পিএসসির সদস্য ছাড়াও আর যে দুজন থাকেন তাঁদের একজনকে সরকার চিঠি পাঠায়। আর পিএসসি থেকে নির্বাচিত সদস্যকে পিএসসি এক সপ্তাহ আগে চিঠি দেওয়া হয়।
তিনজনকে নিয়ে যে বোর্ড হয় পিএসসিতে তাতে সদস্যরা চাকরিপ্রার্থীকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করে তাঁর মেধা যাচাই করে থাকেন। কোনো প্রার্থী কতটা যোগ্যতা রেখে প্রশ্নের উত্তর দিলেন, কতটা গভীর হলো সেই উত্তর, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে উত্তরের সঙ্গে উদাহরণ দিলেন কি না, এমন বিষয়ও দেখা হয়। তবে প্রশ্নের উত্তর না দিতে পারলে যদি কেউ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ‘না’ বলেন, সেটিও অনেক সময় ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয়।