তিন বিসিএসের ক্যাডার ও নন–ক্যাডারের ফল একসঙ্গে দিতে চায় পিএসসি

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন
ফাইল ছবি

চলমান তিনটি বিসিএসের ফলের সঙ্গে ক্যাডার ও নন–ক্যাডারের ফল একসঙ্গে দেওয়ার কথা জানিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এ তিনটি বিসিএস হচ্ছে ৪৩তম, ৪৪তম ও ৪৫তম বিসিএস। ৪৩তম বিসিএসের ভাইভা চলমান ও ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ করছে পিএসসি এবং ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু হবে নভেম্বরে।

একসঙ্গে কীভাবে তিন বিসিএসের ফলের সঙ্গে নন–ক্যাডারের ফল দেবে পিএসসি—এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, বর্তমান ৪৩তম বিসিএসের দুই হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থীর ভাইভা নেওয়া শেষ। এ ছাড়া ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখা চলছে। ৪১তম বিসিএসের নন–ক্যাডার নির্বাচনের জন্য পিএসসি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে শিগগিরই। এটা শেষ হয়ে গেলে একই সঙ্গে ৪৩তম ও ৪৪তম বিসিএসের নন–ক্যাডারের পছন্দের পদ বাছাই করার কাজ শুরু করবে পিএসসি। এমনভাবে এ কাজটি করতে চায় পিএসসি, যাতে দুটি বিসিএসের ক্যাডারের সঙ্গে সঙ্গে নন–ক্যাডারের ফলও প্রকাশ করতে পারে পিএসসি। এ ছাড়া ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির সময় পদের পরিমাণ উল্লেখ আছে। সে অনুসারে ক্যাডার ও নন–ক্যাডারের ফল একসঙ্গেই প্রকাশ করবে পিএসসি।

পিএসসি জানিয়েছে, এ কাজটি পিএসসি আন্তরিকভাবেই করতে চায়। কেননা, ক্যাডারের ফল প্রকাশের পর নন–ক্যাডারের তালিকা দেওয়া হয়। এতে ক্যাডাররা হয়তো খুশি হন, কিন্তু তাৎক্ষণিক ক্যাডার বা নন–ক্যাডারের কোনো পদ না পেয়ে নন–ক্যাডারের অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীরা হতাশায় ভোগেন। এ ছাড়া নন–ক্যাডারের পদ বরাদ্দ দিতে যেহেতু সময় লাগে, তাই তাঁদের যোগদান করতেও অনেক সময় লাগে। এমন হয়েছে হয়তো ক্যাডার পদ পাওয়া প্রার্থীরা এক বছরের বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন, কিন্তু নন–ক্যাডারের প্রার্থীরা তত দিনে যোগদানও করতে পারেননি। এ বিষয়টি অনেক হতাশার। এটি অনুধাবন করে পিএসসি ক্যাডারের সঙ্গে সঙ্গে নন–ক্যাডারের ফল দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

এ বছরের ২০ আগস্ট ৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন। এতে উত্তীর্ণ হন ৯ হাজার ৮৪১ জন। গত বছরের জুলাইয়ে লিখিত পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করে পিএসসি। ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। গত বছরের ২০ জানুয়ারি ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশিত হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ২২৯ প্রার্থী।

৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৮১৪ কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ৩০০ জন, পুলিশে ১০০, পররাষ্ট্রে ২৫, শিক্ষায় ৮৪৩, অডিটে ৩৫, তথ্যে ২২, ট্যাক্সে ১৯, কাস্টমসে ১৪ ও সমবায়ে ১৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

এদিকে ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় মোট ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭১৬ চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছিলেন। ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৪৪তম বিসিএসের অনলাইন আবেদন শুরু হয়। আবেদনের শেষ সময় ছিল ৩১ জানুয়ারি। পরে তা বাড়িয়ে ২ মার্চ নির্ধারণ করে পিএসসি। এরপর গত বছরের ২৭ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ২৫ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের মাধ্যমে রেকর্ড করে পিএসসি। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১৫ হাজার ৭০৮ পরীক্ষার্থী পাস করেন। ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৭১০ কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ২৫০ জন, পুলিশে ৫০, পররাষ্ট্রে ১০, আনসারে ১৪, নিরীক্ষা ও হিসাবে ৩০, কর ১১, সমবায়ে ৮, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিকে ৭, তথ্যে ১০, ডাকে ২৩, বাণিজ্যে ৬, পরিবার পরিকল্পনায় ২৭, খাদ্যে ৩, টেকনিক্যালে ৪৮৫ ও শিক্ষা ক্যাডারে ৭৭৬ জন নেওয়া হবে।

৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা আগামী ২৭ নভেম্বর শুরু হবে। সরকারি কর্ম কমিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৪৫তম বিসিএসের আবশ্যিক ও পদ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে। সবচেয়ে কম সময়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে রেকর্ড করে পিএসসি। গত ১৯ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসাবে পরীক্ষা নেওয়ার ১৭ দিনের মধ্যে ৬ জুন প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ করে পিএসসি। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১২ হাজার ৭৮৯ জন। তবে গত পাঁচটি বিসিএসের মধ্যে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে সবচেয়ে কম প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন, যা ৫ শতাংশের কম।

১৯ মে অনুষ্ঠিত ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ৭৭ শতাংশ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। ৩ লাখ ৪৬ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশ নিয়েছেন ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১৯ জন। পরীক্ষা দেননি ৭৮ হাজার ৮০৩ জন। ৪৫তম বিসিএসের মাধ্যমে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জন।