৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৯ হাজার ৮৪১ প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। প্রতিদিন ১৮০ জনের ভাইভা নিচ্ছে পিএসসি। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য আগে যাঁরা মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রথম আলোয় প্রকাশ করা হচ্ছে। নিয়মিত আয়োজনে আজ দশম পর্বে মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ৪১তম বিসিএসের (বিসিএস অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস) সহকারী মহা হিসাবরক্ষক (সুপারিশপ্রাপ্ত) এস এম খালেদ চৌধুরী।
এস এম খালেদ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। আনুমানিক ২৩ থেকে ২৪ মিনিট ভাইভা বোর্ডে তাঁকে নানা ধরনের প্রশ্ন করা হয়। ভাইভা ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষাতেই ছিল। ইংরেজি ৪০ শতাংশের মতো হবে। লেখার সুবিধার্থে এখানে বাংলায় লেখা হয়েছে।
এস এম খালেদ চৌধুরী বলেন, বেল দেওয়ার পর দরজা ঠেলে অনুমতি নিয়ে ভাইভা বোর্ডের কক্ষে প্রবেশ করি। কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে চেয়ারে বসলাম। চেয়ারে বসতে বলে চেয়ারম্যান স্যার নিজ থেকে জেলা, ডিপার্টমেন্ট, চয়েস লিস্টের কথা বলছিলেন। আমি হ্যাঁ বলছিলাম।
চেয়ারম্যান স্যার: Introduce yourself focusing your University
উত্তর: উত্তর গোছানো ছিল, বললাম ৪০ থেকে ৫০ সেকেন্ড। মনে হলো স্যার আমার ইংরেজি দেখছিল, স্যারকে সন্তুষ্টই মনে হলো।
চেয়ারম্যান স্যার: মুজিবনগর সরকার গঠন নিয়ে বলুন।
উত্তর: কমন প্রশ্ন। আমি ১০ এপ্রিল ১৯৭১ এবং ১৭ এপ্রিল আর স্থান বলে দপ্তরগুলো বলে যাচ্ছিলাম। খুব সম্ভবত তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বললাম (চেষ্টা করছিলাম টু দ্য পয়েন্টে কথা বলতে)। চেয়ারম্যান স্যার থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, Who was the Defence Minister?
উত্তর: তাজউদ্দীন আহমদ বললাম।
চেয়ারম্যান স্যার: কুর্দি সমস্যা নিয়ে ডিটেইলস বলো।
উত্তর: আমি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে সংক্ষেপে বলে আসছিলাম।
চেয়ারম্যান স্যার: মাঝখানে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন কুর্দিরা কোথায় আছে?
উত্তর: আমি সিরিয়া, ইরান, ইরাক, তুরস্ক।
চেয়ারম্যান স্যার: আর?
উত্তর: আমি পাঁচ সেকেন্ড সময় নিয়ে বললাম আর্মেনিয়া, বলে থামলাম।
চেয়ারম্যান স্যার: মনে হলো খুব খুশি (আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পড়ার কারণে ম্যাপ মোটামুটি বুঝতাম, আর্মেনিয়ার সঙ্গে কুর্দিস্তানের অল্প বর্ডার আছে)। স্যার আবার প্রশ্ন করলেন, কুর্দিরা কোথায় ভালো আছে?
উত্তর: বললাম স্যার, ইরাকি কুর্দিস্তান স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে, ওখানে মোটামুটি ভালো আছে। (আমার মাথায় ছিল স্যার এ উত্তর চাচ্ছিল, তখন ইরানে কুর্দি মাসা আমিনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে উত্তাল)। মনে হলো, উত্তরে স্যার এটাই আশা করেছেন।
চেয়ারম্যান স্যার: সোহরাওয়ার্দী নিয়ে বলো।
উত্তর: আমি বললাম, উনি কী কী দায়িত্ব পালন করেছেন, ভারত ও পাকিস্তানে ওনার অবদান, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক ইত্যাদি।
চেয়ারম্যান স্যার: উনি কোথাকার মেয়র ছিলেন?
উত্তর: কলকাতার মেয়র ছিলেন, বললাম।
চেয়ারম্যান স্যার: উনি কোথাকার নাগরিক ছিলেন?
উত্তর: বললাম, উনি অবিভক্ত ভারতের নাগরিক ছিলেন, পরে দেশ ভাগের পর পাকিস্তানে ফিরে আসেন।
চেয়ারম্যান স্যার: উনি ভারতের কোন অঞ্চলের নাগরিক ছিলেন?
উত্তর: স্যার, উনি পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক ছিলেন, স্যার আরও নির্দিষ্ট উত্তর চাচ্ছিলেন, তখন আমি কনফিউজড ছিলাম চব্বিশ পরগনা না মালদহ নিয়ে। তাই দুঃখিত বললাম।
চেয়ারম্যান স্যার: ওনার বাবা কে ছিলেন?
উত্তর: এ প্রশ্ন আউট অব বক্স ছিল আমার জন্য। দুঃখিত বললাম, বললাম স্যার আমার জানা উচিত ছিল। আমি জেনে নেব।
চেয়ারম্যান স্যার: হ্যাঁ জেনে নেবেন, জাতীয় নেতা তো আমাদের, জানা উচিত। আমি বললাম, নিশ্চয়ই স্যার।
চেয়ারম্যান স্যার: গান শুনি কি না? হ্যাঁ বলাতে ক্লাসিক্যাল না আধুনিক জিজ্ঞেস করলেন।
উত্তর: আমি ক্লাসিক্যাল বললাম।
চেয়ারম্যান স্যার: কার গান শোনা হয়?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ বলে, বললাম এস ডি বর্মন।
চেয়ারম্যান স্যার: এস ডি বর্মনের পুরো নাম কী?
উত্তর: বললাম, গান বলতে বললেন, আমি ‘তুমি এসেছিলে পরশু’....... বললাম, স্যার আরও জানতে চাইলেন। তখন ভাইরাল ‘শোন গো দখিনো হাওয়া’ আমার প্রথম লাইন মাথায় আসছিল না, বারবার ‘প্রেম করেছি আমি’ এইটুকু আসছিল, পরে এইটুকু বলাতে স্যার হেসে দিলেন।
চেয়ারম্যান স্যার: এস ডি বর্মনের একটা ছেলেও গান করে, বিখ্যাত। নাম জানো?
উত্তর: আমি আর ডি বর্মন বললাম, স্যার পুরো নাম জানতে চাইলেন। ভুলে যাওয়ায় দুঃখিত বললাম। স্যার ওনার গান জিজ্ঞেস করলে আমি দুঃখিত মনে পড়ছে না বললাম। সঙ্গে বললাম, স্যার আমার জানা উচিত ছিল।
চেয়ারম্যান স্যার: খালেদ, সব জানার দরকার নেই।
চেয়ারম্যান স্যার: ক্যাডারগুলো কী কী আবার বললেন। পরে বললেন, আচ্ছা ইদানীং একটা গান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেটার শুরুটা অকথ্য ভাষায় (এ গান নিয়ে বেশ কিছু কথা বলল, সোশ্যাল মিডিয়ায় এ গান চলতে পারে না এসব) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন শুনেছি কি না?
উত্তর: আমি একটু সময় নিয়ে বললাম, স্যার ইদানীং আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু কম থাকাতে শোনা হয়নি। (গানটি আমি বলতে চাইনি, গানটি হচ্ছে ‘**** বাচ্চা ফুটফুটে সুন্দর...’)
চেয়ারম্যান স্যার: সোশ্যাল মিডিয়ায় ছিলে না, ভাইভার প্রিপারেশন নিচ্ছি লা?
উত্তর: আমি বললাম, স্যার অনেকটা তা–ই।
চেয়ারম্যান স্যার: কী কী প্রিপারেশন নিয়েছো?
উত্তর: বললাম, বঙ্গবন্ধুর বইগুলোর কথাও বলাতে স্যার জিজ্ঞেস করলেন, কোন বইটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে জিজ্ঞেস করলেন, বললাম।
চেয়ারম্যান স্যার: মিডল ইস্ট কী? কেন মিডল ইস্ট বলা হয়?
উত্তর: মিডল ইস্টের জিওগ্রাফি বললাম, তবে কেন মিডল ইস্টকে মিডল ইস্ট নামকরণ করা হয়, তা আমার ক্লিয়ার আইডিয়া ছিল না। তাই না পেঁচিয়ে দুঃখিত, জানা নেই বললাম।
এক্সটার্নাল ১ স্যার: What's the difference between International Relations vs International Marketing as a subject of BBA
উত্তর: আমি বললাম, স্যার উত্তর নিলেন মনে হলো।
এক্সটার্নাল ১ স্যার: বাংলাদেশের ফরেন পলিসি কী, বর্তমান কী অবস্থা?
উত্তর: গুছিয়ে বললাম, সঙ্গে ব্যালেন্সিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিলাম।
এক্সটার্নাল ১ স্যার: ব্যালেন্সিং কী? উচিত কি না বা কী হচ্ছে জানতে চাইলেন।
উত্তর: বললাম ডিটেইলস।
এক্সটার্নাল ১ স্যার: জনস্বাস্থ্য, জনসেবা, জনকল্যাণের মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তর: মোটামুটি গুছিয়ে বললাম, স্যার উত্তর নিলেন মনে হলো।
এক্সটার্নাল ১ স্যার: এডমিনে এলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পড়াশোনা কীভাবে কাজে লাগাবা?
উত্তর: গোছানো ছিল আগে থেকেই, বললাম।
এক্সটার্নাল ১ স্যার: হলে থাকা হয় কি না? কী সমস্যা হলে?
উত্তর: বললাম, আবাসন সমস্যা। সমাধান কী জিজ্ঞেস করাতে, বললাম।
এক্সটার্নাল ১ স্যার: বাসায় কে কে আছে?
উত্তর: বললাম।
এক্সটার্নাল ২ স্যার: এডমিনে এলে 4IR বাস্তবায়নে কী করবা?
উত্তর: বললাম, গোছানো ছিল আগে থেকে।
এক্সটার্নাল ২ স্যার: জিও পলিটিকস কী?
উত্তর: বললাম (নিজের মতো করে, ডিপার্টমেন্টের পড়া)
এক্সটার্নাল ২ স্যার: ভারত ও চীনের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব কী?
উত্তর: ভারত ও চীনের দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করলাম আলাদা আলাদা করে, মোটামুটি ডিটেইলস বলেছিলাম, স্যার উত্তর নিলেন।
এক্সটার্নাল ২ স্যার: এখন কী করা হয়?
উত্তর: বললাম। (চেয়ারম্যান স্যার ইশারা করছিলেন শেষ করতে, তাই স্যার শেষ করলেন)
চেয়ারম্যান স্যার: মনে করো আমরা মিয়ানমার চিনি না, আমাদের একটু পরিচয় করিয়ে দাও মিয়ানমারের অবস্থান, রাজনীতি, ইতিহাস সব।
উত্তর: আমি অনুমতি নিলাম ডিটেইলস বলার জন্য, স্যার বললেন বলো। আমি জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশন বলে, ১৯৪৮–এর স্বাধীনতা, ১৯৬২-তে জেনারেল নে উইনের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ পর্যন্ত বলতেই স্যার থামিয়ে দিলেন।
চেয়ারম্যান স্যার: ঠিক আছে আসো বলে ডকুমেন্টস নিতে বললেন এক্সটার্নাল ২ স্যারের কাছ থেকে।
নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে, সালাম করে বের হয়ে এলাম।
আমি একটু দ্রুত কথা বলি তাই প্রশ্ন অনেক বেশি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। তবে পুরো ভাইভায় আমি ভালোই কনফিডেন্স নিয়ে ফ্লুয়েন্টলি উত্তর দিয়েছিলাম। না পারলে না পেঁচিয়ে বিনয়ের সঙ্গে দুঃখিত বলেছি কয়েকবার। এটি আমার জীবনের প্রথম চাকরির ভাইভার অভিজ্ঞতা। আমি স্যারের প্রথম দিনের বোর্ডে ভাইভা দিয়েছিলাম।