এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও ২০১২ সালে কোথাও ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাননি মু. আবু আবদুল্লাহ। পরের বছর ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজের গণিত বিভাগে। কিন্তু প্রথম বর্ষে পাঁচ বিষয়ে অকৃতকার্য হন। দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার সুযোগ দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে প্রথম বর্ষেই থাকতে হয় তাঁকে। শিক্ষাজীবন থেকে দুই বছর নষ্ট হওয়ায় মনের মধ্যে জেদ চাপে আবু আবদুল্লাহর। দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু করেন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি। সফলতাও পেয়ে যান দ্রুত। এবার ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে (মেধাক্রম–১৫৮) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। এটিই তাঁর প্রথম বিসিএস।
চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ২০১৯ সালে স্নাতক পাস করেন আবু আবদুল্লাহ। স্নাতকের দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই শুরু করেন বিসিএসের প্রস্তুতি। তিনি বলেন, ‘পাস করে যেন চাকরির জন্য বসে থাকতে না হয়, তাই আগেই চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। পাশাপাশি টিউশনি করেছি। সত্যি কথা বলতে, একসঙ্গে সব চালাতে গিয়ে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়েছে। তবে কখনোই হাল ছাড়িনি। ভেঙে পড়িনি। সব সময় সাহস জোগাতেন আমার মা।’
আবু আবদুল্লাহ ২০১০ সালে চট্টগ্রামের শেরশাহ কলোনি ডা. মজহারুল হক হাইস্কুল থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৪ দশমিক ৬৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান। স্নাতকের সিজিপিএ ৩ দশমিক ১১। বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত কুলগাঁও সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
৪১তম বিসিএসই প্রথম বিসিএস আবু আবদুল্লাহর। ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন। আর ৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেননি। তিনি বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস ছিল, আল্লাহ রিজিক রাখলে এগুলোর মধ্যেই চলে আসবে।’
কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে আবু আবদুল্লাহ বলেন, ‘পিএসসির সিলেবাস, প্রশ্নের ধরন ও আগের বিসিএসের প্রশ্ন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিয়েছি। নিয়মিত লেখাপড়া, অনুশীলন ও পরীক্ষার মাধ্যমে প্রস্তুতিতে জোর দিয়েছি। একই বিষয়ে অনেকগুলো বই কম করে না পড়ে, দু-একটা বই বিস্তারিত পড়েছি। পাশাপাশি নিয়মিত বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা পড়তাম। সাম্প্রতিক বিষয়াবলি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রাখতাম। অন্য প্রার্থীদের চেয়ে আমি একটা জায়গায় ব্যতিক্রম ছিলাম। গ্রুপ স্টাডি করতাম না বললেই চলে। নিজে নিজে বাসায় নিরিবিলি লেখাপড়া করতে পছন্দ করতাম।’
৪১তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় ২০টির মতো প্রশ্ন করা হয়েছিল আবু আবদুল্লাহকে। প্রায় ১৫ মিনিট ভাইভা নেওয়া হয়েছিল। দু থেকে তিনটি প্রশ্ন ছাড়া সব কটির উত্তর দিতে পেরেছিলেন তিনি।
আবু আবদুল্লাহ বলেন, ‘চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে ভালো ক্যাম্পাস থেকে পাস না করলে নাকি ভাইভা বোর্ডে ভালো করা যায় না। এটি সম্পূর্ণ গুজব।’
আবু আবদুল্লাহ মনে করেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ বেশি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন পরীক্ষার কারণে প্রায় সময় বন্ধ থাকে। তাই কেউ চাইলে সময়টা কাজে লাগাতে পারেন। অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে পারেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিপ্রার্থীদের জন্য আবু আবদুল্লাহ বলেন, ‘নিজেকে অযোগ্য কিংবা কম মেধাবী ভেবে হতাশ হবেন না। বিসিএস সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা আছে। আপনি যোগ্য হলে সফলতা আসবেই।’