৪৩তম বিসিএসে অ্যাপিয়ার্ড (অবতীর্ণ) প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছিলেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটের শিক্ষার্থী শের শাহ। প্রথম বিসিএসেই পছন্দের পুলিশ ক্যাডার পেয়েছেন। ৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলে পুলিশ ক্যাডারে মেধাতালিকায় তৃতীয় হয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।
মেডিকেলের বড় ভাইদের বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগ দেওয়া দেখে স্বাস্থ্য ক্যাডার ছাড়াও অন্য ক্যাডারের প্রতি আগ্রহ জন্মায় শের শাহর। এ জন্য ৪৩তম বিসিএসে প্রথম পছন্দ দেন পুলিশ ক্যাডার। শের শাহ প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসের দুজন বড় ভাই পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগ দেওয়ায় চিকিৎসক থেকে অন্য পেশায় যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। এ ছাড়া আগে থেকেই ইউনিফর্মের প্রতি আকর্ষণ ছিল। তাই বিসিএসে ক্যাডার পছন্দক্রম (ক্যাডার চয়েস) তালিকায় পুলিশ ক্যাডারে প্রথম পছন্দ দিই। দ্বিতীয় ছিল প্রশাসন ক্যাডার।
বিসিএসের প্রস্তুতির বিষয়ে শের শাহ বলেন, মেডিকেলে পড়ার পাশাপাশি বিসিএসে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই ইন্টার্নি করার সময় থেকে বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। আগে থেকেই নিয়মিত পত্রিকা পড়তাম। মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা–পরবর্তী ইতিহাসের বইগুলো পড়েছি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমসাময়িক ইস্যুর অতীত ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করতাম। বিসিএসকে লক্ষ্য করে না পড়লেও পরবর্তী সময়ে এসব বই পড়ার অভ্যাস আমাকে অনেক বেশি সাহায্য করেছে। এ ছাড়া ইউটিউবে বেশ কিছু শিক্ষামূলক চ্যানেলে বিভিন্ন বিষয়ের ভিডিও দেখতাম।
বিসিএস প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সঠিক কৌশলে পড়াশোনা করা, বলে জানান শের শাহ। তিনি বলেন, সব বিষয়ের প্রস্তুতি নিতে সঠিক কৌশল অবলম্বন না করলে পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব নয়। বিসিএসের তিনটি ধাপের মধ্যে লিখিত পরীক্ষা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ অংশটি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি কঠিন মনে হয়। একটানা ৬ দিন ৪ ঘণ্টা করে পরীক্ষা দিতে হয়। লিখিত পরীক্ষার আগে প্রস্তুতির জন্য কম সময় পাওয়া যায। একই প্রশ্নের উত্তর প্রায় কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী লেখেন। এগিয়ে থাকতে হলে লেখার উপস্থাপনা অবশ্যই ভালো হতে হবে। মনে রাখতে হবে, যাঁর খাতার উপস্থাপনা যত বেশি সুন্দর, তিনি তত বেশি নম্বর পাবেন।
মৌখিক পরীক্ষার বিষয়ে শের শাহ বলেন, ভাইভার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। স্যারদের যেখান থেকে ইচ্ছা প্রশ্ন করেন। আমার ভাইভা ছিল শেষ দিনে। অনেকেই বলেন শেষের দিকে ভাইভায় স্যাররা কম নম্বর দেন। এই ধারণা ঠিক নয়। ভাইভা বোর্ডে পরীক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব, সৎ সাহস ও উপস্থিত বুদ্ধি যাচাই হয় এমন প্রশ্নই বেশি করা হয়। ভাইভায় প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে। ১৪ জনের ভাইভায় আমি ছিলাম ১০ম প্রার্থী। প্রায় ১২ মিনিটের মতো ভাইভা দিয়েছিলাম। আমাকে প্রায় ২০টির মতো প্রশ্ন করা হয়েছিল। নিজের পঠিত বিষয় ও পুলিশ–সম্পর্কিত প্রশ্ন বেশি ছিল।
ডেন্টিস্ট হয়েও পুলিশ ক্যাডারে আসার কারণ হিসেবে শের শাহ বলেন, একজন মানুষ বিপদে পড়লে সবার আগে চিকিৎসক ও পুলিশের কাছে আসে। একজন ডেন্টিস্ট হিসেবে মানুষের সেবা করার সুযোগ কিছু সময় সীমিত হয়ে পড়ে। পুলিশের সেবা করার পরিধি সেই তুলনায় বিশাল। মেডিকেল কলেজে পড়ার সময়টাতে মাদকের কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর জীবন শেষ হতে দেখেছি। এ ছাড়া অনলাইনে বুলিং, যৌন হয়রানি, হ্যাকিংয়ের শিকার অনেক মানুষ, বিশেষ করে নারীদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। কেউ কেউ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতেও পিছপা হন না। এ ছাড়া ইউনিফর্মের প্রতি আকর্ষণের কারণে পুলিশ ক্যাডার ছিল পছন্দের শীর্ষে।
যাঁরা বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশে শের শাহ বলেন, পরীক্ষার জন্য নিজের কৌশল ঠিক করুন। যাঁরা সফল হয়েছেন, তাঁদের অন্ধ অনুকরণ না করে নিজের শক্তির জায়গা ও দুর্বলতা খুঁজে বের করুন। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন। বারবার অনুশীলন করুন। অনেক বই পড়ার চেয়ে একটি বই ভালোভাবে পড়ুন। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলে অন্যান্য পরীক্ষার প্রস্তুতি হয়ে যায়, তাই অন্যান্য চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টাও করুন। বিসিএস পরীক্ষা একটি লম্বা সময় ধরে হয়, তাই ধৈর্য ধরার মানসিকতা রাখুন।