বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় সব ধরনের প্রশ্নের উত্তর লেখার জায়গা নির্দিষ্ট করে দিতে চায় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রশ্ন দেওয়ার পর খাতায় কোন প্রশ্নের উত্তরে কতটুকু জায়গা বরাদ্দ থাকবে, সেটি ঠিক করে দেবে পিএসসি। বিষয়টি নিয়ে পিএসসিতে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা চলছে। পিএসসি সূত্র বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।
জানতে চাইলে পিএসসি সূত্র জানায়, বর্তমানে লিখিত পরীক্ষায় খাতা দেওয়া হয়। প্রথমে খাতা দেওয়ার পর কোনো পরীক্ষার্থীর অতিরিক্ত খাতা প্রয়োজন হলে সেটিও দেওয়া হয়। এতে কোনো নিয়ম নেই, পরীক্ষার্থী যতবার যতটুকু খাতা নেবেন, নিতে পারবেন। কোনো প্রশ্নের উত্তর লেখাতেও বাধা নেই। যত ইচ্ছা লিখতে পারবেন। অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন বেশি লিখলেই ভালো নম্বর পাওয়া যাবে। এসব ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইল পিএসসি।
লিখিত পরীক্ষায় কীভাবে সংস্কার আনা যায় আর খাতা দেখার সময় কমিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে নিয়মিত বসছে পিএসসি। এ সময় লিখিত পরীক্ষার খাতার প্রসঙ্গ উঠে আসে। পিএসসি মনে করে, অনেকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বেশি লেখেন। মনে করেন, এতে বেশি নম্বর পাওয়া যাবে। অনেকে এ জন্য অতিরিক্ত খাতাও নেন বেশি। কিন্তু পিএসসি মনে করে, কেউ যদি যৌক্তিকভাবে নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর লেখে, তাহলে সেই পরীক্ষার্থী তাঁর যোগ্যতায় ভালো নম্বর পেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কত বড় লিখলেন, সেটি গুরুত্ব পাবে না। কতটা টু দ্য পয়েন্ট লিখলেন, সে অনুসারে নম্বর পাবেন। এটি করতেই লিখিত পরীক্ষার খাতায় প্রশ্নের নিচে উত্তর লেখার জায়গা নির্দিষ্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে পিএসসির। এতে পরীক্ষার্থীর বেশি বা অতিরিক্ত লেখার প্রবণতা থাকবে না, আবার যৌক্তিক উত্তর লেখার গুরুত্ব বাড়বে। কারণ, তাঁকে সচেতন থাকতে হবে নির্দিষ্ট স্থানেই তাঁকে লেখা শেষ করতে হবে। এটিতে যে উপকার হবে, তা পরীক্ষার্থী ভোগ করবেন। একটি হচ্ছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন। আবার গুছিয়েও লিখতে পারবেন। বেশি আর বড় লেখার প্রবণতা কমে আসবে। আর যখন পরীক্ষক খাতা দেখবেন, তখন তাঁকেও বিস্তর লেখা দেখতে হবে না। সময় লাগবে কম। খাতা দেখতেও পারবেন দ্রুত, জমাও দিতে পারবেন দ্রুত। খাতার ওজনও কমে যাবে।
পিএসসি জানিয়েছে, ‘এটি করতে আমাদের চিন্তাভাবনা চলছে। চিন্তার কিছু নেই, আমরা উত্তরের জন্য যে স্থান নির্দিষ্ট করব, তা খুব ছোট বা আঁটসাঁট জায়গা থাকবে না। প্রয়োজনের কিছু অতিরিক্তই রাখা হবে। তবে দ্রুত লিখিত খাতা দেখা শেষ করার অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে এটি করার প্রতি আমরা জোর দিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, লিখিত পরীক্ষার খাতায় উত্তর লেখার বিষয়টি চিন্তাভাবনা চলছে। আগামী ৪৭তম বিসিএস থেকে এটি করা যায় কি না, তা অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পিএসসির একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, ৪১তম বিসিএসের ফল প্রকাশ দেরি হওয়ার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পিএসসি। ফল দিতে দেরির কারণ হিসেবে তদন্ত কমিটি ৩১৮ পরীক্ষকের গাফিলতি বা দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পায়। পরীক্ষকদের এমন অবহেলা কীভাবে কমানো যায়, সে জন্য তদন্ত কমিটি বেশ কিছু সুপারিশ করে। সেই সুপারিশের অংশ হিসেবে পিএসসি বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। পিএসসির নানা উদ্যোগের কারণে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা যাওয়ার হার কমেছে। ৪১তম বিসিএসে ১৫ হাজার, ৪৩তম বিসিএসে ১০ হাজার ও ৪৪তম বিসিএসে ৯ হাজারের কিছু বেশি খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে যায়। এতে দেখা যাচ্ছে, তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা যাওয়ার হার কমেছে। তবে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা যাওয়াকে বিসিএসের ফল দেরির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
পিএসসির একজন সাবেক পরীক্ষক (ক্যাডার) বলেন, গত পাঁচটি বিসিএসের ফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিসিএসে ফল প্রকাশের প্রধান বাধা হচ্ছে লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখা। গড়ে এক বছরের মতো সময় লেগে গেছে এই খাতা দেখতে। কেননা এই খাতা দেখেন প্রধানত দুই পরীক্ষক। আবার তাঁদের নম্বরে ২০ শতাংশ বা এর বেশি পার্থক্য হলে সেসব খাতা চলে যায় তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে। তিনি সব দেখে নম্বর চূড়ান্ত করেন। সেখানেও অনেক সময়ের বিষয়। পরীক্ষকের খাতা জমা দেওয়ার বেঁধে দেওয়া সময়ও তাঁরা খাতা দেন না। দিচ্ছি, দেব করে দেন না। ফোন ধরেন না। খাতা না দেখেই বিদেশে চলে যান। ভুলেও যান খাতা দেখতে দেওয়ার কথা। দেখলেও দায়সাড়া করে দেখেন। সব মিলে এই লিখিত পরীক্ষার ফল দিতে অনেক সময় লাগে পিএসসির। কিছু করারও থাকে না। তাই এই বোঝা কিছুটা কমাতে খাতা দেখার স্থান নির্দিষ্ট করার বিকল্প নেই। এটি করা গেলে লিখিত খাতা দেখার কাজটি অনেক সহজ হয়ে যাবে।