৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলছে, চলবে আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৯ হাজার ৮৪১ প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। প্রতিদিন ১৮০ জনের ভাইভা নিচ্ছে পিএসসি। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য আগে যাঁরা মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রথম আলোয় প্রকাশ করা হচ্ছে। নিয়মিত আয়োজনে আজ অষ্টম পর্বে মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত তাজবীউল ইসলাম ইসকেম।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করে ৪১তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করেন তাজবীউল ইসলাম। গত ১৪ জুন মৌখিক পরীক্ষা দেন। সরকারি চাকরির এটাই তাঁর প্রথম ভাইভা ছিল। ভাইভায় তাঁকে প্রায় সব প্রশ্ন ইংরেজিতে করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমার বোর্ডের বেশির ভাগ প্রার্থীদের বাংলায় প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু আমার প্রায় পুরো ভাইভা ইংরেজিতে হয়। এ ক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে, প্রথম প্রশ্নটি ইংরেজিতে করার পর প্রার্থীর ইংরেজি ভাষার শব্দ চয়ন এবং আত্মবিশ্বাস দেখে বোর্ড সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন ভাইভার পরবর্তী অংশ কোন মাধ্যমে হবে।’
তাজবীউল ইসলাম বলেন, ‘বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়েছি। যেখানে চাকরি করতাম, সেখানে বিদেশিদের সঙ্গে অনেক কথা বলতে হতো। ফলে আমার ইংরেজিতে কথা বলার জড়তা কেটে যায়। বেসরকারি চাকরির বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা আমাকে ভাইভায় ভালো উত্তর দিতে সাহায্য করেছে। যেমন, আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের অনুপাত বাড়াতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যেহেতু ট্রেডিং কোম্পানিতে চাকরি করতাম, তাই আমদানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন কমার্শিয়াল টার্মস, পণ্যের শুল্কহার ও দেশীয় কাজের বিভিন্ন বিলে সরকারের ভ্যাট বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা ছিল।’
তাজবীউল ইসলাম ইসকেমের ইসকেম নামটি ব্যতিক্রম হওয়ায় এর অর্থ জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বলেন, ‘ইসকেম নামটি ইংরেজি “Scheme” শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা। এরপর তাঁকে সম্পূরক প্রশ্ন করা হয় সরকারি চাকরিজীবনে কীভাবে “স্ট্রাটেজিক প্ল্যান” কাজে লাগাবেন? ইঞ্জিনিয়ারিং দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে বলা হয়। তিনি উত্তর দেন, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য আমারা মূলত তিনটি ধাপে পরিকল্পনা সাজাই। সমস্যাবিষয়ক তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করা, সম্ভাব্য সমাধানের তালিকা তৈরি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও উপযুক্ত সমাধানটি বেছে নেওয়া। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এভাবে ধাপে ধাপে কৌশল সাজিয়ে নিলে সব সময় সময়োপযোগী সমাধান ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব।’
তাজবীউল ইসলাম ইসকেমের প্রথম পছন্দ ছিল প্রশাসন ক্যাডার। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ধরুন আপনার পোস্টিং উপকূলবর্তী কোনো এলাকায়। ঘূর্ণিঝড় আসন্ন। আপনি কীভাবে আপনার এলাকার মানুষদের মনোবল বাড়াবেন এবং নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করবেন? তাজবীউল ইসলাম বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বোচ্চ সতর্কসংকেত জারি করার বিষয় জানিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কে এলাকাবাসীকে ধারণা দেব। দুর্যোগ প্রাকৃতিক হলেও মোকাবিলা করার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। আমাদের স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে আমরা আপনাদের আশ্রয়ের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছি। এলাকাবাসীর প্রতি আমার আন্তরিক অনুরোধ, আপনারা যত দ্রুত সম্ভব আমাদের নির্দেশনা অনুসরণ করে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসুন।’ এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে এভাবে ভাষণের মতো করে দুই মিনিট বলার পর ভাইভা বোর্ড তাঁকে থামতে বলেন।
সরকারের 'ভিশন ২০৪১' সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব কি না জানতে হয়? তাজবীউল ইসলাম বলেন, ‘আমি অবশ্যই বিশ্বাস করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের প্রতিশ্রুতি যেভাবে সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছেন, তারই ধারাবাহিকতায় এবং তাঁর দক্ষ নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশও গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।’
সম্পূরক প্রশ্ন হিসেবে জানাতে চাওয়া হয়, আপনার কেন মনে হয় আমরা পারব? শুধু পয়েন্টগুলো বলতে বলা হয়। তাজবীউল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন, আমার গ্রাম, আমার শহর, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও ব্লু ইকোনমির মাধ্যমে সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার। এসব কাজের সফল বাস্তবায়ন হচ্ছে, যা ২০৪১ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, চরম দারিদ্র্য দূর করতে এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করবে এবং আমাদেরকে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের চারটি ভিত্তি পূরণে ভূমিকা রাখবে।’
বাংলাদেশে এখনো বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে কেন, জিজ্ঞাসা করা হয়? তিনি বলেন, ‘এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন, থাইল্যান্ড, মালেশিয়া, ভিয়েতনাম আমাদের তুলনায় অনেক বিদেশি বিনিয়োগ পান। কারণ, আমাদের দেশে ক্ষেত্রবিশেষে বিনিয়োগকারীরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দক্ষ মানবসম্পদের অভাবে ভোগে। ফলে বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন না।’
বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে কী কী শর্তে ঋণ নিয়েছে, জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণের সীমা, সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া, ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের অনুপাত বৃদ্ধি করা, এসব শর্তে ঋণ নিয়েছে।
মহামারী করোনাভাইরাসের সময় বাংলাদেশ সরকার কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল যে কারণে অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের অবস্থা ততটা খারাপ হয়নি? এর উত্তরে তাজবীউল ইসলাম বলেন, সরকার তৈরি পোশাকশিল্প খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল, দ্রুত টিকা আমদানির ব্যবস্থা করেছিল এবং সুরক্ষা নামে একটি মোবাইল অ্যাপস তৈরি করেছিল। যে অ্যাপসের মাধ্যমে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে টিকা দান কর্মসূচি সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়েছিল।